আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি সহ তার অনুসারীরা নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদেরকেও কাছে টানার জন্য বেশ বিএনপিপ্রীতি দেখিয়ে আসছিলেন।
এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। যে পুনর্বিন্যাসে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা ও সদর থানার দুটি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এতে রয়েছে ফতুল্লা, এনায়েতনগর, বক্তাবলী, কাশীপুর, কুতুবপুর, গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়ন। যা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর জন্য বেশ সুবিধা হিসেবেই আবির্ভাব হয়েছে।
এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। স্বাধীনতার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা নিয়ে ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠন করা হয়। তবে পরের ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ ছিল শুধুমাত্র সোনারগাঁও নিয়ে।
আর নারায়গঞ্জ-৪ আসনের সাথে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা যুক্ত থাকাকালিন সময়ে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর জন্য বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছিলো। তিনি ফতুল্লার বাইরে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিলেন না। ফলে এবার নতুন করে আসন পুনর্বিন্যাস হওয়াতে মুফতি মনির হোসেন কাসেমীর জন্য আর্শীবাদ হিসেবেই দেখা দিয়েছে। তাকে কোনো রকমের বেগ পোহাতে হবে না। সেই সাথে তার অনুসারী নেতাকর্মীরাও বেশ খুশি হয়েছেন।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শুরু থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ সংসদীয় এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরাসহ প্রায় সকলেই নিশ্চিত ছিলেন এই আসনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপির প্রার্থীকেই ধানের শীষের প্রতিক দেয়া হবে। কিন্তু চূড়ান্ত বাছাই পর্বে হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসেন জমিয়ত উলামার মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মনির হোসাইন কাশেমী। সেই সাথে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে দিনভর নানা জল্পনার পর বিকেলে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় ধানের শীষের মনোনয়ন পত্র।
অথচ তার বিরুদ্ধে ছিলো তৎকালিন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্যের সাথে আঁতাতের অভিযোগ। মূলত স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের সমর্থনেই তার বেড়ে উঠা এবং একই সাথে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ারও ইচ্ছা পোষণ করেন। এমনকি বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাসহ অনেকেই তাকে চিনতেনই না।
বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছিলো-বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামা হলেও জমিয়ত নেতা মনির হোসাইন কাসেমীকে কেউই চিনতো না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শুরুতেও তার কোন আলাপ আলোচনাই ছিল না। সংসদীয় এলাকাতেও তার তেমন একটা পরিচিত নেই। অনেকের কাছেই তিনি অপরিচিত। তারপরেও তাকে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
কিন্তু এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে পরামর্শ না করেই মনির হোসাইন কাসেমীকেই ২০ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়। জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতিক পাওয়ার পরেও জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে তিনি কোন যোগাযোগ করেনি। এর আগেও তিনি যোগাযোগ করেনি। ফলে ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থী হওয়া সত্তে¡ও মনির হোসাইন কাসের্মীকে প্রায় অনেকটাই বয়কট করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মী।
কিন্তু এবারও সেই মনির হোসাইন কাসেমী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরব হয়েছেন। সেই সাথে যে কোনোভাবেই মনোনয়ন বাগিয়ে আনার চেষ্টায় রয়েছেন। একই সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের মন জয় করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহ বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রশংসা করে বেড়াচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :