News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

পারলেন না গিয়াস


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৫, ১০:২৭ পিএম পারলেন না গিয়াস

নারায়ণগঞ্জ রাজনীতির মাঠে একসময় ছিলেন দাপুটে নাম ছিল মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। বিএনপির নেতৃত্বে থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ের স্রোতে সেই গিয়াস উদ্দিন আজ রাজনৈতিকভাবে একেবারেই কোণঠাসা। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন পেতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেন এই সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি।

দলীয় সূত্র জানায়, গিয়াস উদ্দিন এবার শুধু নারায়ণগঞ্জ-৪ নয়, পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকেও মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ড তার উপর আস্থা রাখেনি। বরং সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নানের উপরই ভরসা রেখেছেন তারা। ফলে দীর্ঘদিন পর নির্বাচনী মাঠে ফিরে আসার স্বপ্ন চূর্ণ হয়েছে গিয়াসের।

মনোনয়ন পাওয়ার আশায় গিয়াস উদ্দিন সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জে জোর প্রচারণা চালান। শুধু নিজে নয়, তার দুই ছেলেকেও মাঠে নামান গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের কাজে। সোনারগাঁয়ের গ্রামীণ জনপদ থেকে শুরু করে বক্তাবলীর জনবহুল এলাকায় তার সভা-সমাবেশে মানুষের ভিড়ও দেখা যায়। কিন্তু সেই ভিড় টিকেনি দলীয় নেতৃত্বের বিবেচনায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গিয়াসের প্রচারণা ছিল বাহুল্য, কিন্তু সংগঠিত দলীয় সমর্থন ছিল না।

দলীয় ভরসা হারানোর শুরুটা অনেক আগেই। গত ৫ আগস্টের পর থেকে জেলা বিএনপির রাজনীতিতে গিয়াস উদ্দিনের অবস্থান দুর্বল হতে থাকে। সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে অনিয়ম, দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্বের অভিযোগে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হয় যার সভাপতি ছিলেন গিয়াস নিজে। একই সময়ে বাতিল হয় জেলা কৃষকদলের কমিটিও, যেখানে তার ছোট ছেলে কায়সার রিফাত ছিলেন সেই কমিটির সদস্য সচিব।

সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে যখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে গিয়াসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ওই বৈঠকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিবসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের এই ‘অবহেলা’ গিয়াসের রাজনৈতিক প্রভাব কমে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।

একসময় সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা ছিল গিয়াস উদ্দিনের একচ্ছত্র আধিপত্যের এলাকা। কিন্তু এখন সেই বলয় ভাঙছে দ্রুত। ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া, যারা একসময় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন, তারা এখন প্রকাশ্যে গিয়াসবিরোধী। তাদের নতুন জোটবদ্ধতা গিয়াসের অবস্থানকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে।

অন্যদিকে, গিয়াসের ছেলে কায়সার রিফাতের নেতৃত্বে কৃষকদলেও দেখা দেয় বিভাজন। আদমজী ইপিজেড এলাকায় ঝুট ব্যবসা কেন্দ্র করে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি মামলা পর্যন্ত গড়ায় সেই বিরোধ। পরিণতিতে কেন্দ্রীয় দফতর থেকে কৃষকদলের আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করা হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সীমানা পুনর্গঠনের পর গিয়াসের জন্য এটি ছিল রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে অনুকূল সময়। সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ একত্রিত হওয়ায় তিনি শক্ত অবস্থান পেতে পারতেন। কিন্তু দলীয় আস্থা হারানো, সংগঠনগত ভাঙন, এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।

রাজনীতিতে দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলেন গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু সেই প্রত্যাবর্তন রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তার অতীতের নেতৃত্বের ধরন ও অনুসারীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি সব মিলিয়ে গিয়াসকে নিয়ে এখন বিএনপির ভেতরে অবিশ্বাসই বেশি।

একসময় যিনি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রতিটি সভা-মিটিংয়ের কেন্দ্রে থাকতেন, আজ তিনি প্রান্তে। মনোনয়ন তালিকায় নাম না থাকায় তার রাজনীতির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। দলে আস্থাহীনতা, নেতৃত্বের বিচ্ছিন্নতা এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির ফলেই এই অবস্থায় পৌঁছেছেন গিয়াস উদ্দিন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গিয়াস উদ্দিন নিজের বলয় ভেঙেছেন নিজের হাতেই। তিনি হয়তো প্রচারণায় ঝড় তুলেছিলেন, কিন্তু দলের আস্থা ও জনভরসার সেই ঝড় টিকিয়ে রাখতে পারেননি।

Islam's Group