এতে নৌ-পথে আবারো আতংক সৃষ্টি হয়েছে। ফেরি থেকে ট্রাকসহ পাঁচটি যানবাহন ধলেশ্বরী নদীতে পড়ে প্রবাসী সহ তিনজনের মৃত্যুর শোক কাটেনি স্বজনদের মধ্যে। এর মধ্যেই শুক্রবার ফতুল্লায় যাত্রীবাহী একটি লঞ্চের ধাক্কায় নোঙর করা একটি বাল্কহেড আংশিক ডুবে দুই শ্রমিকদের মৃত্যু ঘটেছে।
দুই সপ্তাহে মধ্যে ৫জনের মৃত্যু নৌ-পথ আবারো ভয়ংকর রূপে ফিরতে যাচ্ছে বলে যাত্রীরা আভাস দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, নদীপথে বাল্কহেড দখলে থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। সরকারের উদ্যোগে বাল্কহেড নিয়ন্ত্রণ করা না হলেও নৌপথ কয়েক দিন পর লাশে মিছিল হতে পারে।
জানা গেছে, ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে যাত্রীবাহী একটি লঞ্চের ধাক্কায় বালুভর্তি একটি বাল্কহেড ডুবে গেছে। ১৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফতুল্লা লঞ্চঘাটের কাছে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ফতুল্লার পাগলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, চাঁদপুরগামী ‘বোগদাদিয়া-১৩’ নামের একটি লঞ্চ ‘জান্নাতি’ নামে বালুভর্তি বাল্কহেডটির পেছনের অংশে ধাক্কা দেয়। এক পর্যায়ে ধাক্কার কারণে লঞ্চটি বাল্কহেডের ওপর উঠে যায়। তিনি জানান, তখন লঞ্চটি পেছনের দিকে চালিয়ে বাল্কহেডের ওপর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর বাল্কহেডটি দ্রুত ডুবে যায়। এসময় বাল্কহেডে থাকা চালকুশ্রমিকেরা লাফিয়ে নদীতে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠে যান।
২১ ডিসেম্বর বক্তাবলী ফেরি থেকে ট্রাকসহ ৫ যান ধলেশ্বরী নদীতে, তিনজন নিহত হন। ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বক্তাবলী ও নরসিংপুর ঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন সিঙ্গাপুরপ্রবাসী মাসুদ রানা (৩০), মোটরসাইকেল আরোহী মো. রফিক (৩৫) ও ভ্যানচালক মো. স্বাধীন (২৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে বক্তাবলী ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরি নরসিংপুর ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছালে একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশাভ্যানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এ সময় ফেরির রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ পাঁচটি যানবাহন নদীতে পড়ে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী রফিক গুরুতর আহত হন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর কয়েকজন সাঁতরে তীরে ওঠেন। তবে স্বাধীন ও মাসুদ রানা নামের দুজন নিখোঁজ ছিলেন। খবর পেয়ে রাতে নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। দিবাগত রাত দুইটার দিকে নদী থেকে ওই দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ফেরিতে থাকা ট্রাকটির কীভাবে হঠাৎ ইঞ্জিন চালু হলো এবং এই যান্ত্রিক ত্রুটির পেছনে চালকের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বক্তাবলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ট্রাকটি হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় ফেরির রেলিং ভেঙে যানবাহনসহ নদীতে পড়ে যায়। ওই ঘটনায় একজন হাসপাতালে মারা গেছেন। নিখোঁজ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
অপরদিকে শুক্রবার ২৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় যাত্রীবাহী একটি লঞ্চের ধাক্কায় নোঙর করা একটি বাল্কহেড আংশিক ডুবে গেছে। এই ঘটনায় দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। বুড়িগঙ্গা নদীর ধর্মগঞ্জ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথমে নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধারে নৌ-পুলিশ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
ফতুল্লার পাগলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আকিবুল ইসলাম প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানান, শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকার দিকে যাওয়ার সময় নোঙর করা মাটিভর্তি একটি বাল্কহেডকে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী লঞ্চ সুন্দরবন-১৬। লঞ্চের ধাক্কায় বাল্কহেডটি অর্ধেক ডুবে যায়। এ সময় বাল্কহেডে থাকা পাঁচ শ্রমিকের মধ্যে দুজন নিখোঁজ হন। দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরিদর্শক আকিবুল ইসলাম আরও জানান, নিখোঁজ দুই শ্রমিককে উদ্ধারে পাগলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ি, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ সদস্যরা নদীতে তল্লাশি চালিয়ে মরদেহে বের করা হয়েছে।


































আপনার মতামত লিখুন :