News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২

এমপির লোভে বিএনপি ছাড়ছেন অনেকে!


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৯:৪২ পিএম এমপির লোভে বিএনপি ছাড়ছেন অনেকে!

নারায়ণগঞ্জে ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতে বিএনপি ও একটিতে জোটের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত হলেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব এখনো বিরাজমান বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে বহিস্কার করা হবে। এমন হুশিয়ারী দেয়া হলেও বেশ কয়েকজন বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এতে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন এমপি হওয়ার লোভে বিএনপি ছাড়ছেন অনেকে।  

জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনে ইতোমধ্যে ৩০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দলীয় পরিচয় না দিয়ে। অর্থাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে যাতে দলীয় পরিচয় বাধা হয়ে না দাড়ায় সেজন্য তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই কৌশল অবলম্বন করেছেন।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতে বিএনপি প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও আলোচিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন নিয়ে পরবর্তীতে ধোয়াশা দেখা দেয়। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মাসুদুজ্জামানের নির্বাচন না করার ঘোষণা এবং পরবর্তীতে ফিরে আসার একদিন পরই অত্র আসনে মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান মনোনয়ন পেয়েছেন বলে প্রচার হতে থাকে। শেষতক ২৪ ডিসেম্বর বিএনপির মনোনয়ন পান সাবেক এমপি বাবুল কালাম। এদিন তার মেয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের বাকী যে ৩টি আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও বঞ্চিত নেতাদের প্রতিবাদ ও মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাজপথও সরগরম হয়ে উঠেছিল।

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পাওয়ার পরই আলোচনায় উঠে এসেছেন মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আস্থা অর্জনের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিতেও তিনি পেয়ে গেছেন বড় সমর্থন। দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী মনিরের হঠাৎ সভায় উপস্থিত হওয়া এবং দিপুর হাত তুলে সমর্থন জানানো রূপগঞ্জ বিএনপিতে যেন নতুন বাতাস বইয়ে দিয়েছিল। তবে কয়েকদিনের ব্যবধানে কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে ইউটার্ন নিতে দেখা যায়। অত্র আসনে ইতোমধ্যে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া ওরফে দিপু ভূইয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দুলাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও তিনি কোন রাজনৈতিক দল কিংবা স্বতন্ত্র কিছুই উল্লেখ করেননি। যে কারণে গুঞ্জন রয়েছে মোহাম্মদ দুলাল বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন।

নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম আজাদ শুরু থেকেই ঐক্যের আহ্বান জানালেও বাস্তব চিত্র উল্টো। ইতোমধ্যে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মনোনয়ন বঞ্চিত মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর ও কেন্দ্রীয় নেত্রী পারভীন আক্তারের একত্র মঞ্চে অবস্থান স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। তারা প্রকাশ্যে আজাদের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়ে করেছেন বিক্ষোভ মিছিল। ফলে আজাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিজ দলের ‘বিক্ষুব্ধদের’ সামাল দেওয়া। যদিও দলীয় সূত্র বলছে, সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপি মনোনীত আজহারুল ইসলাম মান্নানও ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে সাবেক এমপি রেজাউল করিম, সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন, জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফরসহ ৭ মনোনয়ন প্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধভাবে মান্নানের বিরুদ্ধে মশাল মিছিল ও প্রতিবাদ করেছেন। গুঞ্জন রয়েছে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এই আসন থেকেও বিএনপির সাবেক দুই এমপির যেকোন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি জোট প্রার্থী হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মনির হোসাইন কাসেমীর জন্য ছাড় দিয়েছে বিএনপি। তবে অত্র আসন থেকে ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনে ইতোমধ্যে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী বিএনপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শাহ আলম কোন রাজনৈতিক দল কিংবা স্বতন্ত্র কিছুই উল্লেখ করেননি। আলীগঞ্জের বাসিন্দা মোঃ সুরুজ্জামান বিএনপি পরিচয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জেলা যুবদলের সদস্য সচিব শেখ মোঃ মশিউর রনি বিএনপি পরিচয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ম্যানেজে ছুটছেন মনির হোসাইন কাসেমী। মঙ্গলবার রাতে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা ও ফতুল্লা থানা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছেন। তবে গুঞ্জন রয়েছে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। এ আসনে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও দলীয় সাবেক এমপিরা নিজেদের জুনিয়র নেতাদের মনোনয়নকে মেনে নিতে পারছেননা। যে কারণে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিস্কারের হুশিয়ারী দিলেও এমপি হওয়ার খায়েশে দলীয় স্বার্থকে তারা জলাঞ্জলি দিতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। তবে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে বিএনপির কোন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে কিনা সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল পর্যন্ত।

Ad Placement 1
Ad Placement 2
Islam's Group