News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২

ফতুল্লায় ‘ব্রাজিল বাড়িতে’ দুদকের অভিযান


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২৫, ১০:৫৫ পিএম ফতুল্লায় ‘ব্রাজিল বাড়িতে’ দুদকের অভিযান

প্রথম আলো হতে নেওয়া : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানিগুলোর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তেল চুরির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ব্রাজিল বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। সন্ধ্যায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে দুদক।

‘তেল চুরি’, ব্রাজিল বাড়ি ও তাঁদের আয়েশি জীবন-শিরোনামে শনিবার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। এতে যমুনা তেল কোম্পানির গেজার ও শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) নেতা জয়নাল আবেদীন ওরফে টুটুলের অবৈধ সম্পদের তথ্য উঠে আসে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযান শুরু করেছে দুদক।

দুদকের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে যমুনা তেল কোম্পানি লিমিটেডের নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা ডিপো কার্যালয়ে আজ একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ডিপোর ২২ ও ২৩ নম্বর স্টোরেজ ট্যাংকের ক্যালিব্রেশন (মজুত সক্ষমতা) চার্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ পর্যন্তপ্রাপ্ত ও বিতরণ করা তেলের পরিমাণ-সম্পর্কিত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে অভিযান এনফোর্সমেন্ট টিম।

এতে আরও বলা হয়, অভিযানের সময় যমুনা তেল কোম্পানির গেজার মো. জয়নাল আবেদীন নির্মিত ‘ব্রাজিল বাড়ি’ নামের স্থাপনা সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শনের সময় জয়নাল আবেদীন কর্তৃক অবৈধ সম্পদ অর্জন-সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত রেকর্ডপত্র, তথ্যসমূহ বিশদভাবে পর্যালোচনা করে কমিশনের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে এনফোর্সমেন্ট টিম।

ব্রাজিল বাড়ির মালিক যমুনা তেল কোম্পানির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জয়নাল আবেদীন ওরফে টুটুল। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি জ্বালানি তেল চুরিসহ দুর্নীতি এবং অবৈধ আয়ে জমি, ফ্ল্যাটসহ অনেক সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জয়নাল এক দশক ধরে যমুনা অয়েল কোম্পানি লেবার ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি। ইউনিয়নের কার্যালয় শুধু চট্টগ্রামে। কিন্তু তিনি ফতুল্লার ডিপোতে ইউনিয়নের নামে নিজের একটি কার্যালয়ও তৈরি করেছেন। বিগত সরকারের সময় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ হন তিনি। গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের পরও আড়াল থেকে ডিপো নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ আছে। এখন তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন।

যমুনা তেল কোম্পানির একজন কর্মকর্তা গত মার্চে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জয়নালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে বলা হয়, জুলাই আন্দোলনে খুনের মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন জয়নাল। তবে অফিসে ঠিকই তাঁর নামে হাজিরা দেখানো হচ্ছে। কোম্পানি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

উল্লেখ্য, খাতায় সইয়ের মাধ্যমে যমুনায় হাজিরা নেওয়া হয়।

ব্রাজিল বাড়ির মালিক যমুনা তেল কোম্পানির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জয়নাল আবেদীন ওরফে টুটুল। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি জ্বালানি তেল চুরিসহ দুর্নীতি এবং অবৈধ আয়ে জমি, ফ্ল্যাটসহ অনেক সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জয়নালের ব্রাজিল বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ২ অক্টোবর গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি সেভাবেই পড়ে আছে। মেরামত করা হয়নি। কেউ বসবাসও করেন না।

পদ্মা, মেঘনা ও যমুনাত্মসরকারি এই তিন তেল কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে ভুয়া হিসাব দেখিয়ে জ্বালানি তেল চুরি করে বিক্রির একটি চক্র তৈরি হয়েছে। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত এ চক্রে। এর মূলে আছেন জয়নালের মতো তেল কোম্পানির শ্রমিক সংগঠনের (সিবিএ) কয়েকজন নেতা, যাঁরা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।

