নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নের তালিকাতে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামানের নাম ঘোষণা করা হলেও রয়েছে শঙ্কা ও ঝুঁকি। কয়েকটি সুস্পষ্ট বিষয় এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকদের কাছে জমা হয়েছে। সেটা এখন দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হবে।
দলের কেউ কেউ মনে করছেন, বিষয়টি তারেক রহমানের কাছেই চূড়ান্ত। যদিও দলের একটি বড় অংশ এ আসনে মাসুদুজ্জামানের প্রার্থীতা বদলের জোরালো দাবী করেছেন। হাইকমান্ডও বলছেন এটা চূড়ান্ত তালিক না। সামনে কিছু আসনে রদবদল হতে পারে। রদবদলের সম্ভাব্য আসনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনকে রাখতে চায় একটি অংশ।
বিএনপির একাধিক গ্রুপ জানান, মাসুদুজ্জামানের মনোনয়নে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় বেশ প্রকট।
সূত্রটি বলছে, মাসুদুজ্জামান সবেমাত্র বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। বিগত সময়ে কোন আন্দোলন সংগ্রামে হামলা মামলার শিকার হতে হয়নি। পেছন থেকে টাকা দিয়েছে এটা প্রচার থাকলেও নারায়ণগঞ্জ শহরে রাজপথে থাকা বেশীরভাগ নেতা সেটা অস্বীকার করেছেন। কারণ বিগত সময়ে অনেক বিএনপির নেতারা প্রোগ্রাম করতে হিমশিম খেয়েছে। টাকার অভাবে ঠিকমত উচ্চ আদালতে মামলাও লড়তে পারেনি। ওই সময়ে মহানগরের আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান অনেককে নিজের টাকায় আইনী সহায়তা দিয়েছেন। টাকা দিলেও পুলিশের বুলেট আর লাঠিপেটার সামনে মৃত্যু নিশ্চিত যেনে আন্দোলনকারী কাতারে মাসুদকে কখনো দেখা যায়নি। এ নিয়ে তৃণমূলের ভেতরে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, যাঁরা পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল, লাঠিপেটার শিকার হয়েছে, আন্দোলন করতে গিয়ে দিনের পর দিন বাসায় থাকতে পারেনি, আদালতের বারান্দা আর কাঠগড়া ছিল যাদের নিত্যসঙ্গী, কারাগার ছিল গন্তব্য তাদের মধ্য থেকে কাউকে ধানের শীষ না দেওয়াতে তৃণমূলের ভেতরে কঠোর সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এতে হৃদয় পুড়েছে হাজার হাজার পোড় খাওয়া নেতাকর্মীদের। হঠাৎ করে শিল্পপতির কৌশলে হাতে ধানের শীষ সাধারণ নেতাকর্মীরা সহজভাবে নিবে না।
বিএনপির একাধিক জরিপে এও উঠে এসেছিল ভোটের রাজনীতিতে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে অপ্রতিদ্বন্দ্বি হলেন তিনবারের সাবেক এমপি আবুল কালাম। তিনি শহর ও বন্দরে সমানতালে জনপ্রিয়। বন্দরের আদি বাসিন্দা হওয়াতে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ের আঞ্চলিকতা এখানে বড় ফ্যাক্টর। মাসুদুজ্জামান মনোনয়ন পেলেও শেষ সময়ে বন্দরের মানুষ আঞ্চলিক প্রার্থীকেই কাছে টেনে নিবে। ফলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাছাড়া এ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন বন্দরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন যিনি ওসমান পরিবার থাকতে তাদের চোখ রাঙানি, হামলা মামলাকে উপেক্ষা করে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। এরই মধ্যে মাকসুদ হোসেনের সঙ্গে একটি ইসলামী দলের সমঝোতা হয়েছে। ফলে মাকসুদ হতে পারেন তুরুপের তাস।
মাসুদুজ্জামান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎ সময়ের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মাধ্যমে সিটিজেন ব্যাংক গড়ে তুলেন। গত কয়েক মাসের কর্মকান্ডে বিষয়টি চাপা পড়ে গেলেও সম্প্রতি ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ও ‘রক্ষাকবচ’ খ্যাত মোহাম্মদ আলীকে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মেলন করে সমর্থন আদায়ের বিষয়টি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে। আলী এক সময়ে বিএনপির কিংমেকার থাকলেও তিনি বিগত ১৭ বছর ওসমান পরিবারকে লেহন করেছেন এবং সেলিম ওসমানকে এমপি বানাতে বিএনপিকে ধরাশয়ী করেছেন। এছাড়া ওসমান পরিবারের সময়ে বিতর্কিত খালেদ হায়দার খান কাজল সহ অন্যদের প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়েন। ওই সময়ে তিনি বার বার শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বিএনপিতে প্রবল বিতর্কিত হন। সেই মোহাম্মদ আলীকে কাছে টেনে নেওয়ার বিষয়টি বিএনপি আদর্শের সঙ্গেই বেঈমানী করেন করেন বিএনপির অনেকেই।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, ২০১৬ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাখাওয়াত হোসেন খান বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। ওই সময়ে নৌকা নিয়ে লড়েন সেলিনা হায়াৎ আইভী। বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন আছে তখন আইভীকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছিলেন মাসুদ। মাসুদের সহচর সবকিছুর নিয়ন্ত্রক খ্যাত মনির হোসেন সরদারের মাধ্যমে নিয়মিত ব্যাগ পাঠানো হতে আইভীর দেওভোগের বাড়িতে। একই পরিস্থিতি ছিল ২০১১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও। সেখানেও আইভীকে জেতাতে বিএনপির যে গ্রুপ কাজ করেছিল তার সঙ্গেই ছিলের মাসুদ এমন গুঞ্জনও আছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, এবারের নির্বাচন হবে বেশ কঠিন। এখানে মানুষ প্রতীকের পাশাপাশি ব্যক্তিকেও চেনা জরুরী। সে হিসেবে মাসুদ এখনো তৃণমূল ভোটার ও জনতার কাছে পৌছাতে পারেনি। তিন মাসের মধ্যে এটা কতটুকু জনতার দুয়ারে যেতে পারবে সেটা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। জনতার কাছে গেলেও পরিচিতি নিয়েও একটি বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।








































আপনার মতামত লিখুন :