গত ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা ১৬ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার এই ১৬ বছরে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও এমপিরা দোর্দান্ড দাপটের সাথে নিজেদের নির্বাচনী এলাকার জনগণকে রীতিমত শাসন করেছে। বিরোধী দল মতের নেতাকর্মীদের শায়েস্তা করেছে প্রশাসনকে ব্যবহার করে। জেলা ৫টি আসন থেকে নির্বাচিত এমপিরা হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। বাদ যায়নি স্থানীয় সরকারে থাকা জনপ্রতিনিধি জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররাও।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সবার আগে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়েছেন সাবেক এমপিরা। তাদের অনুসরণ করে পালিয়েছেন অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরাও। দলে সংগঠনগুলোর শীর্ষ স্থানীয় নেতারাও পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বাইরে। স্বপরিবারে দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়ে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন সেই সকল শীর্ষ নেতা ও সাবেক এমপিরা।
ইতোমধ্যে নজরুল ইসলাম বাবু, শামীম ওসমান এবং কায়সার হাসনাতের প্রবাসে পরিবার নিয়ে আয়েশী জীবন যাপনের ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যা নিয়ে ফেরারী জীবন যাপন করা নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ ক্ষোভ দেখা গেছে। শীর্ষ নেতারা তাদের পরিবারের পরিজন নিয়ে বিদেশের মাটিতে আয়েশী জীবন কাটালে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে জীবন কাটাচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকের স্বজনের মৃত্যুতে প্যারেলে মুক্তি নিয়ে জানাজায় অংশ নিয়েছেন।
সম্প্রতি গত এক মাসে ৩জন নেতাকর্মী তাদের স্বজনদের শেষ বিদায়ে অংশ নিয়েছেন প্যারোলে মুক্তি নিয়ে।
এর মধ্যে গত ৭ অক্টোবর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে শিশু সন্তানের জানাজায় অংশ গ্রহণ করেছে বন্দরে যুবলীগ নেতা বাপ্পি হাসান। সে বন্দর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড নবীগঞ্জ উত্তরপাড়া এলাকার মাজু মিয়ার ছেলে। বৈষম্য বিরোধী মামলায় কারাগারে থাকা বন্দরের যুবলীগ নেতা বাপ্পি হাসানের পুত্র ইরফান হাসানের শিশু পুত্রের হার্টের ছিদ্র জনিত সমস্যা ছিল। তার চিকিৎসা চলছিলো। এরমধ্যে বাপ্পিকে বৈষম্য বিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হলে সন্তানের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। গত ৬ অক্টোবর তার শিশু সন্তান মারা যায়।
শেষবারের মতো পুত্র সন্তানের মুখ দেখতে ও জানাজায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তি চেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোমবার সন্ধ্যায় ১ ঘণ্টার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেন।
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যুবলীগ নেতা বাপ্পি হাসান পুলিশি প্রহরায় তার নিজের বাড়িতে যান। বাড়িতে প্রবেশের পর কান্নায় ভেঙে পড়ে। শিশু সন্তানের লাশ কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে নবীগঞ্জ করবস্থান পর্যন্ত আসা সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্য সকলের চোখে পানি এসেছে। পুত্রের লাশ ওই কবরস্থানে সমাহিত শেষে তাকে পুলিশি প্রহরায় কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১৯ অক্টোবর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ফতুল্লায় স্ত্রীর জানাজায় অংশ নিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান খান। মুন্সিগঞ্জ কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সস্তাপুরে স্ত্রী চিকিৎসক গোলশান আক্তার বানুর জানাজায় অংশ নেন।
এর আগে শাহজাহান খানের স্ত্রী গোলশান আক্তার বানু আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ফতুল্লার সস্তাপুরে নিজ বাসায় তিনি মারা যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফতুল্লা কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
শাহজাহান খানের ছোট ভাই ফজলুল করিম খান বলেন, ‘২৫ মার্চ সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের আদমজী এলাকায় ইফতার পার্টি থেকে শাহজাহান খানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার স্ত্রী গোলশান আক্তার বানু নানা রোগে আক্রান্ত, তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার দুই ছেলে দেশের বাইরে থাকায় স্ত্রীর চিকিৎসা ও সেবা করতেন শাহজাহান খান নিজেই। গ্রেপ্তারের পর সঠিক চিকিৎসা ও সেবা না পাওয়ায় তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।’
শাহজাহান খান মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঠেংগারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
সব শেষ ১ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জে ৪ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর জানাজায় অংশ নিয়েছেন থানা যুবলীগের সভাপতি ও নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ।
শনিবার ১ নভেম্বর তিনি কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পান। পরে বাদ জোহর সিদ্দিরগঞ্জ আইলপাড়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা ও দাফন শেষে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বৈষম্য বিরোধী মামলায় কারাগারে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্দিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতির স্ত্রী রোকেয়া ররহমান (৪৮) শুক্রবার অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া হলে পরে তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়ার পথে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
শেষবারের মতো স্ত্রীর মুখ দেখতে ও জানাজায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তি চেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করে।
আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শনিবার সকালে ৪ ঘণ্টার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেন। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান পুলিশি প্রহরায় সিদ্দিরগঞ্জ আইলপাড়া নিজের বাড়িতে যান। বাড়িতে প্রবেশের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পরে বাদ জোহর স্থানীয় মাদ্রাসায় স্ত্রীর জানাজায় অংশ নেন। এবং স্ত্রীর লাশ আইলপাড়া কবরস্থানে সমাহিত করেন। শেষে তাকে পুলিশি প্রহরায় কারাগারে পাঠানো হয়।
মতি বলেন, আমি দীর্ঘ ১০ মাস যাবত কারাগারে রয়েছি। এর ভেতর গতকাল আমার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করে। তার সঙ্গে আমি ৩২ বছরের সংসার জীবন কাটিয়েছি। সে সবসময় আমাকে আগলে রেখেছেন। দুর্ভাগ্য যে আমার বড় ভাই যখন মৃত্যুবরণ করেছিল তখনও আমি কারাগারে ছিলাম। আজকের মতো সেই তখনও আমার অনুপস্থিতিতে আপনারা সবাই সকল কিছু করেছিলেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার স্ত্রী যদি চলার পথে আপনাদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ কিংবা ভুল করে থাকে আমি তার হয়ে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই। তার জন্য দোয়া করবেন। আমি তার জানাজায় অংশ নিতে পেড়েছি এটাই আমার জন্য অনেক।








































আপনার মতামত লিখুন :