তেল কোম্পানিগুলো সারা দেশে ডিপোর মাধ্যমে ডিলারদের কাছে তেল সরবরাহ করে। সারা দেশে এমন ডিপো আছে ৪৭টি। এর মধ্যে শুধু যমুনার ডিপো ১৫টি। তেল কোম্পানি যমুনার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ডিপোতে দারোয়ানের চাকরি করতেন জয়নালের বাবা মো. রফিক। তাঁর মৃত্যুর পর ক্যানটিনের কর্মচারী হিসেবে ‘কাজ নাই, বেতন নাই’ ভিত্তিতে চাকরি পান জয়নাল। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ কর্মী হিসেবে তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়। অল্প সময়েই তিনি হয়ে যান গেজার (যাঁর কাজ তেল মাপা)।

যমুনার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, তেল মাপার মধ্যে আছে হিসাবের বড় ফাঁকি; যা কাজে লাগিয়ে জয়নাল বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। সূত্র বলছে, গত আগস্টের হিসাবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জয়নালের মূল বেতন ২০ হাজার ৩১০ টাকা। ভাতা, সুযোগ-সুবিধাসহ সব মিলে বেতন ৫০ হাজার ৫০০ টাকা।

জয়নাল মুঠোফোনে দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, তাঁর ঢাকায় কোনো ফ্ল্যাট বা বাড়ি নেই। ভাইবোনদের সহযোগিতা, খুলনায় বাবার (ফরিদ মোটরস) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও পেনশন এবং ব্যাংকঋণের টাকা দিয়ে ব্রাজিল বাড়ি বানানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ এবং ফতুল্লা ডিপো ও যমুনা তেল কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, জয়নাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে কেরানীগঞ্জ, রূপগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জে জমি ও ফ্ল্যাট আছে। ফতুল্লায় রয়েছে ব্রাজিল বাড়ি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ব্রাজিল বাড়ির জমি জয়নালের বাবার কেনা। জমির পরিমাণ ৪ শতাংশ। সেই জমিতে দেড় দশক আগে দুই ইউনিটের ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেন জয়নাল। বাড়িটি তৈরিতে দেড় কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয় মানুষের।

জয়নাল মুঠোফোনে দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, তাঁর ঢাকায় কোনো ফ্ল্যাট বা বাড়ি নেই। ভাইবোনদের সহযোগিতা, খুলনায় বাবার (ফরিদ মোটরস) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও পেনশন এবং ব্যাংকঋণের টাকা দিয়ে ব্রাজিল বাড়ি বানানো হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, যমুনা অয়েলের তেল লোপাট বা চুরিসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তাঁর নামে মিথ্যা মামলা করা হয়। তাই কিছুটা গোপনীয়তা রক্ষা করে নিয়মিত অফিস করেন।

অবশ্য যমুনা অয়েলের দুজন কর্মকর্তা বলেন, জয়নালের বাবা ফতুল্লায় চাকরি করতেন, বাড়ি নোয়াখালী। খুলনায় কীভাবে তাঁর ব্যবসা থাকে? যমুনার চাকরিজীবী হিসেবে তাঁর ব্যবসা করার সুযোগ নেই। পেনশন হিসেবে ওই সময় একজন কর্মচারী বড়জোর এক লাখ টাকা পেয়ে থাকতে পারেন।

ব্রাজিল বাড়ির পাশেই জয়নালের নিজের কেনা ৫ শতাংশ জমিতে আরও একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র আরও জানায়, ওই বাড়িতে জয়নালের বক্তিগত অফিস রয়েছে। জুলাই গণ-ভ্যুত্থানের পর ওই বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেখানে দুটি ব্যক্তিগত গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

জয়নালের তিন বোন ও দুই ভাই। তিন বোনের তিন স্বামীর মধ্যে দুজন এখন ফতুল্লায় যমুনার ডিপোতে চাকরি করেন, একজন স্থায়ী কর্মচারী ও আরেকজন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী। তাঁর আরেক ভগ্নিপতি ও ছোট ভাই ব্যবসা (জয়নাল ও নিজেদের) দেখাশোনা করেন। তাঁদেরসহ আত্মীয়স্বজনের নামে জয়নালের সম্পদ আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ব্রাজিল বাড়ির নামে ২০ লাখ টাকা ঋণ নিলেও তিনি তা এক বছরের মধ্যে শোধ করে দিয়েছেন। ঋণ নিয়েছিলেন মূলত বাড়ি করার টাকার বৈধ উৎস দেখাতে। দুদক তদন্ত করলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

Islam's Group