নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মালবাহী জাহাজ ভাড়া করে এনে কেটে ফেলার ঘটনায় জেলাজুড়ে আলোড়ন তৈরী হয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি রফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন এইচবি হারুন এন্ড ব্রাদার্স শীপইয়ার্ডে কেটে ফেলা হয় মালেক শাহ কুতুবদিয়া নামক এমটি ডাম্ব বার্জ (ডিবি) জাহাজ। এই ঘটনায় জাহাজের মালিক রফিকুল ইসলামের ছেলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি শাহাদাত হোসেন সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
গত ২৪ নভেম্বর সোনারগাঁ থানায় এই মামলা দায়ের করা হলেও বিষয়টি জানাজানি হয় ২৭ নভেম্বরে। জেলাজুড়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠলে দ্রুতই বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও শীপইয়ার্ড মালিক রফিকুল ইসলাম। তারই ধারাবাহিকতায় ২৯ নভেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় মিহির ওভারসিজ কোম্পানির কার্যালয়ে উভয় পক্ষ বসে সমঝোতা করে।
তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে সমঝোতা চুক্তিতে অংশ নেন অভিযুক্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি শাহাদাত হোসেনের বাবা সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম ও জাহাজের মালিক রাকেশ শর্মা। এসময় আরও আটজন সাক্ষী চুক্তিপত্রে সাক্ষর করেন।
চুক্তির প্রধান শর্ত অনুযায়ী, কেটে ফেলা জাহাজটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। এর সাথে আরও ১১ টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাহাজ মেরামতের জন্য ৪৫ দিন সময় নির্ধারন। মেরামতের সব খরচ শীপইয়ার্ড মালিক বহন করবেন। শ্রমিক বাবদ ১৫ লাখ টাকা জাহাজ মালিক বহন করবেন। জাহাজের বর্তমান প্লেটের থিকনেস অনুযায়ী উইন্স, দোতলা কেবিন, টেপারসহ সম্পূর্ণ জাহাজ মেরামত করে দেয়া হবে। জাহাজ মালিক প্রথম ধাপে চেকে ৮ লাখ টাকা ও কাজ শেষ হবার পর ৭ লাখ টাকা চট্টগ্রাম বার্জ ও টাগ মালিক সমিতির মাধ্যমে পরিশোধ করবেন। জাহাজটি মেরামতের সময় দেখাশোনা করতে পারবে জাহাজ মালিক পক্ষের লোকজন।
জাহাজ মেরামত সম্পন্ন হলে জাহাজটি চট্টগ্রাম বার্জ ও টাগ মালিক সমিতির কাছে পৌছে দেয়া হবে। পুরো সংস্কার কাজ চলাকালে জাহাজ মালিককে কোন প্রকার চাপ বা হুমকি দেয়া হলে আইনের আশ্রয় নিবেন রাকেশ শর্মা। মেরামত শেষে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে মামলা প্রত্যাহার হবে। মামলার যাবতীয় ব্যয় শীপইয়ার্ড মালিক বহন করবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাহাজের মালিক রাকেশ শর্মা। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বার্জ ও টাগ মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে ঢাকায় শীপইয়ার্ড মালিকের সাথে আমাদের সমঝোতা হয়েছে। তারা জাহাজটি ৪৫ দিনের মধ্যে মেরামত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিবেন। আমরা শর্ত সাপেক্ষে সমঝোতায় রাজি হয়েছি। জাহাজ মেরামত সম্পন্ন হয়ে গেলে আমরা মামলা প্রত্যাহার করে নিব।
এর আগে, গত ২৪ নভেম্বর দায়ের করা মামলায় আসামী করা হয় সাতজনকে। তারা হলেন জাফর, শাহাদাত, ইকবাল, নজরুল ইসলাম, এমদাদুল হক, জাফর ও হোসেন। মামলার দুদিন পর আসামী নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আসামীদের মধ্যে শাহাদাত সাবেক ছাত্রদল নেতা এবং শীপইয়ার্ড মালিকের ছেলে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, শাহাদাত ও জাফর জাহাজ মালিক রাকেশ শর্মার কাছ থেকে ১ মাসের জন্য মালেক শাহ কুতুবদিয়া নামক ডাম্ব বার্জ (ডিবি) জাহাজ ৭ লাখ ২০ হাজার টাকায় ভাড়া নেয়। নভেম্বর মাসের ১ তারিখে এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। জাহাজটি পন্য পরিবহনের জন্য সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদী থেকে কর্নফুলী নদীর বাকলিয়ার চর পর্যন্ত চলাচলের কথা ছিলো। কিন্তু ভাড়া নেয়ার পরেই জাহাজটি সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর তীরে এইচবি হারুন এন্ড ব্রাদার্স শীপইয়ার্ডে তুলে কেটে বিক্রি করতে থাকে আসামীরা। জাহাজের একজন স্টাফ গোপনে জাহাজ মালিককে বিষয়টি জানায়। রাকেশ শর্মা ঘটনাস্থলে এসে তার জাহাজ কাঁটা অবস্থায় দেখতে পান। এই ঘটনায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ক্ষতি দাবী করে থানায় মামলা দায়ের করেন।
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হাসান খান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আইনগত ভাবেও সেই সুযোগ নেই। আমরা আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যহত রেখেছি।’
এই বিষয়ে শীপইয়ার্ড মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজ নিয়ে এসেছিলো জাফর নামে এক ব্যক্তি। তারা দাবী করেছিলো জাহাজ এখন তাদের দায়িত্বে। ভুল বুঝিয়ে আমাদের কাছে জাহাজ কাটার কাজ করিয়েছে। এই বিষয়ে জাহাজ মালিকের সাথে আমাদের সমঝোতা হয়েছে। দেড় মাসের মধ্যেই জাহাজটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হবে।’








































আপনার মতামত লিখুন :