গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে জুম্মার নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন নগরীর দেওভোগ পানির ট্যাংকির একতা সড়ক এলাকার বাসিন্দারা। ঠিক সেই সময় ৫০ থেকে ৬০ জন কিশোর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একতা সড়কের ভেতরে প্রবেশ করে।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, অস্ত্রধারীরা রাস্তায় যাকে পেয়েছেন তাকেই রামদা ও চাকু দিয়ে আঘাত করেছেন। এমনকি ছোট দুই শিশুর উপরও হামলা করে তারা। কিশোর সন্ত্রাসীরা ওই এলাকার মাদক বিক্রেতা আওলাদ হোসেন ও তার স্ত্রী রেহানাকে খুঁজতে তাদের বাড়িতে যান কিন্তু তাদের না পেয়ে পুরো বাড়িতে ভাংচুর চালান। কিশোরদের ওই গ্রুপটি মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলে যান। এ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে আহত দুই ব্যক্তি সদর থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
হামলার শিকার দেওভোগ পানির ট্যাংকি একতা সড়ক এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হানিফ মিয়া বলেন, আমি জুম্মার নামাজ পড়ে মাত্র বাসার সামনে আইসা দাঁড়াইসি। এমন সময় ওরা আইসা এলোপাতারি হামলা করে বসে। আমারে যখন কোপ দিসে তখন আমার ছোট বাচ্চাটা দৌড় দিয়া আসছে, তখন ছেলেটারেও রাস্তায় ফালাইয়া মারধর করছে। আমাদের এই এলাকার এক মাদক বিক্রেতারে মারতে আইসা ওরা নিরীহ এলাকাবাসীরে আঘাত করে গেসে। আমার পায়ে দুইটা সেলাই পড়সে। কার কাছে বিচার দিমু? পুলিশের ওপর তো কোনো আস্থাই রাখিনা।
স্থানীয় আরো এক বাসিন্দা বলেন, আমরা এখন নিরাপত্তহীনতায় আছি। এই এলাকায় আগে এমন হইত না। মাদক ব্যবসায়ীদের কারছে ঘন ঘন সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে আর সাধারণ মানুষ হামলার শিকার হইতাছে। সব সমস্যার পেছনে মাদক। পুলিশের লোকজন ধরে আবার টাকা নিয়া ছাইড়া দে। ওরা আরো সাহস পায়। আমাদের কথা হইল তরা যা খুশি কর কিন্তু আমাগো ক্ষতি করিস না। আমরা এখন শুধু নিরাপত্তা চাই।
জানা গেছে, এমন ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে নগরীর বিভিন্ন এলাকাগুলোতে। যা স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনাকাঙ্খিত এই ধরনের হামলা, অস্ত্রের মহড়া প্রকাশ্যে চলতে থাকায় নগরবাসী নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই কিশোর সন্ত্রাসীদের বিস্তার ও সব ধরনের অপরাধ বাড়ছে নারায়ণগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে। অনেকে মনে করছেন সামাজিক এই অপরাধ বৃদ্ধির জন্য অনেকে প্রশাসনের ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও রয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় নগরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কেউ কেউ। এ সময় জেলায় নিযুক্ত নতুন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী, জেলা প্রশাসক রায়হান কবিরসহ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জেলার এই দুই শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে ব্যবসায়ী নেতারা, মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ নানান অপরাদের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি পুলিশের অসহযোগিতার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
তবে সভায় জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, নারায়ণগঞ্জে কোনো অস্ত্রবাজ বা চাঁদাবাজের জায়গা হবেনা। অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, আমরা এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবো। অচিরেই আপনারা দেখতে পাবেন।







































আপনার মতামত লিখুন :