নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত আলোচিত যুবদল কর্মী শাওন প্রধানের ভাই ফরহাদ প্রধানকে জুলাই আন্দোলনে নিহত মাবরুর হুসাইন হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। ফরহাদ প্রধান নিজেও যুবদলের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত। মামলার ৪ মাস পর আসামী তালিকায় নিজের নাম দেখা বিষ্মিত হয়েছে ফরহাদ ও তার পরিবার। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই পরিকল্পিতভাবে মামলায় আসামী করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরহাদ।
চলতি বছরের ২ ফেব্রæয়ারি আদালতের নির্দেশে ফতুল্লা মডেল থানায় মাবরুর হুসাইন হত্যা মামলা গ্রহণ করে পুলিশ। মামলার বাদী হয় ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী পরিচয়দানকারী কালাম (৩৯) নামের এক ব্যক্তি। মামলা দায়েরের পর থেকেই বাদীর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। মামলায় মুঠোফোন নাম্বার উল্লেখ করলেও তা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
মামলার অভিযোগে বাদী কালাম উল্লেখ করেন, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আমি ও আমার প্রতিবেশী ছোটভাই মাবরুর হুসাইন আন্দোলনে অংশ নেই। গত ৪ আগস্ট সাইনবোর্ড এলাকায় উল্লেখিত আসামীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণ করে। এসময় মাবরুর হুসাইন গুরুতর জখম হয় এবং তাকে আসামীরা তুলে নিয়ে যায়। পরে ৫ আগস্ট তার লাশ যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচে পাওয়া যায়।
একই ঘটনায় বাদী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়ি ফিরে আসেন। মাবরুর হুসাইনের কোন পরিবারের অভিভাবক না থাকায় বাদী মামলা দায়ের করতে গেলে থানা পুলিশ ঘুরাতে থাকে। এমন অবস্থায় বাদী বিচার চেয়ে আদালতে দ্বারস্থ হয়।
আদালতে আবেদন করার পর আদালত পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে পুলিশ তদন্ত শেষে মামলা গ্রহণের সুপারিশ করলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বিথী মামলাটি ফতুল্লা থানায় দায়ের করার আদেশ দেন। মামলায় আসামী করা হয় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের, শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান সহ একাধিক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে।
মামলার ১৭ নম্বর তালিকায় আসামী করা হয়েছে যুবদল কর্মী শাওন প্রধানের ভাই ফরহাদ প্রধান। ফরহাদ নিজেও যুবদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত। ২০২৩ সালে ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। ভাই হারাবার শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা। এর মধ্যে জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েও হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় বিষ্মিত হয়েছেন তিনি।
ফরহাদ প্রধান বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। আমার ভাই হত্যার পর আওয়ামী লীগ সরকার অনেক প্রলোভন দেখিয়েছে, আমরা সব প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির রাজনীতি করেছি। আমার ভাই শাওন প্রধানকে আওয়ামী লীগ বানাতে চেয়েছে, আমরা জোর গলায় বলেছি আমার ভাই বিএনপির রাজনীতি করে। সেই চাপের মধ্যে দিন পাড় করে আসার পর এখন আমাকে মামলার আসামী করা হয়েছে! এর চাইতে হতাশার কিছু নেই।
কার ইন্ধনে এমন হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার জানা নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এটা করতে পারে। মামলার বাদীকে আমি খুজে পাচ্ছি না।’
মামলার বাদী কালামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মাবরুর হুসাইনের বাবা আব্দুল হাই বলেন, ‘কালাম তো প্রতারক। সে আমার ছেলে হত্যার জন্য মামলা করেছে। আমরা মামলা করতে চাইনি, সে মামলা করেছে বাণিজ্য করার জন্য। পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ জানিয়েছে আমাদের মামলা করতে। চলতি মাসে আমরা মামলা দায়ের করেছি। এই কালামের কোন খোঁজ পাচ্ছি না। তার নাম্বারও বন্ধ। সে মূলত হয়রানি আর বাণিজ্য করতে এই মামলা করেছে। তার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করা প্রয়োজন।
২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকা থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র্যালি বের করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। শহরের দুই নং রেলগেট এলাকায় র্যালিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এসময় সংঘর্ষে চায়নিজ রাইফেলের গুলিতে যুবদলের নেতা শাওন নিহত হন।
২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর নিহত শাওনের বড় ভাই মো. মিলন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ, পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল, সাবেক পাঁচ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, গোলাম দস্তগীর গাজী, নজরুল ইসলাম বাবু, লিয়াকত হোসেন খোকা এবং ও ডিবির সাবেক এসআই কনকসহ ৫২ জনকে।
আপনার মতামত লিখুন :