সাড়ে তিন বছর পর নারায়ণগঞ্জে ফিরেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের এজেন্ট হওয়ার অভিযোগে তাকে ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়। এর দুই সপ্তাহে ব্যবধানে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকা চলে যান।
একাধিক নির্যাতনের শিকার এটিএম কামাল দেশে ফিরে পাইকপাড়া কবরস্থানে রফিকুল ইসলাম রফিক (কমিশনার) কবর জিয়ারত করেছেন। মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব রফিক কমিশনার ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো বৃহস্পতিবার।
বিগত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে বিএনপি সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব নিয়ে রাজপথে থাকায় কারণে পুলিশী নির্যাতন, হয়রানি সহ অর্ধ শতাধিক মামলা আসামী হয়েছেন তিনি। একাধিক বার দীর্ঘ সময়ে রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। এমনকি এটিএম কামালকে বাড়িতে না পাওয়া জের ধরে একমাত্র ছেলেকে আটক করে থানা নিয়ে গিয়েছিলো পুলিশ।
এটিএম কামাল নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য সফল রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও মরহুম আরাফাত রহমান কোকো’র মুক্তির দাবিতে টানা ১২দিন অনশন, রাজউকের গ্রাস থেকে নারায়ণগঞ্জ ও ফতুল্লার জমি রক্ষার দাবীতে অনশন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঢাকার মুক্তাঙ্গন থেকে পায়ে হেঁটে (সাড়ে তিনশত কিলোমিটার) সিলেট জকিগঞ্জের অমলসিদ (ভারত সীমান্ত) সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মোহনা ত্রিগঙ্গা পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এবং খুনীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়ার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অনশন, সুন্দরবন বাঁচাও-বাংলাদেশ বাঁচাও রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নাও এই স্লোগানে রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ থেকে (৬ দিনে ২২৫ কিলোটিমার) পথ হেঁটে রামপাল ফয়লাহাট পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর এটিএম কামাল কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনে নামেন। তার যুক্তি সরকার যে কোন সময় যে কোন বিরোধী দলীয় নেতা বা কর্মীকে গুম করে দিতে পারে। সুতরাং গুম হওয়ার জন্য কাফনের কাপড় পরে তৈরি থাকাই শ্রেয়। তার এই কাফনের কাপড় পরিধান নেতাকর্মীদের আন্দোলনের নতুন পথ দেখায়। মানুষের বিভিন্ন দাবী নিয়ে দল-মত নির্বিশেষে নেমেছেন রাজপথে। এটিএম কামাল স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর সবুজে ঘেরা পরিবেশ দূষণমুক্ত শীতলক্ষ্যা, মেঘনা, ধলেশ্বরি ও বুড়িগঙ্গাবেষ্টিত নারায়ণগঞ্জের। যেখানে থাকবে না মাদক, থাকবে না সন্ত্রাস, থাকবে না কোন নোংরা রাজনীতি। সন্ত্রাসের জনপদ ও ভয়াল মুত্যুর উপত্যকার কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে নারায়ণগঞ্জবাসী। অপহরন, গুম ও নৃশংস হত্যাকান্ডের স্বীকার হবে না মানুষ, থাকবে স্বাভাবিক মৃতুর গ্যারান্টি। আবালবৃদ্ধবণিতার চিত্ত বিনোদনের জন্য থাকবে বিশাল বিশাল উদ্যান ও শিশুপার্ক। থাকবে সকল নাগরিক সুবিধা, যানজটমুক্ত, পরিবেশ দূষণমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ হবে দেশবাসীর কছে একটি মডেল। থাকবে মেডিকেল কলেজ, থাকবে ছিন্নমূল শিশু ও হকারদের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প ও ভাসমান বস্তিবাসী ও নিম্নবিত্তদের জন্য স্থায়ী ঠিকানা। পাড়ায় পাড়ায় হবে পাঠাগার ও কমিউনিটি সাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। আর থাকবে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি-শুধু পরিতৃপ্তির হাসি।
এটিএম কামাল রাজনৈতিক অঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশবাদী মানবাধিকার সংগঠন নির্ভীক এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এছাড়াও তিনি ঐতিহ্যবাহী মহসিন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটি, জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য, জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক ও ফুটবল সম্পাদক এবং রহমতউল্লাহ মুসলিম ইনিস্টিটিউটের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দুবাইতে থাকাকালীন তিনি দুবাই বাংলাদেশী বিজনেস ম্যানস্ ফোরামের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা’র) জাতীয় কমিটির সদস্য, নারায়ণগঞ্জ নগর উন্নয়ন কমিটি, সোনারগাঁ নাগরিক কমিটি ও নারায়ণগঞ্জ ফুটবল একাডেমীর সভাপতি এবং নির্ভীকের মতো পরিবেশবান্ধব বহুল আলোচিত নাগরিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৫৮ সনের ৭ মে ঐতিহাসিক জনপদ প্রাচীন বাংলার রাজধানী সবুজে ঘেরা নদী বেষ্টিত সোনারগাঁ এর বারদির মসলন্দপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে এটিএম কামাল এর জন্ম। বাবা মরহুম তাহের মাস্টার ও মা নারী নেত্রী শাহানা খানম চৌধুরীর জৌষ্ঠ পুত্র এটিএম কামাল। নারায়ণগঞ্জের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি কখনো আপোষ করেননি। অন্যায় আর সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছেন নি:শঙ্ক চিত্তে। কখনও রাজপথে, কখনও শহীদ মিনারে, প্রেস ক্লাব চত্ত¡রে, মিছিলে, সমাবেশে, অনশনে মাটি ও মানুষের দাবি আদায়ের সংগ্রামে অবিচল তিনি। দীর্ঘ কারাবাস, অসংখ্য মামলা ও নির্যাতনের পরেও জনগনের ন্যায্য দাবি আদায়ে থামতে না জানা এক অকুতোভয় সেনানির নাম এটিএম কামাল। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সোনারাগাঁয়ের সন্মানদি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্পে যুদ্ধকালীন থানা কমান্ডার সুলতান আহম্মেদ মোল্লার (বাদশাহ্ কমান্ডার) অধীনে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন কামাল। এরপর কমান্ডার মমিন ভূইয়া ফুলু গ্রুপের একজন সদস্য হিসেবে মাত্র ১৩ বছর বয়সে কিশোর এটিএম কামাল স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন।
আপনার মতামত লিখুন :