ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক আগে থেকেই বেশ আলোচনায় ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। বিভিন্ন সভা সমাবেশের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়ে আসছিলেন। তাদের অনুসারীরাও বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় বেশ জোরেশোরেই আলাপ আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আগেভাগেই যেন মনোনয়নের লড়াই থেকে যেন ছিটকে পড়েছেন সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু। নির্বাচন নিয়ে এখন আর তাদের তেমন আলাপ আলোচনা শুনা যাচ্ছে না। তাদের অনুসারীরাও অনেকটা নিরব হয়ে পড়েছেন। একই সাথে তাদের পদ পদবী থেকেও ছিটকেও পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে। সেই সাথে অনেক সময় তারা আন্দোলন সংগ্রামেও অংশ নিতে পারতেন না।
ব্যবসা বাণিজ্যেও নানাভাবেই বাধার শিকার হয়েছেন। সব মিলিয়ে তাদের যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন ছিলো না। দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করতে হয়েছে। পরিবারের সদস্যদেরও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। তাদের কারণে অনেক সময়ে পরিবারের সদস্যদের হেনেস্তার শিকার হতে হয়েছে। আর এই সময়টাতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির দায়িত্বে ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তারা দুইজনেই বিভিন্নভাবে নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন।
এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। সেই সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলাপ আলোচনা শুরু হয়।
আর এই আলাপ আলোচনায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে জায়গা করে নেন সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তারা বেশ সরব অব অবস্থায় ছিলেন। এই সরব অবস্থয়ই আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা জানানো হয়।
নির্বাচনের সম্ভাব্যতা জানানোর নারায়ণগঞ্জের ৫ টি আসনে পুরোদমে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা আর এলাকার ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে। একই সাথে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দিন দিন আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
কিন্তু এরই মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে উত্থান ঘটেছে মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামান মাসুদ ও প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর বাবুলের। তারা দুইজনেই অঢেল সম্পদের মালিক। সেই সাথে দুইজনেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনকে কেন্দ্র করে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন। বিএনপি দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় তারা নির্বাচনী এলাকায় সরব হয়ে উঠেছেন।
তাদের এই দুইজনের প্রচার প্রচারণায় জমজমাট হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ-৫ সংসদীয় এলাকা। তারা প্রায় প্রতিদিনই শহর বন্দর এলাকায় একের পর এক সভা সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন। সুযোগ পেলেই জনগনের কাছে ঘেসার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরাও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে ফুল দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। তার এই যোগদান বিএনপির রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে। কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়ে যোগদান করার ইতিহাস বিএনপিতে খুব কমই রয়েছে। বিএনপির রাজনীতিতে তার এটা রাজকীয় প্রবেশই বলা চলে। সেই সাথে তার যোগদান অনুষ্ঠানই জানান দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিক নিয়ন্ত্রক হবেন তিনি।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ছায়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) বেনজির আহমেদ টিটো, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
মাসুদুজ্জামান মাসুদের এই রাজকীয় উত্থানে বিপাকে পড়ে যান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। শুরু থেকেই তারা মাসুদের বিরোধীতা করে আসছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের বিরোধীতা কোনো কাজে আসেনি। বরং কেন্দ্রীয় বিএনপি সহ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরাও মাসুদের দিকে ঝুঁকতে থাকেন। মাসুদের এই গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকায় সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু যেন তাদের মনোনয়নের ভুলে গেছেন। তাদের মুখে এখন আর মনোনয়নের কথা শোনা যায় না।
আপনার মতামত লিখুন :