News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২

ওসমান দোসরকে বসিয়ে মাসুদকে ছবক টিপুর


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৯:৩৭ পিএম ওসমান দোসরকে বসিয়ে মাসুদকে ছবক টিপুর

গত ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেছেন শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদ। তার বিরুদ্ধে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু অভিযোগ তুলেছেন, মডেল মাসুদ বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের আগে ও পরে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে রাজনীতিতে নেমেছেন। স্বৈরাচারী দোসরদের মডেল মাসুদের পাশে দেখা যাচ্ছে। যারা ওসমান পরিবারের দোসর, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তারা মডেল মাসুদের পাশে।

আবু আল ইউসুফ খান টিপু যখন যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মডেল মাসুদকে এমন ছবক দিচ্ছিলেন ঠিক সেই মঞ্চে টিপুর ডান পাশেই বসা ছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যকরী সদস্য শিপন সরকার শিখন।

স্থানীয়দের মাঝে গুঞ্জন ও কথিত রয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মহানগর বিএনপির কতিপয় নেতাদের ৭০ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে আওয়ামীলীগ সমর্থিত হিন্দু সংগঠন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থেকে সেই সংগঠনের ব্যানারে বিএনপির নেতাদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিখন। সেই থেকে মহানগর বিএনপির বেশকটি কর্মসূচিতে শিপনকে দেখা যায়। আওয়ামীলীগ নেতাকে পাশে বসিয়ে মডেল মাসুদের সমালোচনা করেছেন টিপু। টিপুর বাম পাশেই বসা ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান।

জানাগেছে, ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে বন্দর ঢাকাশরী মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে ঢাকেশ^রী মন্দিরে মডেল মাসুদের কঠোর সমালোচনা কররে টিপু বলেন, রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া এখানে সমীচীন নয়, তারপরও বলতে চাই- নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে যারা নতুন এসেছেন, বিশেষ করে কয়েকজন শিল্পপতি, তারা যেন দলের গঠনতন্ত্র ও চেইন অব কমান্ড মেনে কাজ করেন। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগে যোগদান করেই আপনি দলের ব্যানার ব্যবহার করে পাল্টা কাজ করছেন। আপনার আশপাশে রয়েছেন ওসমান পরিবারের দোসররা, যারা দল থেকে বহিষ্কৃত। আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের কোনো ভূমিকা ছিল না, বরং তারা কর্মীদের ভয় দেখাতেন।

তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনি যদি চেইন অব কমান্ড ভেঙে দলকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেন, তবে বিগত বছরগুলোতে যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, তারা কিন্তু কোনোভাবেই ছাড় দেবেন না। আমরা তিল তিল করে এই দলকে দাঁড় করিয়েছি। আপনার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকানা যেমন আপনার, তেমনি বিএনপি আমাদের ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে গড়ে তোলা সংগঠন। একে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করার সাহস দেখাবেন না।

শেষে তিনি মডেল মাসুদকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, আপনি দলে এসেছেন, স্বাগত জানাই। তবে দলের আদর্শ, গঠনতন্ত্র ও নেতৃত্বকে অমান্য করে বিভক্তি তৈরি করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রস্তাব রাখবো। ওসমান পরিবারের দোসরদের পৃষ্ঠপোষকতা করে বিএনপিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না।

ভিন্নদিকে জানাগেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্য শিখন সরকার শিপনের জোরপূর্বক দখলে নেয়া দুটি দোকান পুন:দখল করিয়েছেন একজন বিএনপি নেতা। শিখন সরকার শিপন বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘ দশ বছর ধরে এই পদে বহাল রয়েছেন তিনি।

এর আগে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহার চেম্বার থেকে দৈনিক ৫’শ হাজার টাকা নিয়ে নিজের সংসার চালাতেন। বর্তমানে শিপন সরকার শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। উকিলপাড়ায় বিএনপির এক কর্মীর দুটি দোকান দখল করে হয়েছেন হোসিয়ারী ব্যবসায়ী।

মহানগর আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সদস্য পদেও নির্বাচিত হোন খোকন সাহার আশীর্বাদে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে চাল, ডাল গমসহ সরকারি ও দেশী বিদেশী অনুদান লোপাটের অভিযোগ পড়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের একটি মামলার আসামী হলেও তিনি আছেন বিএনপির একজন আইনজীবীর ছত্রছায়ায়। শিখন সরকার কোর্টপাড়ায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

সূত্রের খবর, ২০২২ সালে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে নির্বাচন করার দায়ে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রবিউল হোসেনের হাত ধরে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার সঙ্গে পরিচয় ঘটে শিখন সরকার শিপনের। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খোকন সাহার কাছ থেকে দৈনিক ৫’শ হাজার টাকা নিয়ে সংসার চালাতেন শিপন। ২০১৪ সালে জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদে অনেকটা জোর করেই শিপন সরকারকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন খোকন সাহা। তারপর থেকে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে শিখন সরকারের।

আওয়ামীলীগের প্রভাব দাপট দেখিয়ে উকিলপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী বিএনপির কর্মী শেখ নাসিরের দুটি দোকান জোরপূর্বক দখলে নেন শিখন সরকার শিপন। খোকন সাহা এই দোকান দুটি দখল করতে শিপন সরকারকে সহযোগীতা করেন। বৈশাখী ও অনুপম হোসিয়ারী নাম দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন শিপণ সরকার। এদিকে পূজা উৎযাপন পরিষদের নানা কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান শিপন সরকার। শেখ নাসির আদালতে মামলা করলেও খোকন সাহার কারনে পেরে ওঠতে পারেনি।

৫ আগস্টের পর হিন্দুসম্প্রদায়ের বিভিন্ন কর্মকান্ডে সাখাওয়াতের সম্পৃক্ততা দেখা যায়। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রতিটা মিটিংয়ে শিখন সরকারকে নিজের পাশ বসিয়েছেন সাখাওয়াত। গেল পুজা উদযাপনে সকল কিছুর দায়িত্ব শিখনের হাতে দিতে কাজ করেন সাখাওয়াত। কিন্তু যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে নিহত ও আহতের ঘটনায় মামলা হলেও প্রাথমিকভাবে শিখণকে রক্ষা করেছিলেন সাখাওয়াত। শেষতক তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। কিন্তু মামলা হলেও এখনো সাখাওয়াতের সঙ্গে শিখনের সখ্যতা দেখা যায়। নিয়মিত শিখন সরকার সাখাওয়াতের চেম্বারে আসা যাওয়া করেন।

অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়কে মাঠে নামিয়েছিলেন এই শিখন সরকার। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাংচুরের অভিযোগ তুলে গত ১০ আগস্ট হিন্দ্র সম্প্রদায়কে নিয়ে মাঠে নামেন শিখন সরকার। এ ছাড়াও ১১ আগস্ট হিন্দু বৈদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে হিন্দুদের নিয়ে চাষাড়া অবরোধ করেন শিখন সরকার। ১৩ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে হিন্দু বৈদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পুজা উৎযাপন পরিষদের ব্যানারে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে আন্দোলনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানবন্ধন করেন শিখন সরকার শিপন।

Islam's Group