সামান্য বৃষ্টি আসলেই পানিতে তলিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি। হাঁটু সমান পানি মাড়িয়েই পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এখানেই বসবাস করতে হয়। আর ভারী বর্ষণ হলে তো বলারই অপেক্ষাই রাখে না। একেবারেই বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। যারা জনসাধারণের নিরাপত্তায় কাজ করেন তাদেরই অনিরাপদ বাসস্থানের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে থাকা সদস্যরা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান আর হচ্ছে না। তাদের এই জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে অনেক সময় তারা পরিবারের সদস্যদের কাছে পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করেন। তবে রেলওয়ে কর্মকর্তা জানিয়েছেন অতি শীঘ্রই তাদের নতুন বিল্ডিংয়ে শিফট করা হবে। তখন হয়তো এই সমস্যা থাকবে না।
এরই মধ্যে দিনব্যাপী ভারী বর্ষণে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। চারদিকের ময়লা পানি এখানে এসে জমে ফাঁড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে কক্ষেও প্রবেশ করেছে। থাকার জন্য প্রতিটি বেড তিন-চারটি ইট দিয়ে উঁচু করতে হয়েছে। এরপরও যেন ময়লা পানি থেকে রক্ষা হচ্ছে না। আরেকটু বৃষ্টি হলে যেন সেখানে বসবাসেরই কোনো উপায় থাকবে না।
পুলিশ সদস্যদের খাবারের জন্য ফাঁড়ির ভেতরে রান্না করতে হয় কাঠের মাচায়। সেই সাথে রয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ময়লা পানিতে এডিস মশার লার্ভা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় ফাঁড়িতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ডেঙ্গু ঝুঁকিতেও আছেন। যেকোনো সময়ে তারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। পাশাপাশি ময়লা পানি মাড়িয়ে চলার কারণে তাদের পায়ে চুলকানি সহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। মাঝে মধ্যে পানিতে আবার জোঁকের দেখা মিলে।
পুলিশ সদস্যরা জানান, একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) এবং একজন সহকারী উপ-পরিদর্শকের (এএসআই) এর নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে ছয়জন পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। এসব পুলিশ সদস্যদের এখানেই নিয়মিত থাকতে হয়। একইসঙ্গে রাতেও এখানেই ঘুমাতে হয়। বর্তমানে ফাঁড়িটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে ময়লা পানি মাড়িয়ে একটি জরাজীর্ণ জায়গায় তাদের থাকতে হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মো. হোসাইন শেখ বলেন, বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে যায়। আমাদের চলাফেরায় অনেক কষ্ট হয়। আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানেন। আমাদের পাশে একটি বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। সেটা সম্পন্ন হলে আমাদের সেখানে নিয়ে যাবে।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা এএসআই হুমায়ুন কবির বলেন, বৃষ্টি আসলেই আমাদের এখানে পানি উঠে যায়। প্রায় দুই মাস যাবত নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে আর বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যাচ্ছে। প্রতিবারই পানি কমতে এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। আমাদের এসপি স্যার এসে দেখে গেছেন। তিনি রেলওয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন। আমরা লিখিতভাবেও আবেদন জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে থাকার পরিবেশ নেই। পানির কারণে আমাদের সমস্ত কার্যক্রমেই বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আমাদের থাকা-খাওয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাবারের পানি পাওয়া যায় না। পোষাক পড়ে ডিউটিতে যেতে পারি না। পাশে একটা বিল্ডিং হচ্ছে। বিল্ডিংয়ের কার্যক্রম শেষ হলেই আমাদের সেখানে নিয়ে যাবে। তখন এই সমস্যাটা থাকবে না।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নাসরিন আক্তার বলেন, এটা অনেক পুরাতন ভবন এটা ভেঙ্গে ফেলা হবে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখে গেছেন। নতুন করে স্টেশনের পাশে ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এটার কাজ চলমান রয়েছে। সেই ভবনের কাজ শেষ হলেই তাদেরকে সেখানে শিফট করা হবে। তখন আর কোনে দুর্ভোগ থাকবে না। সকল স্টাফরাই ভালোভাবে থাকতে পারবে।
আপনার মতামত লিখুন :