News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২

প্রতিটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর মহামারি : জনপ্রতিনিধি না থাকার খেসারত


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম প্রতিটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর মহামারি : জনপ্রতিনিধি না থাকার খেসারত

এক বছরের বেশি সময় পার হয়েছে নাসিকের ২৭ টি ওয়ার্ডের পুরুষ ও নারী কাউন্সিলরদের অপসারণ করেছে সরকার। বর্তমানে তাদের ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছে ওয়ার্ড সচিবেরা। কিন্তু কাউন্সিলরদের পরিবর্ততে তারা নাগরীকদের কতটুকু সেবা দিতে পারছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এখন। বিশেষ করে বর্তমানে শহর ও বন্দরের ওয়ার্ডগুলোতে ডেঙ্গুর যেই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য কেউ কেউ কাউন্সিলর না থাকা ও সচিবদের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন। বলছেন, কাউন্সিলররা শুধু ওয়ার্ডে ছোট ছোট কাজ করেই বসে থাকতেন না। তারা চাইলে সিটি করপোরেশনে গিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে পরামর্শ দিয়ে কাজও আদায় করে আনতে পারতেন। যা এখন অন্যদের দিয়ে সম্ভব হচ্ছেনা।

নাসিকের ১৪ নং ওয়ার্ডের পানির ট্যাংকি এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার আলম বলেন, গত কয়েক মাস ধরে কোনো মশার ওষুধ দিতে দেখি নাই আমরা। কাউন্সিলর থাকলে তো ফোন দিয়া বলতাম ভাই ওষুধ দেন। তাদের কাছে অধিকার খাটাইয়া একটা কথা বললে তারা আমাদের কথা রাখতো। সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ না থাকলেও অনেক সময় নিজের পকেটের টাকা দিয়া করে দিতো। কারণ তাদের তো ঘুরেফিরে আমাদের কাছে আসতে হয়। কিন্তু এখন তো সেটাই নাই। আমরা কাদের কাছে অধিকার খাটাবো।

১৩ নং ওয়ার্ডের গলাচিপা এলাকা বাসিন্দা সনু দাস বলেন, খোরশেদ ভাই যখন আছিলো তখন তো কোনো কাজের কমতি রাখতো না। নিজে দাঁড়াইয়া থাইকা মশার ওষুধ দিতো। আর এখন তার অর্ধেকও হয়না। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। কত মানুষ মরতাছে কেউ দেখার নাই। সিটি করপোরেশনের অফিসাররা তো এই এলাকার না। কাউন্সিলর সাহেব যেমনে আমাগো আগলায়ে রাখতো সেটা তো তারা করবেনা।

নাসিকের বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সাথে কথা হলে তারা জানান, তাদের অনুপস্থিতি নাগরীকদের সেবা থেকে বঞ্চিত করছে। অভিজ্ঞতা না থাকায় সচিবরা ওয়ার্ড পরিচালনা করতে পারছেনা। যখন কাউন্সিলর ছিলো তখন জুন জুলাই মাসেই অনেক ওয়ার্ডের এডিস মশার লার্ভা কমানো জন্য ওষুধ ছিটানো হতো। কিন্তু এবার সেটি হয়নি। যার কারণে আগষ্ট সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তারা দ্রুত তাদের পূনর্বাসনের জন্যও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ শহরের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি নিয়ে নাসিকের ১৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, সারা নারায়ণগঞ্জে বিশেষ কর্মসূচী নিতে হবে ডেঙ্গুর জন্য। সিটি করপোরেশন অথবা জেলা প্রশাসনের এই মুহূর্তে একটা ক্র্যাশ প্রোগাম নিতে হবে। এটা না হলে সামনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। এটা করোনার মতোই ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে। একটা ওয়ার্ডে যতটুকু ওষুধ লাগে তা সিটি করপোরেশন কিংবা সরকার দিতে পারছেনা। তারপরও চেষ্টা চলছে যাতে কিছুটা হলেও এডিস মশা কমিয়ে আনা যায়। আমাদের জনগণকেও আরেকটু সচেতন হওয়া বিশেষ প্রয়োজন।

নাসিকের ১৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, রোগী বাড়ছে কিন্তু হাসপাতালে সেবা নেই। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের সেবার মান খুবই খারাপ। এখন যেটা দরকার তা হলো সরকারিভাবে গবেষণা ও সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে এটা কমিয়ে আনা। সবাই ওষুধের কথা বলে। কিন্তু বেশি ওষুধ দিলে আবার সেটা আমাদের জন্যই ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। যেকোনভাবে ঝুঁকি কমিয়ে আনা দরকার।

সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও ১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আফসানা আফরোজ বিভা বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের তিনটি ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ছিলাম। প্যানেল মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছি। কখনো ডেঙ্গুর অবস্থা এমন দেখিনি। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু আক্রান্ত আমার নিজের বাড়িতে ৪ জন রয়েছে। আমার ওয়ার্ডের বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু ঠিকমতো ওষুধ দেয়া হচ্ছেনা। আমি মনে করি এদিকে একটু খেয়াল রাখলে এবং আমরা নিজেরা সচেতন হলে এই সমস্যা কমে আসবে।

নারায়ণগঞ্জ শহরের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি নিয়ে নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর শাহেন শাহ আহম্মেদ বলেন, আমার ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশন থেকে ঠিকমতো ওষুধ দেয়া হচ্ছেনা। তাই ডেঙ্গু খুবই খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ঘরে ঘরে রোগী আবার মারাও গেছে। এমন অবস্থা আমার ওয়ার্ডে আগে কখনো দেখিনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে আরো খারাপ হবে।

নাসিকের ২৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা বলেন, পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা নেই। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। মৃত্যুর খবরও অনেক জায়গা থেকে শুনতে পাচ্ছি। আগের আমার ওয়ার্ডের ড্রেনগুলোর মুখ খোলা ছিলো তাই চাইলেই সেটা উঠিয়ে পরিষ্কার করা যেতো। এখন তা করা যায়না বলে ভেতরেই মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। তারপর আমরা নিজেরাও সচেতন না। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে আমাদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে।

নাসিকের ৮,৯, ১০ নং ওয়ার্ডের সাবেক নারী সংরক্ষিত কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা বলেন, আমার এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি আগের চেয়ে অবনতি হয়েছে। ওষুধ দেয়া হচ্ছে কিন্তু তারপরও ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়ছে। এটা কি কারণে হচ্ছে তা বুঝতে পারছিনা।

Islam's Group