নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বহিস্কাদেশ প্রত্যাহার নিয়ে প্রশ্নের ক্ষোভে তিনি বলেন, এটা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভালো জানেন। কিন্তু একটা কথা বলি বহিস্কার হওয়া সুবাদে এখনো সকলের কাছে আমি ‘এটিএম কামাল’। গত সাড়ে তিন বছরে যেসব রাজনীতি দেখেছি আমার নামের আগে পরে নতুন নাম সংযুক্ত করা হত। শুনলাম এক শিশু বাচ্চাও আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করেছে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। ওসমান পরিবার সদস্য নাকি আমি। এখন শুনি, ওই শিশু বাচ্চা বাবা নাকি শামীম ওসমানের প্রধান খলিফা ৩০০ কোটি টাকা টেন্ডার বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছেন। এগুলো এখন কেন্দ্রে কে বলবে, তাদের বিরুদ্ধে কে ব্যবস্থা নিবে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিকে খন্ডিত করে রাখা হয়েছে।
আক্ষেপে তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে যে বক্তব্যেগুলো দিয়েছি দেশে গত এক বছরে হয়েছে। দেখুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ-নির্বাচন চলাকালে ২০১৪ সালের ১৯ জুন বলেছিলাম, জিয়া পরিবার নিয়ে যারা কটূক্তি করে সেই অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াতে হবে। ১৯ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলম, দল ক্ষমতায় থাকলেও শামীম ওসমান সিংহ পুরুষ, ক্ষমতাচ্যুত হলে বিড়াল। এখন তো মানুষ বাস্তব চিত্র দেখতে পারছে। এগুলো বলার তখন কেউ ছিলো না। ৩০ আগষ্ট বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে বলেছিলাম, শেখ হাসিনার পতনের জন্য শামীম ওসমানই যথেষ্ট। গত বছর ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জে ছাত্র-জনতা উপর বর্বর হামলা ঘটনা সারা বিশে^ এখন শামীম ওসমানকে সন্ত্রাসী হিসেবে আবারো পরিচিতি লাভ করেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকের উপর হামলার মানববন্ধনে বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সন্ত্রাসী গডফাদারের দায়িত্ব নিয়েছেন। ১১ মাসেও হাসিনা দায়িত্ব নিতে পারেনি শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ৬ষ্ঠ কাউন্সিল (২০১৬ সালের ১৮ মার্চ) সফল করার প্রস্তুতি সভায় বলেছিলাম, বিএনপিকে যারা ধ্বংস করতে চেয়েছে তারা নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যাবে। দেখুন এখন আওয়ামীলীগের নামগন্ধ নেয় দেশের রাজনীতিতে। কারাগারে বন্দি থেকে জামিন পাওয়া পর আদালতপাড়ায় ২০১৭ সালের ৭ জুন বলেছিলাম, সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকুন। অবৈধ সরকারের পতন অনিবার্য। গত জুলাই-আগষ্ট এর প্রতিফলন হয়েছে। ২০১৮ সালে ৮ অক্টোবরে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলাম, গণবিস্ফোরণে আওয়ামী অপশক্তি ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশের ছাত্র-জনতা আওয়ামীলীগকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।
এটিএম কামাল বলেছেন, বিএনপি বহিস্কারদেশ উঠিয়ে নিলেও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি খন্ডিত রাজনীতিতে থাকতে চাই না। আমি চাইবো, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশনা দেওয়া মহানগর বিএনপি। শহীদ জিয়ার আদর্শে বিএনপি কোন নেতা অধিনস্ত হওয়া উচিত নয়।
দীর্ঘ সময় শহর, নগর ও মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিগত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে নির্যাতন, নিপীড়ন, অর্ধ শতাধিক মামলার আসামী, দীর্ঘ সময় কারাবন্দি শিকার হন তিনি। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে একাধিক কর্মসূচীতে সাহসী ভূমিকায় নারায়ণগঞ্জে নেতা-কর্মীদের আস্থাস্থল ছিলো এটিএম কামাল। ২০২২ সালে নাসিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রধান এজেন্ট হওয়ার কারণে বিএনপি তাকে বহিস্কার করেন। ওই ক্ষোভ তিনি অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকা পাড়ি জমান।
গত ৪ জুলাই পরিবার নিয়ে দেশে ফিরে আসলেও গত ৯ জুলাই এটিএম কামালকে শহরের পাইকপাড়া কবরস্থানে দেখা যায়। সহযোদ্ধা নগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রফিক কমিশনারেরর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কবর জিয়ারত করেন। এরপর দিন ১০ জুলাই তিনি সোনারগাঁয়ের বারদীর মছলন্দপুর কবরস্থানে বাবা প্রয়াত তাহের মাষ্টারের কবর জিয়ারত করেন। রাজনৈতিক বৈরী আবহাওয়া কারণে বাবা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি এটিএম কামাল।
আপনার মতামত লিখুন :