দিন যাওয়ার সাথে সাথে ঘনিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও নিজেদের জানান দিতে শুরু করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা শাহ আলমও নিজেকে জানান দিচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আগে থেকেই নিজেদের জানান দিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু শাহ আলম কিছুটা নিরব ছিলেন। তার অনুসারীরা সরব থাকলেও শাহ আলম প্রকাশ্য আসছিলেন না। বিভিন্ন সভা সমাবেশেও তার দেখা মিলছিলো না। তবে এবার নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তিনি প্রকাশ হতে শুরু করেছেন। সেই সাথে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন কার্যক্রমও পরিচালনা করে যাচ্ছেন। বিভিন্নজনের সাথে নির্বাচনী পরিকল্পনা করে যাচ্ছেন শাহ আলম। যিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন।
সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে। সেই সাথে অনেক সময় তারা আন্দোলন সংগ্রামেও অংশ নিতে পারতেন না। ব্যবসা বাণিজ্যেও নানাভাবেই বাধার শিকার হয়েছেন।
এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। এই অবস্থায় একদম খালি মাঠে রয়েছে বিএনপি। সেই সাথে সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারেও আলাপ আলোচনা শুরু হয়। যার ধারাবাহিকতকায় নারায়ণগঞ্জের বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও নিজেদের নানানভাবে জানান দিয়ে আসছিলেন।
তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আলোচনায় থাকা শাহ আলম অনেকটা নিরব ভূমিকায় ছিলেন। তার অনুসারীরা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এলাকায় বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে এসকল সভা সমাবেশে শাহ আলমের উপস্থিতি ছিলো না।
এদিকে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসন পুনর্বিন্যাসের ঘোষণা দিয়েছেন। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা। এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। স্বাধীনতার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা নিয়ে ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠন করা হয়। তবে পরের ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ ছিল শুধুমাত্র সোনারগাঁও নিয়ে।
সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা ও সদর থানার দুটি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এতে ফতুল্লা, এনায়েতনগর, বক্তাবলী, কাশীপুর, কুতুবপুর, গোগনগর ও আলীরটেক।
আর এই আসন পুনর্বিন্যাসের পর থেকেই শাহ আলম বেশ জোরেশোরে নিজেকে জানান দিতে শুরু করেছেন। সেই সাথে বিভিন্ন সভা সামবেশের মধ্য দিয়ে নিজেকে জানান দিয়ে যাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের সাথেও আগের থেকে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।
সবশেষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. শাহ আলমের উদ্যোগে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত দিনব্যাপী ফতুল্লা এনায়েতনগর এলাকার ইউনাইটেড ক্লাবে এই মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
আফিয়া জালাল ফাউন্ডেশন ও জান্নাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় এই মেডিকেল ক্যাম্পে ১৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। সেই সাথে বিনামূল্যে রিপোর্ট বিশ্লেষণ এবং ৫০% ছাড়ে সব ধরনের ডায়াগনস্টিক টেস্ট করা হয়।
মেডিকেল ক্যাম্পের চীফ কোঅর্ডিনেটর আরাফাত রহমান জিতু বলেন, এই উদ্যোগটি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা ও আয়োজন করছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জান্নাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং শাহ ফতেহ উল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহ আলম।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জাহিদ হাসান রোজেল বলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. শাহ আলম কিছুদিন পরপরই নারায়ণগঞ্জবাসীর কল্যাণে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। আজ বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন ৬করেছেন। আমরা তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ শাহ আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও নাটকীয়ভাবে শেষ মুহূর্তে এসে ২০-দলীয় জোটের উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী মনির হোসেন কাশেমীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিলো।
তার আগে, ২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বদ্বিতা করে মাত্র ২ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :