ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্পের জন্য শহরের দুইনং রেলগেট থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী সড়কের ১৪ ফুট জায়গা ব্যবহার করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন রেলকে সড়কের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে কদম রসুল সেতুর পশ্চিম দিকের সংযোগ সড়কের জন্য ৫ নং খেয়াঘাট এলাকার রেলের জমি ব্যবহার করতে পারবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাথে গোপনে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চুক্তিটি হয়েছে দুই বছর আগে যখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আর দুই বছরের ব্যবধানে সেই চুক্তির আপত্তি তুলেছেন বিগত দিনে যারা আইভীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তারা দাবি করেছেন ওই সমঝোতা স্মারকটি গোপনে করা হয়ে যা তারা কোনভাবেই বাস্তবায়ন হতে দিবেননা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত ও সহজ করতে ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্প ও কদম রসুল সেতুর স্বার্থে এই চুক্তিটি হয়েছে। এর বিরোধীতা করে কেউ কেউ বলছেন ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্পের জন্য যদি সোহরাওয়ার্দী সড়কের একাংশ রেলকে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে দুইনং রেলগেট ও আশপাশের কয়েকটি বাণিজ্যিক এলাকায় যানজট ও ভোগান্তী বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, এই স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল। এই সমঝোতা স্মারকে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিতব্য কদমরসুল সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় রেলওয়ের জায়গার বিনিময়ে রেলওয়েকে ডুলেলগেজ রেললাইন প্রকল্পের জন্য শহরের একনং রেলগেট থেকে দুইনং রেলগেট পর্যন্ত (সোহরাওয়ার্দী সড়ক) সড়কে ১৪ ফুট রাস্তা (যা রেললাইন থেকে দক্ষিণে সড়কে অবস্থিত) নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন রেল রেলওয়েকে দিবে।বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সমঝোতাটি করেন। তৎকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ছিলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী যিনি জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি। মূলত তৎকালে আইভীর উপস্থিতিতেই সাক্ষর হয় স্মারকটি। যদিও সেই সময় নগরবাসীর কাছে চুক্তি তথা সমঝোতা স্মারকের বিষয়টি প্রকাশ করেননি আইভী।
২০২৩ সালের ২৫ জুলাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন ও পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন রেল মন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম সুজন। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে রেল পথের ছোট আকৃতির দ্রুত গতির বিশেষ যান গ্যাংকারে চড়ে রেল মন্ত্রী মঙ্গলবার সাড়ে এগারোটায় নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া রেল স্টেশনে এসে নামেন। পরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল পথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন রেল মন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম সুজন। এছাড়াও প্রকল্পটির জন্য নাসিকের সঙ্গে চুক্তির জায়গাও পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী।
এদিকে ২০২৪ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ঠিকাদার চলে যাওয়ায় ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্পের জন্য এখনো দুইনং রেলগেট এলাকায় সোহরাওয়ার্দী সড়কের জমি নিজেদের অধীনে নিতে পারেনি রেলওয়ে। কিন্তু নতুন করে এই প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগ হলে এবং প্রকল্পের কাজ শুরু হলে সোহরাওয়ার্দী সড়কের ১৪ ফুট জায়গা পাশে সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। যা কোনো ভাবেই মানতে নারাজ স্থানীয় বাসীন্দা থেকে শুরু করে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা। ইতোমধ্যে বিদ্যমান নকশায় সেতুর বিরোধীতা করে একপক্ষ মানববন্ধন করেছেন নাসিকসহ বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। যদিও এ বিষয়ে অপরপক্ষ বলছেন তারা শহরের ৫নং খেয়াঘাট এলাকা দিয়েই বিদ্যমান নকশায় শীতলক্ষ্যা সেতুর বাস্তবায়ন দেখতে চান। ইতোপূর্বে তারা বিদ্যমান নকশায় শীতলক্ষ্যা সেতুর বাস্তবায়ন দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন।
সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি এ বিষয়ে বলেন, এই গোপন সমঝোতা কোনো ভাবেই কার্যকর হতে দেয়া যাবেনা। তারা কারো নগরবাসীর কারো সাথে কোনো ধরনের আলোচনা না করে এই সমঝোতা করেছে। সোহরাওয়ার্দী সড়কের পাশে নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি ও টানবাজারের মতো বাণিজ্যিক এলাকা। সড়ক ছোট হলে এখানে যানজট আরো বৃদ্ধি পাবে এমনকি পুরো সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তাই আমরা এই গোপন সমঝোতা দ্রুত বাতিলের দাবি করছি।
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, সোহরাওয়ার্দী সড়ক এমনিতেই ছোট। এখান থেকে ১২ ফুট বা ১৪ ফুট চলে গেলে তো পুরো রাস্তাই ১ লেন হয়ে যাবে। সড়কটির পাশে দুইটি বড় বাণিজ্যিক এলাকা। তাই বোঝাই যায় যে রাস্তাটা ছোট হলে কি হতে পারে। আমরা চাই এটার একটা সমাধান হোক।
চলতি বছরের ১ জুলাই নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পারে শহর ও বন্দরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষিত সংযোগ সেতু "কদমরসুল সেতু" বিদ্যমান নকশা অনুযায়ী সেতুর কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছে বন্দরবাসী। দুপুরে ৫নং ঘাটস্থ শীতলক্ষ্যা সেতু বাস্তবায়ন নাগরিক আন্দোলনের ব্যানারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এসময় নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন।
স্মারকলিপি প্রদানকালে নেতৃবৃন্দ বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বন্দর থানা প্রায়ই ৬ লক্ষ জনসংখ্যা ও প্রায় ৫ লক্ষ ভোটার সংবলিত এলাকা। এই এলাকার বন্দরের মানুষের প্রাণের দাবি সদর বন্দরের সংযোগ স্থল বন্দর ঘাট সংলগ্ন বা ৫ নং ঘাট দিয়ে একটি শীতলক্ষ্যা সেতু। এই একটি সেতুর অভাবে বন্দরের মানুষ যুগের পর যুগ ঝর বৃষ্টি বাদল সহ নানা প্রতিক‚লতার মধ্যে শহরের নাগরিক সেবার জন্য নদী পারাপার হতে হচ্ছে। বিগত সকল সরকারে প্রতিশ্রæতি থাকলেও স্বাধীনতার ৫৪ বছর হলেও অদ্যাবধি বন্দরের মানুষের কল্যাণে সদর বন্দর সংযোগের সেতুটি বাস্তবায়ন হয়নি। স¤প্রতি ৫নং ঘাট দিয়ে একটি সেতু নির্মাণের সকল প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করা কিছু লোক সহ বন্দরের মানুষের আকাঙ্ক্ষার সাথে কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই এমন কিছু লোক শুধু মাত্র নারায়ণগঞ্জ শহর যানজট বৃদ্ধি পাওয়াব ভুয়া অজুহাতে উক্ত সেতুর কাজ বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিরোধিতা চালাচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি অপতৎপরতা। তাদের চাহিদার সাথে বন্দরের বিশাল জনপথের মানুষের আকাঙ্ক্ষার কোনো মিল নেই। রাস্তা অবৈধ দখল করে ব্যবসা করার লক্ষ্যে এবং বন্দরকে অবহেলিত করে রাখাই তাদের প্রধান লক্ষ ও উদ্দেশ্য। শহরের ভিতরে অটো, সিএনজি, ট্রাক বাসস্ট্যান্ড দিয়ে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে রাখা হয়। বিকল্প চিন্তা না করে যানজটের মতো সমাধানযোগ্য তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে ৫ নং ঘাট দিয়ে (কদম রসুল সেতু) সেতুর কাজ বন্ধ করার পাঁয়তারা বন্দরের মানুষের দাবি ও অধিকারের সাথে বিরুদ্ধাচরণ মাত্র।
তৎকালে নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, কদমরসুল সেতুর টেন্ডার ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। তবে জমি নিয়ে কিছু জটিলতা থাকায় কাজ শুরু হয়নি। আশা করছি দ্রুত জটিলতা নিরসন করে বিদ্যমান নকশা অনুযায়ী সেতুর কাজ শুরু হবে।
আপনার মতামত লিখুন :