ইসদাইরের আলোচিত ইভন হত্যাকান্ডে কয়েকজন আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে। এলাকাতেও বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। কয়েক স্থানে লাগানো হয়েছে শাস্তি চেয়ে ব্যানার। অনেকেই এটা নিয়ে কথা বলতে নারাজ। স্থানীয়রা বলছেন, ছোট থেকেই নানাজনের আশ্রয় প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন ইভন।
ক’ মাস আগেও ইসদাইরে একই পরিবারের তিনজনকে মারধর করে ইভন। একজনের পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় মামলাও হয়েছিল। শফিকুল ও বাবু নামের এ তিন সহোদরের হাত পায়ের রগ কেটে দেওয়ার জের ধরে ইভনের সঙ্গে বিরোধ ছিল। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে ইসদাইরে ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামের সামনে ইভনকে রাস্তায় পান তারা। মটরসাইকেল থেকে নামিয়ে একের পর এক কুপিয়ে জখম করা হয়। লুটে পড়ে মাটিকে। প্রথমে খানপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত সাড়ে ১১টায় মারা যান।
ইভনের পরিচয়
এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানা যায়, ইসদাইরের সুগন্ধা গেইটের পাশে নিজেদের পাঁচতলা বাড়িতে নিজের পরিবারের সাথে থাকে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ইভন মেজো। ঠিকমত পড়ালেখা না করায় স্কুল জীবন থেকেই ঝড়ে পরে সে। ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখার থেকে বেশি ‘বড় ভাই ছোট ভাই’ নিয়ে মারপিট নিয়েই মেতে থাকতো ইভন। বাবা বাবুর কাছে এ নিয়ে বিচার দিলে সে এসব কাজে ছেলেকে আরো উৎসাহ দিতো বলেও অভিযোগ রয়েছে। এভাবেই ছোট ছোট অপরাধ থেকে কোনো বাধা না পেয়ে অপ্ররিরোধ্য হয়ে উঠতে থাকে সে।
কিশোর গ্যাং তৈরী
ইভানের কথামত যারা কাজ না করতো এলাকার সেই ছেলেকেই নির্যাতন করতো সে। আর যারা কাজ করতো তাদেরকে নিয়ে সে তাঁর বাসার ৪র্থ ও ৫ম তলায় নেশার আসর বসাতো। আর এভাবেই এলাকার ছেলেদেরকে তাঁর দিকে আকৃষ্ট করে সে বনে যায় এলাকার ‘বড় ভাই’। এলাকার উঠতি বয়সের ছেলেদের নিয়ে সে তৈরী করে নিজের গ্যাং। এই গ্যাংয়ের সদস্য এখন প্রায় ৩০ থেকে ৪০জন। নিজেদের পাঁচতলা বাড়ি থাকলেও সেই বাসার ২য় তলায় শুধু তাঁরাই থাকতো। মাঝে মাঝে না জেনে ভাড়াটে আসলেও অল্প দিনেই ইভনের নানা কর্মকাণ্ডের কারণে চলে যেত তাঁরা। যে কারণে অধিকাংশ সময় সেই বাসা ফাঁকা থাকতো। এই বাসার ৪র্থ তালায় এবং ৫ম তলায় নেশার আসর ও টর্চার সেল তৈরী করে ইভন। সেখানে ইভনের অবাধ্যদের উপর নির্যাতন চালাতো সে।
প্রথম বড় অপরাধ
ছোট বেলা থেকে মারপিট ছিল তাঁর নিত্য দিনের কাজ। কিছুদিন পর পরেই অন্যান্য গ্রুপের সাথে ধারালো অস্ত্র নিয়ে করতো ধাওয়া পালটা ধাওয়া। এভাবে কত যুবককে মেরে আহত করেছে তাঁর হিসাব গুনে শেষ করতে পারেন না এলাকাবসী। মূলত এই এলাকায় যত মারপিট সব ইভনকে কেন্দ্র করে বলে জানান এলাকাবাসী। ‘ছোট ভাই বড় ভাই’ কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে ফুটবলার রাসেলকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সে। সেই হত্যার বিচার না হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে আরো বেশি ভয় তৈরী হয়। এর পর থেকে আরো অপ্রতিরোধ্য হতে থাকে ইভন।
ব্যবসায়ের নামে নির্যাতন ও মাদক ব্যবসা
পড়ালেখা শেষ না করেই এলাকায় ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা শুরু করে সে। অভিযোগ রয়েছে ইভনের কারণে এলাকায় অন্য কোনো ব্রডব্যান্ড প্রতিষ্ঠান সংযোগ দিতে পারে না। সংযোগ দেওয়ার পর মারধর করে তার কেটে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে ইভনের বিরুদ্ধে। শুরুর দিকে ইভন শুধু ‘বড় ভাই ছোট ভাই’ নিয়ে এলাকায় মারপিট করলেও কোনো বাধা না পেয়ে একসময় ইয়াবা সহ সব ধরনের মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িয়ে পড়ে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও মাদক দুই ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকে সে।
সালামীর নামে চাঁদা আদায়
এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানা যায়, মাদকের ব্যবসা আর ইন্টারনেট ব্যবসার সাথে ঈদ সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময় এলাকার সব দোকান থেকে চাঁদা তুলে সে। আর এর সর্বনিম্ন পরিমান হয় ১হাজার টাকা। যদি কেউ এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও রাতের আধারে দোকান ভাঙচুর করে সে। আর বরাবরের মতই এসব কাজে সাহায্য করতো উঠতি বয়সী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
এলাকাবাসী জানান, প্রত্যেক ঈদে ও সবেবরাতের রাতে এলাকার সব দোকানে কার্ড দিয়ে আসতো। এলাকা সাজানো ও ঈদে ‘ডিজে পার্টি’ নাম করে আমাদের কাছে সালামী চাইতো। সেই টাকা দিয়ে নেশা করতো আর সাউন্ডবক্স ভাড়া করে এনে গানবাজনা করত। আর যে এসবে বাধা দিতো তাকেই অকথ্য ভাষায় গালাগালি আর মারপিট করতো।
আপনার মতামত লিখুন :