নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এ যেন এক নতুন পালা। একসময় যারা একে অপরকে আক্রমণের ভাষায় উচ্চারণ করত, এখন তারাই এখন এক প্ল্যাটফর্মে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গর্জনে গত বছরের জুলাইয়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তিগুলো যেন এই ঐক্যের সেতুবন্ধন হয়ে উঠেছে।
২০২৪ সালের সেই রক্তাক্ত জুলাই এখনো নারায়ণগঞ্জের বুক জুড়ে গভীর ক্ষতের মতো অবস্থান করছে। তারপর থেকেই শহরজুড়ে রাজনীতির হাওয়ায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছিল, কিন্তু এই বছরের জুলাইয়ের সূচনায় তা যেন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। গত ৫ই আগস্টের পর থেকেই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপি এ তিনটি প্রধান দলই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সক্রিয়। তবে জাতীয় রাজনীতি ও তৃণমূল সাংগঠনিক স্বার্থে এই দলগুলোর মধ্যে নানা সময় বৈরিতা দেখা যায়। তবে জুলাই মাস আসতেই ফের সবাই যেনো ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই গত বছরের আন্দোলনের নানা স্মৃতি শেয়ার করছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য, রাজনীতি মানে এখন কেবল ঝগড়া না, কেউ যদি শহরের স্বার্থে এক হয়, সেটা তো ভালোই। অন্তত এই ঐক্য আমাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যতের আশ্বাস দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই ঐক্য আপাতদৃষ্টিতে আবেগ নির্ভর হলেও, যদি তারা যৌথ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে, তবে তা আগামী নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। রক্তক্ষরণের মধ্য দিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আজ নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি বদলে যাচ্ছে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির এই ঐক্য সাময়িক আবেগ নাকি রাজনৈতিক ভবিষ্যতের রূপরেখা তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত, শহরবাসী দেখছে এক ভিন্ন ছবি, যেখানে প্রতিহিংসা নয়, বরং শহরের স্বার্থে উঠে আসছে সম্মিলনের গল্প।
এদিকে এখনো পর্যন্ত জাতীয় কোনো ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জের কোনো নেতাকর্মীকে অন্য দলের কাউকে উদ্দেশ্য করে কোনো তীর্যক মন্তব্য করতে দেখা যায় নি। কোনো দ্বন্ধে লিপ্ত হচ্ছেন না। বরং এখনো তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একাট্টা রয়েছেন। সবার মধ্যে সৌহার্দ্যমূলক আচরণ দেখা গেছে। যে বিষয়টিতে ইতিবাচক হিসেবেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গত ২৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের পোস্টার লাগানোয় বিষয়ে প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিনের মিছিলে অধিকাংশ রাজনৈতিক সংগঠনের ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী একসঙ্গে ছিলেন। পরে তারা ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগকে কঠোর হুশিঁয়ারি দিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। এর আগে গত ২২ জানুয়ারি রাতের আঁধারে শহরের সরকারি তোলারাম কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ গেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটক এবং চাষাঢ়ার বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটানো হয় এসব পোস্টার। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তাঁর ছেলে অয়ন ওসমানের ছবি ছিল। এতে লেখা আছে শেখ হাসিনাতেই আস্থা, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। তবে কারা এই কাজ করেছেন তা সম্পর্কে এখনো জানা যায় নি। এ ঘটনায় প্রশাসনের উপর তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, প্রশাসনের দূর্বলতার কারণে তারা এই সাহস পেয়েছে। এদিকে ফেসবুকে এক ছাত্রলীগ ছবি প্রকাশ করে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের নেতা সোহানুর রহমান শুভ্রকে। তিনি এসব ছবি প্রকাশ করে লিখেন, ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা, নারায়ণগঞ্জ, এ শহর দেশরত্ন শেখ হাসিনার শহর। এ শহর জননেতা শামীম ওসমান, জনাব অয়ন ওসমানের শহর। জয় বাংলা।’
আপনার মতামত লিখুন :