পদ্মকে জলজ ফুলের রাণী বলা হয়। শাপলা জাতীয় ফুল। ফুটে থাকা ফুল শুধু বিল নয়, সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে তোলে প্রকৃতির। আর প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া ফুলের রাণী পদ্ম আর শাপলা ফুলে সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের জিন্দা মধ্যপাড়া এলাকার বিলের চিত্র।
প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে ছুটির দিনে মনোমুগ্ধকর এই লাল শাপলা বিলে ছুটে আসে তারা।
সকালের সূর্যের আলোতে লাল শাপলার এই ঝলমলে উজ্জ্বলতা দেখলে এক নিমিষেই যেন মন ভরে যায়। চোখ জুড়িয়ে যায় জাতীয় ফুল শাপলার বাহারি সৌন্দর্যে। নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার প্রতি আর্কষণ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
পাখি ডাকা ভোর থেকেই এ লাল শাপলার বিলে পর্যটকদের ভিড় জমে। লাল শাপলা সাধারণত বর্ষা ও শরৎকালে তথা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ফোটে। শাপলার প্রায় ৫০টিরও বেশি প্রজাতি থাকলেও বাংলাদেশে তিন প্রজাতির শাপলা পাওয়া যায়। সাদা, নীল ও রক্তকমল বা লাল শাপলা। এ বিলকে ঘিরে পদ্মা-শাপলা রিসোর্ট নামে দু’টি স্পটও গড়ে উঠেছে।
শহরের ইট-পাথরে বন্দি জীবন কাটানো মানুষ প্রশান্তির আশায় ছুটে আসছে এ বিলে। শীত মৌসুমে পর্যটকের ভিড় বাড়ে। এই বিল স্থানীয়দের আয়-রোজগারের জোগান দেয়। বিলে লাল শাপলার সমাহার দেখতে রয়েছে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা। অল্প ভাড়ায় ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ৩০০ একর এ জলাভ‚মির সৌন্দর্যময় শাপলা বিল পাড়ি দেয়া যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডিঙ্গি নৌকায় চড়তে পর্যটকদের ভিড়। লাইন ধরে তারা নৌকায় চড়ছে। কেউবা বিলের আগাছা ঠেলে নৌকা নিয়ে গহিনে যাচ্ছে। কেউবা বিল থেকে শাপলা তুলে জমা করছে নৌকায়। কেউ কেউ আবার লাল শাপলা তুলে মালা বানিয়ে গলায় পরে আনন্দে মেতে উঠছেন। কেউবা সেলফি তুলছেন। কেউবা ব্যস্ত মাছ ধরায়। কেউবা শাপলা নিয়ে বিক্রি করতে বাজারে যাচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ চিত্র চলে। ১৫ থেকে ২০টি শাপলার আঁটি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। অনেকে এ বিলের মাছ ও শাপলার ওপর নির্ভরশীল।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জিন্দা বিলে লাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের সমারোহে তৈরি হয়েছে মনোমুগ্ধকর নৈসর্গিক পরিবেশ। চলতি মৌসুমেও রয়েছে লাল শাপলা আর পদ্ম ফুল। শীতের আগমনী স্নিগ্ধতায় কচুরিপানা ও সবুজ পাতায় বেষ্টিত বিলের জলে ফুটেছে অসংখ্য লাল শাপলা আর পদ্ম। আগষ্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলার জিন্দা বিলে সবুজ পাতার ফাঁকে লাল শাপলা আর পদ্মের সমারোহ প্রকৃতি ও পরিবেশকে করে সৌন্দর্যমন্ডিত।
নৌকায় ৪-৫ জন দর্শনার্থী বহন করা যায়। এসব নৌকায় ঘণ্টায় শাপলা বিল ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভাড়া হিসেবে ৩০০ টাকা দিতে হয়। সূর্যের আলোয় লাল শাপলার এ ঝলমলে উজ্জ্বলতা দেখলে মন ভরে যায়। লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক, দর্শনার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন। শাপলা বিলের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে খুব ভোরে পৌঁছাতে হবে।
ঢাকার মিরপুর থেকে শাপলা বিলে আসা গৃহবধূ আকলিমা আক্তার বলেন, লাল শাপলার কদর বেশি। লাল শাপলা তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়। এটি রান্না করার পরও রক্তের মতো লাল থাকে। তবে রান্নার আগে তা সিদ্ধ করে নিতে হয়। এটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমন খেতেও খুব সুস্বাদু।
জিন্দা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রতিদিন তার ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে মাছ ধরেন। বড়শি দিয়ে ২০০-৩০০ কই, খলিশা, টাকি, শোল, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরেন। এই মাছ বিক্রি করে তার সংসার চলে।
নৌকার মাঝি আলী আকবর বলেন, শাপলা বিল আমাদের উপার্জনের পথ হয়েছে। প্রতি বছর এই সময় শাপলা বিলে ফোটা শাপলাফুল দেখার জন্য দূর-দূরান্তের মানুষ আসে। শাপলা ফুল দেখতে আসা মানুষদের নৌকায় উঠিয়ে বিলটি ঘুরাই। এই শাপলা বিল দেখতে আসা মানুষদের নৌকা ঘুরিয়ে এই মাঝিদের প্রতিদিন প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয়। এই উপার্জন দিয়ে তাদের সংসার চলে।
রাজধানীর কুড়িল থেকে ৩০০ফুট সড়ক দিয়ে কাঞ্চন সেতু হয়ে শাপলা বিলে যাওয়া সহজ।
আপনার মতামত লিখুন :