News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকারি অনুদান নিয়ে শ্বাশুড়ি-পুত্রবধূর টানাপোড়েন


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৫, ১০:১২ পিএম সরকারি অনুদান নিয়ে শ্বাশুড়ি-পুত্রবধূর টানাপোড়েন

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কলাগাছিয়ার বাসিন্দা ও জুলাই গনঅভ্যুত্থানে শহীদ আরমান মোল্লার পরিবারে অনুদান প্রাপ্তি নিয়ে দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েছে আরমান মোল্লার দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার মা। অনুদান নিয়ে উভয়ের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।  পারিবারিক বিরোধের কারনে এই জটিলতা তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।

স¤প্রতি আরমান মোল্লার পরিবারের অনুদান প্রাপ্তি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেখানে আরমান মোল্লার স্ত্রী সালমা আক্তার দাবি করেন তিনি কোন সরকারি সহায়তা পাননি। একই সাথে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন সরকারি অনুদান পাওয়ার পর একটি টাকা তাকে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় এমনটাই দাবি করেন। যে কারনে তিনি তার ছেলে মেয়েদের এতিমখানায় দিয়েছেন বলে জানান।

তবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন সালমা আক্তার সাক্ষরিত পাঁচ লাখ টাকার চেক বুঝে পাওয়ার তথ্য প্রকাশ করে। তথ্য প্রকাশের পর আংশিক টাকা প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেন আরমান মোল্লার স্ত্রী সালমা আক্তার।

টাকা প্রাপ্তির বিষয়ে বলেন, আমার শ্বশুর জীবিত থাকাকালীন সময়ে একদিন আমাকে ডেকে বললো আমাকে একজায়গায় সাক্ষর দিতে হবে। আমি তার কথামত গিয়ে সাক্ষর দিয়ে আসি। আমি পড়াশোনা তেমন জানিনা, ওইটা টাকার চেক ছিলো নাকি অন্যকিছু তা আমার জানা ছিলো না। পরে আমাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে দেড়লাখ টাকা দেয়। এটা যে সরকারি অনুদানের টাকা সেটা আমি জানতাম না।'

সালমা আরও জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে তাকে ২ লাখ টাকা প্রদান করেছে। তবে জেলা পরিষদ থেকে যেই টাকা প্রদান করা হয়েছে এই বিষয়টি তিনি জানতেন না। এই টাকা তার শ্বাশুড়ি গ্রহণ করেছে।'

সালমা আক্তার বলেন, 'সরকারিভাবে মোট ৭ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে এসেছে। ৫ লাখ টাকা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আর ২ লাখ টাকা জেলা পরিষদ থেকে। কিন্তু আমি পেয়েছি মাত্র দেড়লাখ টাকা। সরকার তো অনুদান দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমি পুরো টাকা হাতে পাইনি। তাছাড়া জামায়াত যে ২ লাখ টাকা দিয়েছিলো সেইখান থেকেও ১ লাখ টাকা শ্বশুরবাড়ীর লোকজনকে দিয়েছি।'

এমন অবস্থায় তার পারিবারিক খরচ কে বহন করেন জানতে চাইলে সালমা বলেন, 'আমার বাবা দিনমজুর। তার একার আয়ের উপরেই আমরা নির্ভরশীল। যেই টাকা পেয়েছি তার অধিকাংশই খরচ হয়ে গেছে। আমার স্বামীর কয়েক জায়গায় ঋণ ছিলো, সেগুলো পরিশোধ করেছি। বর্তমানে ৫০ হাজার টাকার মত আছে। আমার কোমড়ের হাড় ক্ষয় হয়েছে। বাবা খাওয়ায় পরায়, কিন্তু তার কাছে তো ঔষধের টাকা খরচ চাইতে পারিনা। এখান থেকেই প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার টাকা ঔষধের পেছনে খরচ করছি।

