আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনেও বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সরব রয়েছেন। বিএনপি দলীয় মনোনয়নের আশায় অনেকেই নিজেদের সরব অবস্থান জানান দিয়ে আসছেন। প্রতিনিয়তই নির্বাচনী প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
তবে বিএনপি দলীয় মনোনয়নই নির্বাচনের শেষ লড়াই নয়। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হলেও অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে নির্বাচনের ফলাফল নিজের করে নিতে হবে। এই আসন এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা বহুভাগে বিভক্ত। নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে অনেক অন্তঃকোন্দল। আর এসকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে পারলেই হয়তো বিজয় অর্জন করা যেতে পারে।
সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে। সেই সাথে অনেক সময় তারা আন্দোলন সংগ্রামেও অংশ নিতে পারতেন না।
ব্যবসা বাণিজ্যেও নানাভাবেই বাধার শিকার হয়েছেন। সব মিলিয়ে তাদের যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন ছিলো না। দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করতে হয়েছে। পরিবারের সদস্যদেরও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। তাদের কারণে অনেক সময়ে পরিবারের সদস্যদের হেনেস্তার শিকার হতে হয়েছে।
এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। সেই সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলাপ আলোচনা শুরু হয়।
আর এই আলাপ আলোচনায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও জায়গা করে নেন। ইতোমধ্যে অনেকেই এই আসনটিকে কেন্দ্র করে আলোচনায় চলে এসেছেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন হলো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন (সদর-বন্দর)। শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এই আসনটি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই আসনটি বিএনপি ও জাতীয় পার্টি প্রায় সমানভাবেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তবে বেশিরভাগ সময়েই এই আসনটি নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যরা সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে এই আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে ছিলেন সেলিম ওসমান। যিনি ওসমান পরিবারের সদস্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাথে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের সদস্যরাও পলাতক রয়েছে। ফলে এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। যিনি বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পাবেন তার বিজয় মোটামোটি নিশ্চিত বলা চলে।
তবে এবারের নির্বাচনে এই আসনটিতে নজর পড়েছে ব্যবসায়ী মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ও প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল। তারা দুইজন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরব রয়েছেন। সেই সাথে বিএনপি দলীয় মনোনয়নের জন্য স্থানীয় বিএনপি সহ কেন্দ্রীয় পর্যায়েও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
কিন্তু এই দুই ব্যবসায়ী নেতা মাসুদুজ্জামান মাসুদ ও আবু জাফর আহমেদ বাবুল মেনে নিতে নারাজ মনোনয়ন প্রত্যাশী স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন বিএনপির নেতারা। তাদের দুইজনেরই বিরোধী পক্ষ রয়েছে বিএনপিতে। ফলে তাদের দুইজনের যে কোনো একজনের মনোনয়ন নিশ্চিত হলেও তাদের পক্ষে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠে নামানো বেশ কষ্টকর হয়ে যাবে। আর যদি সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো না যায় তাহলে বিএনপির বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারেন।
অন্যদিকে এই দুই ব্যবসায়ী নেতার বাইরে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম কিংবা অন্য কেউ বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেলে তাকেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
পাশাপাশি এই দুই ব্যবসায়ীর বাইরেও নারায়ণগঞ্জ সদর বিএনপির বিএনপির নেতাকর্মী বহু গ্রুপে বিভক্ত। এই দুই এলাকাতেই নেতায় নেতায় গ্রুপ গড়ে উঠেছে। যারা কেউ কারও নির্দেশনা মানে না। নিজেরাই যেন নিজেদের গ্রুপের বড় নেতা। গ্রুপের নেতা ছাড়া অন্য কারও এখানে প্রাধান্য নেই। ফলে সকল গ্রুপকে একত্র করাও বিএনপি দলীয় মনোনীত প্রার্থীর জন্য একত্রিত করাটা অনেক কষ্টকর বিষয় হিসেবে আবির্ভাব হবে।
আপনার মতামত লিখুন :