নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বিএনপির বাতাস এখন যেন রূপগঞ্জের দিকে বইছে। চারটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে সহজ সমীকরণ তৈরি হয়েছে এখানকার প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর জন্য। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই দিপু ভূঁইয়ার সামনে থেকে একে একে সরে যাচ্ছে সম্ভাব্য বাধা। এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী, জেলা বিএনপির সাবেক নেতা কাজী মনিরুজ্জামান মনিরও এখন তার পাশে। দুই প্রজন্মের এই দুই নেতার ঐক্য রূপগঞ্জ বিএনপিকে নতুন এক গতিপথে নিয়ে যাচ্ছে।
গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় রূপগঞ্জের রূপসী কাজীপাড়ায় কাজী মনিরের নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত কর্মিসভায় চিত্রটা বদলে যায়। সভার মাঝপথে আচমকাই উপস্থিত হন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। মুহূর্তেই কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কাজী মনির উঠে দাঁড়িয়ে দিপুর হাত উঁচিয়ে ধরেনত্মঘোষণা দেন তার প্রতি পূর্ণ সমর্থনের। সভাস্থলে উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের চোখে-মুখে তখন স্বস্তির ঝলক। তারা স্লোগান দেন, “ঐক্যবদ্ধ রূপগঞ্জ, জয় হবে বিএনপির”। স্থানীয় রাজনীতিতে এই দৃশ্যটিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, রূপগঞ্জ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে কিছুদিন ধরেই চলছিল নীরব প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দিপু ভূঁইয়া ও কাজী মনির দুজনেই শক্ত অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের আস্থাভাজন হয়ে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান দিপু। এরপরও ভেতরে ভেতরে কিছুটা ভিন্ন সুর ছিল মনিরের শিবিরে। কিন্তু এক মঞ্চে এসে সবকিছুই বদলে গেল। এক সিনিয়র নেতা বলেন, “রূপগঞ্জে বিএনপির জয়ের অন্যতম শর্ত ছিল ঐক্য। মনির ভাই দিপুর পাশে দাঁড়ানোয় এখন সেই ঐক্যের ভিত্তি শক্ত হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের জন্যও সমীকরণ কঠিন হয়ে পড়বে।”
মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু শুধু জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়কই নন, তিনি রূপগঞ্জের মাঠের রাজনীতির পরিচিত মুখ। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও তিনি রাস্তায় থেকেছেন দলের আন্দোলনে। সভা-সমাবেশ, শোডাউন সব ক্ষেত্রেই তার উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় ছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “দিপু ভুঁইয়া মাঠে যেভাবে সংগঠনকে ধরে রেখেছিলেন, সেটা এখন তার সবচেয়ে বড় শক্তি। কেন্দ্রও সেটাই বিবেচনায় নিয়েছে।”
কাজী মনিরুজ্জামান মনির বিএনপির রাজনীতিতে অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি নিজের রাজনৈতিক বক্তব্যে সবসময় সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। কর্মিসভায় তিনি বলেন, “স্বৈরাচার সরকারের সময়ে আমার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছিল, আমার স্ত্রীর মিছিলে হামলা হয়েছিল। তখনও আমরা ভয় পাইনি। এখনো ভয় পাই না। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”তার এই বক্তব্যে সভাস্থলে কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে মনির প্রকাশ্যে বলেন, “দিপু আমার ছোট ভাই, আমার পরিবারেরই অংশ। তাকে বিজয়ী করাই এখন আমাদের লক্ষ্য।”
সভায় দিপু ভূঁইয়ার বক্তব্যও ছুঁয়ে যায় কর্মীদের হৃদয়। তিনি বলেন,“তিনি (মনির ভাই) আমার মুরব্বি, আমার চাচা। আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আমি চাই এই নির্বাচন তার নেতৃত্বে পরিচালনা করতে। আমার নমিনেশন পাইনি, নমিনেশন পেয়েছে রূপগঞ্জের প্রতিটি মানুষ।” এই বক্তব্যে উপস্থিত নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে করতালি দেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই বিনয়ী মনোভাবই দিপুর জন্য মাঠে বাড়তি সহানুভূতি তৈরি করেছে।
বর্তমানে রূপগঞ্জে বিএনপির তৃণমূল সংগঠন দিপু ভূঁইয়ার নেতৃত্বে প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয় কার্যালয়গুলো পুনরায় সক্রিয় করা হয়েছে। যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে এখন পর্যন্ত কোনো বড় বিরোধ বা বিভাজন নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “রূপগঞ্জে বিএনপির এখন সবচেয়ে বড় সম্পদ ঐক্য। দিপু ও মনির একসঙ্গে মাঠে নামলে এই আসনটি হতে পারে বিএনপির অন্যতম আশার কেন্দ্র।”
রূপগঞ্জের রাজনীতি এখন অনেকটাই ভিন্ন রূপ নিয়েছে। যেখানে একসময় অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল স্পষ্ট, সেখানে এখন সহযোগিতার পরিবেশ। মনোনয়নপ্রাপ্ত দিপু ভূঁইয়ার সামনে বাধা যতটা কমছে, ততটাই বাড়ছে প্রত্যাশা তিনি পারবেন কি না বিএনপির হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।








































আপনার মতামত লিখুন :