সালমা আক্তারের শ্বাশুড়ি জোবেদা বেগম বলেন, 'আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ থেকে ২ লাখ টাকা পেয়েছি। কিন্তু এর আগে যত টাকা আসছে সব সালমা পেয়েছে। আমরা কোন টাকা পাইনি।' তবে সালমা আক্তারকে ৫ লাখ টাকা চেকের মধ্যে দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়েছে এমন দাবীর প্রসঙ্গে বলেন, 'আমরা ওইখান থেকে কোন টাকা আমরা নেইনি। সালমা মিথ্যা কথা বলছে।'

সালমা আক্তারের তিন ছেলেমেয়ে। এর মধ্যে দুজনকে এতিমখানায় দিয়েছেন বলে দাবী করেন তিনি। যোগাযোগ করে জানা যায় তার ছেলে রাফি (৭) নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা এলাকার বসন্তপুর হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করেন।

বসন্তপুর মাদরাসার শিক্ষক বায়েজীদ বলেন, 'এখানে মাদ্রাসার পাশাপাশি এতিমখানা পরিচালিত হয়। এতিমদের কাছ থেকে কোন খরচ নেওয়া হয় না। আমাদের এখানে রাফি পড়াশোনা করে এবং তার বিনামূল্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই করা হয়েছে।'

সালমা আক্তারের মেয়ে মাহি (১০)আগে থেকেই নরসিংদীর জামিয়া দারুল তাওফিক সালাফিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করতো। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজিদ শেখ বলেন, 'মাহি আগে টাকা দিয়ে এখানে পড়তো। এখন তার কোন টাকা দিতে হয় না। মাহি মাদরাসার হিফজখানাতে পড়ে। তার থাকা খাওয়া সব ফ্রি। মূলত এতিমদের সবকিছু ফ্রি। আমাদের মাদরাসায় প্রায় সাড়ে ৫ শ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন এতিমকে আমরা ফ্রি পড়িয়ে থাকি।'

আরমান মোল্লার পরিবারকে সহায়তা করতে কাজ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলার আহবায়ক নীরব রায়হান। তিনি বলেন, 'জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লক্ষ টাকা সালমা বেগম গ্রহণ করেছিলেন এবং তার শ্বশুর সেখানে উপস্থিত ছিলো। সমস্যা হচ্ছে এই পরিবার তিন ভাগে বিভক্ত। আরমান মোল্লা দুটি বিয়ে করেছেন। এখানে টাকাটা সম্ভবত বন্টন হয়েছে। সালমা ঠিক কত টাকা পেয়েছেন এটা তার শ্বশুর জীবিত থাকলে ঠিকভাবে জানা যেত। এখন উনার শ্বাশুড়ি ঠিকভাবে বলতে পারছেন না। এরপরে ১০ লাখ টাকার যে সঞ্চয়পত্র সেটাও সালমা আক্তারের নামেই হয়েছে। তবে এটা এখনও ডিসি অফিস পর্যন্ত পৌছায়নি, এটা প্রক্রিয়াধীন আছে।'

এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি তারা ২ লাখ টাকা সালমা আক্তারকে দিয়েছে। আমি তাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছি আপনি টাকা পেয়েছেন ? সালমা আক্তার গতকাল (মঙ্গলবার) রাত পর্যন্ত আমাকে বলেছে সে কোন টাকা পায়নি। একদম ১ টাকাও পায়নি এই কথাটা বার বার বলেছে। বুধবার সকালে যখন ফোন দিলাম তখন সে স্বীকার করে বলে যে হ্যা সে টাকা পেয়েছে।

এভাবে তথ্য লুকোচুরির কারণ কি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে নীরব রায়হান বলেন, 'এখানে পারিবারিক বিরোধটা মূল বিষয় হিসেবে সামনে এসেছে। আমাকে একবার বলেছিলো তাকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে জানলাম এমন কিছুই হয়নি। আরেক মাধ্যমে জানলাম সালমা আক্তার তার বাবার বাড়িকে বেশি সুবিধা দিতে চাচ্ছে।'

Islam's Group