News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২

ডাকাত সন্ত্রাসীদের গলায় যুবদল নেতাদের ফুলের মালা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ১০:২০ পিএম ডাকাত সন্ত্রাসীদের গলায় যুবদল নেতাদের ফুলের মালা

একজন যুবদল নেতা নাম মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার। সম্প্রতি একটি ডাকাতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হন। পরে তিনি কারাগারেও যান। জামিনে মুক্তির পর তাঁকে স্বাগত জানাতে কারাফটকের সামনে ছুটে যান মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ। গলায় পড়িয়ে দেন ফুলের মালা। অপর দুইজন শাহআলম ও তানভীর। সম্পর্কে মামা ভাগিনা। হত্যা মামলায় কারাভোগ করে জামিনে বের হলে মহানগর যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফও তাদের গলায় পড়িয়ে দেন ফুলের মালা।

সাম্প্রতিক এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

যুবদল নেতা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি ডাকাতির মামলায় এক যুবদল নেতাসহ ১০ জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ১০ আগস্ট দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মমিনুুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার (৪৫), নুরুদ্দিন ওরফে বছির ওরফে বিশু (৫৪), সুমন মিয়া (৪১), মনির হোসেন ওরফে তল্লা মনির (৬৩), আবুল কালাম (৫৪), আসলাম (৫৪), মামুন (৪৯), বিল্লাল (৪৯), কানা ইসলাম (৪৯), মাসুম ওরফে নোয়াখাইল্লা মাসুম (৪৪)।

রায় ঘোষণার সময় যুবদল নেতা আনোয়ার, নুরুদ্দিন, সুমন, আসলাম ও মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান এপিপি ওমর ফারুক।

মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৩০ জুলাই দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এনায়েতনগর এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় পরদিন বাড়ির মালিক অ্যাডভোকেট মো. মফিজুল ইসলাম অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তাদের মধ্যে রায়ে দশজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পরে তদন্ত শেষে পুলিশ ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত ১০ জনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

মামা ভাগিনা ২০২৪ সালের ২৫ জুন রাতে নগরীর মন্ডলপাড়া এলাকায় অবস্থিত মা হোটেল এন্ড রেঁস্তোরার সামনে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় নাসির শেখ নামে এক তরুণকে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা হলে এক বছর পর প্রধান আসামী শাহ আলমকে জিমখানা কলোনী থেকে আটক করে র‌্যাব-১১। এ হত্যাকান্ডের রেশ কাটতে না কাটতে গত ১৪ মে রাতে একই এলাকায় (নারায়ণগঞ্জ সিটি পার্কের সামনে) প্রকাশ্যে খুন করা হয় শাহাদাৎ নামে এক কিশোরগ্যাং নেতাকে। গত ১৯ জুন রাতে শাহদাৎ হত্যা মামলার প্রধান আসামী তানভীরকে জিমখানা কলোনী থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ১১। 

দীর্ঘদিন কারাভোগ করে সম্প্রতি জামিনে বের হয় শাহ আলম ও তানভীর। তারা দুজন সম্পর্কে মামা-ভাগিনা। জামিন পেয়েই মামা ভাগিনা দেখা করতে যান যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফের সাথে। শহরের টানবাজারের এসএম মালেহ রোডের পাশে রিভারভিউ শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় জোসেফের অফিস। সেখানে যাওয়ার পর হত্যা, মাদক, চাঁদাবাজী ও ছিনতাই মামলার আসামী শাহ আলম ও তানভীরের গলায় হলুুদ গাঁদা ফুলের মালা পড়িয়ে বরন করে নেন যুবদল নেতা জোসেফ। এক ছবিতে দেখা যায়, তানভীরের হাত শক্ত করে ধরে শাহ আলমকে বুকে টেনে নিচ্ছেন জোসেফ। 

গত ১৯ জুন রাতে গ্রেপ্তারের পর তানভীর সম্পর্কে র‌্যাব ১১ কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম জানান, গ্রেপ্তারকৃত তানভীর নগরীর একজন শীর্ষ মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন ধারায় ১২ টি মামলা আছে। গত ১৪ মে সিটি পার্কের সামনে শাহাদাৎ হত্যার সাথেও সে সম্পৃক্ত। সে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায়ও এর আগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়া শহরের অনেক ছিনতাই এবং চুরির ঘটনায়ও জড়িত। 

নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, নগরীর জিমখানা রেলওয়ে কলোনীতে ভয়ঙ্কর অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে সেখানকার অস্থায়ী বাসিন্দা প্রয়াত আলম চাঁনের ছেলে শাহ আলম এবং দৌহিত্র তানভীরের নেতৃত্বে। তানভীরের মা হাসি বেগম বর্তমানে জিমখানার সবচেয়ে বড় নারী মাদক বিক্রেতা। তাদের পরিবারের আরো অন্তত ৬ জন সদস্য কলোনীতে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন আগে তানভীরের এক মামার নামে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হলে তাকে গ্রেপ্তার করতে কলোনীতে যায় সদর থানা পুলিশের একটি দল। এ সময় তাদের গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি তিনজন পুলিশকে মেরে গুরুত্বর আহত করা হয়। 

এছাড়া, ৫ আগষ্টের পর যখন পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ ছিলো তখন টানবাজার, মন্ডলপাড়া, নিতাইগঞ্জের অনেক ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শাহ আলম ও তানভীর।

জানা যায়, ৭ আগষ্ট সন্ধ্যায় নয়ামাটি এলাকার আজাদ বিল্ডিংয়ে ৫ তলায় নিজের হোসিয়ারীতে অবস্থান করছিলেন টিংকু সাহা। তাকে ফোন করে নিচে আনেন শাহ আলম ও সোর্স রনির নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এ সময় ব্যবসায়ী টিংকু সাহার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে মারধর শুরু করেন। টিংকু সাহা চাঁদাবাজদের ১ লাখ টাকা দেয়ার কথা জানান। তবে এরপর তারা চলে গেলে স্ট্রোক করেন তিনি। তখন নয়ামাটির ব্যবসায়ীরা তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান এবং রোববার ভোরে তার মৃত্যু হয়। টিংকু সাহার পরিবারের এক সদস্য জানান, যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখনও ফোন করে চাঁদার জন্য হুমকি দেয়া হয়। তবে টিংকু সাহার পরিবার তখন এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করেন নি। কারণ ওই সময় থানার সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। বাংলাদেশর হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের নির্বাচনের আগে সমিতির বর্তমান সভাপতি বদিউজ্জামান নিজে টিংকু সাহার জন্য মামলা করবেন বলে ব্যবসায়ীদের আশ^াস দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হয়ে এখন তিনি সভাপতি হলেও এ বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাকে। 

Islam's Group