News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ষড়যন্ত্র থামায়নি শামীম ওসমান


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৫, ১০:৫৪ পিএম ষড়যন্ত্র থামায়নি শামীম ওসমান

আওয়ামী লীগের দাপুটে অবস্থান ফিরিয়ে আনতে মাঠ নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে পলাতক শামীম ওসমান। তার বিশ্বস্ত অনুসারি মহানগর আওয়ামীলীগ ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের নেতৃত্বে ফতুল্লায় মাঠ পর্যায়ে অনুসারিদের সক্রিয় করা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী সমর্থনে ঝটিকা মিছিল বের করার চেষ্টাকালে ৭জন গ্রেপ্তার হয়। তার ক্যাশিয়ার আবুল হোসেন সহ ৭জন যুবলীগের কর্মী গ্রেপ্তারে মীর সোহেলের সামাজ্যে ধ্বস নেমেছে। ছাত্র-জনতা আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া আজমত উল্লাহ অনুসারীদের এবার মাঠে নামার নির্দেশনা এসেছে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার বিদায়ের আগে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে শাহ নিজাম ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে মীর সোহেল আলী তোড়জোড় ছিলো আলোচিত। তখন মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সাজনু চেয়ারম্যান পদে শক্ত অবস্থান হওয়ায় উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করে দেন প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান। তার ইন্ধনে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের তিনজন সমর্থক মামলায় ঠুকে দেয়ায় ঘোষিত নির্বাচন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

বিগত টানা আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাকালে বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক অসহায় মানুষের জমি দখল করায় মীর সোহেল আলী ও তার সহযোগী তৈয়্যব আলী ও আজমত আলীর বিচার দাবি করেছেন ফতুল্লার মানুষ। ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান শাহ নিজাম। এরপর ২৫ নভেম্বর দেশত্যাগ করেন মীর সোহেল আলী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিদেশ যাবার ছবি ভাইরাল হয়।

গত বছর ৮ অক্টোবর ঢাকা ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার হন আজমতউল্লাহ আজমত। তিনি এরই মধ্যে জামিনে মুক্ত হয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এবার তাকেই সক্রিয় হওয়ার জন্য শামীম ওসমান তার অনুসারিদের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছেন। আজমত উল্লাহ বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার একাধিক মামলা সহ জায়গা জমি ও সন্ত্রাসের মামলা রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল ওসমান পরিবারের সদস্যরা। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে গুম, খুন, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কারণে পেয়েছেন ‘গডফাদার’ তকমা। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওসমান পরিবারের লোকজন পালিয়ে গেলেও তাদের অনুসারীরা শহরে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

গত ২১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার শাহ নিজামের নম পার্কে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের এক কর্মীসহ সাতজনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে ফতুল্লা থানার লালপুরের পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা আবুল পেশায় একজন ঠিকাদার এবং নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি ছাত্রহত্যায় অভিযুক্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেলের সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

এক সময় ১৯৯১ সালে বিএনপি নির্বাচিত সরকার হলে ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের আহবায়ক নির্বাচিত হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন মীর সোহেল। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ফতুল্লা থেকে বাস যোগে মিছিল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ডিআইটিতে বিএনপির এক সমাবেশে যাওয়ার পথে চাষাঢ়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মীর সোহেলকে বাস থেকে নামিয়ে মারধর করে। এ ঘটনার কিছুদিন পর মীর সোহেলের ছোট বোনজামাতা টিপু সুলতানের মধ্যস্থতায় ফতুল্লার ডিআইটি মাঠে এক জনসভায় শামীম ওসমানের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সুবিধা বুঝে তৎকালীন সাংসদ কবরীর বলয়ে চলে যান মীর সোহেল। তার বাবা মীর মোজাম্মেল আলী নিজে সাংসদ কবরীর হাতে মীর সোহেলকে তুলে দেন। সাংসদ কবরীর বলয়ে চলে যাওয়ার পর ফতুল্লার দাপাঘাট এলাকার অবস্থিত কেরানীগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা রশিদ ও কাশেমের ঘাট এবং দোকান দখল করে নেয়। এ ঘটনায় মীর সোহেল ফতুল্লা থানা যুলীগের সভাপতি পদ থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। ২০১৪ সালে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের আশির্বাদে তিনি নিজেই এখন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা বনে যান। দীর্ঘদিনে সুনাম অর্জন করা দল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া হুশিয়ারির পরেও নারায়ণগঞ্জে মীর সোহেলের মত নেতারা কিভাবে জেলা ও থানার ভাইটাল পদ পায় এমন প্রশ্ন এখন তৃণমূলসহ সাধারণ মানুষের মুখে।

মুন্সিগঞ্জ থেকে ফতুল্লায় আসার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ে মীর সোহেলের বাবা মীর মোজাম্মেল আলী গ্রাম সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় থেকেই মীর সোহেল তার ছোট ভাই ফয়সাল, ফুফাতো ভাই হারুন অর রশিদ আরিফ ওরফে বাঘা আরিফ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সরকারি দলের সাইনবোর্ড ও ক্ষমতার দাপটে মীর সোহেল এখন ফতুল্লার অঘোষিত নিয়ন্ত্রক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ফতুল্লা মডেল থানার পাশে একটি অফিস তৈরি করে সেখানে বসেই সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি।

Islam's Group