দরজার কড়া নাড়ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গা উৎসব। গত ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া উদযাপনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে ষষ্ঠী। ঢাক-ঢোল, শঙ্খ ওলু ধ্বনিতে মায়ের অর্চনা শুরু হবে। ষষ্ঠীর পূর্বেই পূজা মণ্ডপ গুলো প্রস্তুত করতে রাত দিন এক করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মৃৎ শিল্পী, সহ ইভেন্ট ম্যানেজম্যানের শিল্পীরা। অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে পূজা কমিটির আয়োজকরা। নারায়ণগঞ্জে যেসকল পূজা মণ্ডপ গুলো প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকে যেসব মণ্ডপ গুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় পরিলক্ষিত হয় সেগুলোর মধ্যে একটি হলো আমলাপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি । এবছর ১৪৩ তম পূজা উদযাপিত হতে যাচ্ছে এখানে।
ইতোমধ্যে মণ্ডপ তৈরি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এবারে আমলাপাড়া পূজা মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে সম্পূর্ন দেশীয় এবং প্রাকৃতিক জিনিসপত্র। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাট, পাটজাত পন্য, বাঁশ, স্বর্ণশিল্পীদের ব্যবহৃত মাটির গইরা, ধান, খেজুর গাছের পাতা, সুপারি গাছে খোল থেকে তৈরি প্লেট বাটি সহ বাংলাদেশে তৈরি বিদেশী রপ্তানি জাতীয় পন্য।
মণ্ডপের সাজসজ্জায় ফুটিয়ে তুলা হয়েছে গ্রাম বাংলা ঐহিত্য, গর্বের সোনালী আঁশ। দর্শনার্থী সহ সমগ্র দেশ তথা বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের অর্থনীতির এক সময়কার সোনালী আঁশ খ্যাত পাট এবং পাটজাত পন্য জন্য বিদেশে রপ্তানি হওয়ার সুপারি গাছের খোল থেকে তৈরি নানার পন্য।
মণ্ডপের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয় আমলাপাড়া সার্বজনীন পূজা কমিটি কোষাধ্যক্ষ সানি সাহার সাথে। মণ্ডপের এমন ভিন্ন ধর্মী সাজসজ্জার আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে প্রাচ্যের ডান্ডি। এক সময় নারায়ণগঞ্জ পাটের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন সেটা নারায়ণগঞ্জ থেকে বিলুপ্তির পথে। এজন্যই আমরা এ বছর নারায়ণগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পাটকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যাতে করে আবারো সকলের দৃষ্টিতে পাটের বিষয়টি উঠে আসে। এছাড়াও আমরা মণ্ডপের সজ্জায় ব্যবহার করেছি সুপারি গাছের খোল, ধান, আইসক্রিমের কাঠি, খেজুর গাছের পাতা মোট কথা আমাদের দেশীয় এবং প্রাকৃতিক পন্য গুলো সামনে এনেছি। আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন সুপারি খোলের তৈরি প্লেট গুলো কিন্তু বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। আমরা সেটিকে ব্যবহার করেছি যাতে এগুলো আমাদের দেশের মানুষের নজরে আসে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। দেশের বাজারেও চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
আমাদের এই দৃষ্টি নন্দন সাজসজ্জায় সম্পূর্ন কৃতিত্ব দিতে হয় আমাদের আমলাপাড়া সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি প্রবীর কুমার সাহাকে। উনি আমাদের পূজা কমিটির সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি উনি একজন ব্যবসায়ী নেতা। নারায়ণগঞ্জে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের বাণিজ্যিক পন্যের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
এবার আমলাপাড়া পূজা মণ্ডপে আলোকসজ্জার পাশাপাশি দর্শনাথীদের কাছে তুলে ধরা হবে বিষ্ণুর ১০ অবতারের মধ্যে একটি উল্লেখ্য যোগ্য অবতার নরসিংহ রূপ।
হিরণ্যকশিপু যখন মন্দার পর্বতে তপস্যা করছিলেন, তখন ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবগণ তার প্রাসাদ আক্রমণ করেন। দেবর্ষি নারদ হিরণ্যকশিপুর স্ত্রী কায়াদুকে রক্ষা করেন। দেবর্ষি দেবগণের নিকট কায়াদুকে ‘পাপহীনা’ বলে উল্লেখ করেন।[ নারদ কায়াদুকে নিজ আশ্রমে নিয়ে যান। সেখানে কায়াদু প্রহ্লাদ নামে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। নারদ প্রহ্লাদকে শিক্ষিত করে তোলেন। নারদের প্রভাবে প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত। এতে তার পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।
ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে, তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যতবারই তিনি বালক প্রহ্লাদকে বধ করতে যান, ততবারই বিষ্ণুর মায়াবলে প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা পায়। হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে বলেন তাকে ত্রিভুবনের অধিপতি রূপে স্বীকার করে নিতে। প্রহ্লাদ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন একমাত্র বিষ্ণুই এই ব্রহ্মাÐের সর্বোচ্চ প্রভু। ক্রুদ্ধ হিরণ্যকশিপু তখন একটি স্তম্ভ দেখিয়ে প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে, ‘তার বিষ্ণু’ সেখানেও আছেন কিনা
প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, তিনি ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। তিনি এই স্তম্ভে আছেন, এমনকি ক্ষুদ্রতম যষ্টিটিতেও আছেন। হিরণ্যকশিপু ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে গদার আঘাতে স্তম্ভটি ভেঙে ফেলেন। তখনই সেই ভগ্ন স্তম্ভ থেকে প্রহ্লাদের সাহায্যার্থে নৃসিংহের মূর্তিতে আবির্ভূত হন বিষ্ণু। ব্রহ্মার বর যাতে বিফল না হয়, অথচ হিরণ্যকশিপুকেও হত্যা করা যায়, সেই কারণেই বিষ্ণু নরসিংহের বেশ ধারণ করেন হিরণ্যকশিপু দেবতা, মানব বা পশুর মধ্য নন, তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাকে বধ করেন হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখরাঘাতে হত্যা করেন হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাকে বধ করেন তারই গৃহদ্বারে।
আপনার মতামত লিখুন :