News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

কাউন্সিলর হতে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যায় নুরুউদ্দিন


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ১০:৩০ পিএম কাউন্সিলর হতে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যায় নুরুউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ৪নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূরউদ্দিন মিয়া। আরও সহজভাবে পরিচয় দেওয়া গেলে দেশের আলোচিত সাতখুনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি নরঘাতক নূর হোসেনের আপন ছোট ভাই। এই নূরউদ্দিন একসময় বিএনপির পদধারী নেতা থাকলেও বড় ভাইয়ের রেখে যাওয়া সাম্রাজ্য ধরে রাখা আর নিজে কাউন্সিলর হবার স্বপ্নে আওয়ামী রাজনীতির ছায়াতলে আশ্রয় নেন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে দল পরিবর্তনে তার লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি হয়েছে। কারণ সেখানেও তিনি স্থায়ী হতে ব্যর্থ হয়েছেন। ২০২৪ এর ৫ আগস্টে স্বৈরাচারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় সাম্রাজ্য রেখে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

বড় ভাই নূর হোসেন বদমেজাজি স্বভাবের হলেও এক্ষেত্রে নূরউদ্দিন একেবারে উল্টো। যেকোনো ঘটনাকে ঠান্ডা মাথায় সামলে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। যদি উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ২০২২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের সাবেক শীর্ষ নেতা আব্দুল মতিন মাস্টারের ছেলে সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান ও তার ভাতিজা আওয়ামী লীগ নেতা ছোট নজরুলকে ভোটের লড়াইয়ে পরাজিত করেই সোজা ওসমানের দারস্থ হন। যদিও আওয়ামী সমর্থন ছাড়াই হাসান-নজরুলকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল সে। তবে পরাজিতদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার রাজনীতির মাঠে টিকে থাকার লক্ষ্যে কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে ওসমানের ছায়াতলে ছুটে গিয়ে আশ্রয় নেন। ধীরে ধীরে একপর্যায়ে ওসমানের ঘনিষ্ঠজনেও পরিনত হয়।

২০১১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন নরঘাতক নূর হোসেন। এরপর ২০১৪ তে সাতখুন করে ক্ষমতার চেয়ার হারাতে হয় তাকে। সাতখুন হতেই হোসেনের ভাই নূর সালাম, নূরউদ্দিন এবং জজ মিয়া মামলা ভয়ে ফেরারি হয়ে যাওয়ায় হোসেনের দুর্গে নতুন গডফাদারদের থাবা পড়ে। তাদের গড়ে তোলা সাম্রাজ্য শিমরাইল এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ছোট নজরুলের পরিবার ও নজরুলের চাচাতো ভাই আরিফুল হক হাসান ভাগবাটোয়ারায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এককথায় বলা চলে,হোসেন পরিবারের পতন ঘটেছে।

এরপর ২০১৬ সালের নির্বাচনে নূর হোসেনের অনুপস্থিতিতে ফাঁকা মাঠে আরিফুল হক হাসানের গলায় বিজয়ের মালা উঠে। একটানা ৫ বছরের জন্য ওয়ার্ডটির নিয়ন্ত্রক হিসেবে দাপিয়ে বেড়ালেও সবশেষ ২২ এর নির্বাচনে পূনরায় কাউন্সিলরের চেয়ার হোসেন পরিবারের হাতে উঠে। নূরউদ্দিন কাউন্সিলর হতেই তার বড় ভাইয়ের পুরানো সকল সেক্টর নিজের কব্জায় আনার প্রচেষ্টায় নামেন এবং এতে সফলও হয়েছিল। তবে শেষমেষ সম্রাজ্য ধরে রাখাতে ব্যর্থ নূরউদ্দিনও।

খবর নিয়ে জানা গেছে, ৯০ দশক থেকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতে নিজের নাম লিখান নূরউদ্দিন মিয়া। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে জেলা যুবদলের সদস্য,সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির মূল দলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়কের মতো পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে ক্ষমতার লোভে পড়ে মহামারি করোনাকালীন সময়ে বিপদগ্রস্ত দল বিএনপিকে ছেড়ে নৌকার মাঝি হন এই নেতা। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতার ভূমিকা নিয়ে মাঠ চষে বেড়ানো শুরু করে ২২ এর নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রথম চান্সেই কাউন্সিলর বনে যান। কাউন্সিলর হয়েই লীগের বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের টার্গেটের মিশনে নেমে শামীম ওসমানকে খুশি করানোর প্রচেষ্টা চালান। এতে প্রথম ধাপেই বিরোধীদের হামলা-মামলা অতিষ্ঠের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করে শামীম ওসমানের বিশ্বস্তও হয়েছেন। তবে সাম্রাজ্য আর আধিপত্য বেশিদিন টেকাতে পারেনি। ২০২৪ এর ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতনে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

এদিকে গুঞ্জন আছে, আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে ফের বিএনপিতে নাম লিখানোর মিশনে নেমেছে নূরউদ্দিন। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইতোমধ্যে সক্ষমতা বেড়েছে।

তবে এক্ষেত্রে বিএনপি তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভাষ্য,সুবিধাভোগী নূরউদ্দিনের দলে মতো কাউকে দলে পূনরায় দেখতে ইচ্ছুক না তারা। এদের মতো বিশ্বাসঘাতকদের দলে ফেরানো অন্তকোন্দল সৃষ্টির পায়তারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য,২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শামীম ওসমানের নির্দেশনায় শিমরাইল এলাকায় নূরউদ্দিন ও তার ভাই জজ মিয়ার নেতৃত্বে নির্বিচারে ঝাপিয়ে পড়েন। তাদের হামলায় বহু আন্দোলনকারী হতাহতের মতোও ঘটনা ঘটেছে।

Islam's Group