নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়াকে ঘিরে একট্টা হয়েছে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা। মূলত মহানগর বিএনপির থেকে যারা আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তাদের মধ্য থেকে কেন্দ্র থেকে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদকে দল থেকে মনোনীত করা হয়। গত ৩ নভেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তালিকা ঘোষণা করেন। মনোনয়ন ঘোষণার আগে এবং পরে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মহানগর বিএনপির নেতাদের মাঝে বিভাজন স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো। বিশেষ করে সাখাওয়াত-টিপুর সাথে কালাম পরিবারের বিরোধীটা মাঠ থেকে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিলো বিষয়টি কারো অজানা ছিল না। মহানগর বিএনপির ব্যানারে কর্মসূচির বাইরে গিয়ে তাদের সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে পৃথক কর্মসূচি পালন করতেও দেখা গেছে কালাম পুত্র আবুল কাউসার আশা কে। কিন্তু ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় হঠাৎ করে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এদিন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যারা বঞ্চিত ছিলেন তারা সবাই একত্রিত হয়ে এক টেবিলে বসে সংবাদ সম্মেলন করছেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, শিল্পপতি আবু জাফর বাবুল, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা সবাই একাট্টা হয়ে মাসুদুজ্জামানকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে।
তারা বলেন, দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত কিন্তু যাকে মনোনীত হিসেবে নাম প্রকাশ করা হয়েছে তাকে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিজয় সম্ভব না। ভোটের লড়াইয়ে জিততে হলে মনোনয়ন দিতে হবে মাঠ পর্যায়ের কোন নেতাকে। যারা অতীতে দলের জন্য মাঠে লড়াই করেছে, হামলা মামলার শিকার হয়েছে, তৃণমূলে যার গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে। মাসুদুজ্জামান মাসুদকে দল থেকে মনোনীত করায় দলের তৃণমূলে নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাই কেন্দ্রের প্রতি তাদের দাবি যেন প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়।
সোমাবার ১৭ নভেম্বর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে দীর্ঘ সময় বছর সকল নেতারা একত্রে নারায়ণগঞ্জে মহানগর বিএনপির শক্তিপ্রদর্শন করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচারের রায়কে ঘিরে আওয়ামী লীগের ডাকা কমপ্লিট শার্টডাউন কর্মসূচির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করতে যাচ্ছে মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দরা।
এদিকে মহানগর নেতৃবৃন্দের সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কঠোর সমালোচনা শুরু করে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা।
মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দদের সংবাদ সম্মেলন দেখে মনে হচ্ছে তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত মানেনা।
সদস্য সচিব শাহেদ আহম্মেদ লিখেছেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামানকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।
সাইফুল ইসলাম আপন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নাম উল্লেখ্য করে নানা ভিডিও ক্লিপ ছেড়ে ক্যাপশন দিচ্ছেন। যেখানে আশার সাথে আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সংঘর্ষের ঘটনা এবং সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও একত্রে সর্ম্পক বদলে গেলো একটি পলকে গান যুক্ত করে ক্যাপশনে লিখেছেন টিপু ভাই মাইরের কথা ভুলে গেলেন। যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়া হোসেন খান এর দেওয়া মাসুদুজ্জামান মাসুদকে মহানগর বিএনপির অন্যতম নেতা সম্বোধন করা এবং সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামান মাসুদ বিএনপির কেউ না বলে আখ্যায়িত করার ভিডিও জুড়ে দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছেন সাখাওয়াত ভাই কখন কি বলেন নিজেও জানেন না।
এদিকে ৩ নভেম্বর মাসুদুজ্জামানকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর ইতোমধ্যে তার পক্ষে মাঠে নেমে পড়েন বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেন শাহ আহম্মেদ, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। আগে থেকেই তার সাথে ছিলো মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, সদস্য সচিব শাহেদ আহম্মেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন রানা, সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম বাবু সহ মহানগর যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন থানা ইউনিট গুলো। ফলে ইতোমধ্যে মাসুদুজ্জামানের পক্ষে বড় একটি বলয় তৈরি হয়ে গেছে মহানগর এলাকাতে। এছাড়াও তার পক্ষে নেমেছেন সাবেক কাউন্সিলর অহিদুল ইসলাম ছক্কু, সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু। মাসুদুজ্জামান মাসুদের সাথে হাটতে দেখা গেছে নুরুল ইসলাম সরদারকেও। ফলে ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে মাসুদুজ্জামান মাসুদ নিজের প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দরা অতীতে দলের কঠিন সময়েও আন্দোলন সংগ্রামে একত্রিত হতে পারেনি। পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন। একে অপরের সাথে বিরোধে মারামারি পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে হলেও অত্যন্ত এক টেবিলে তারা বসেছেন, আলোচনা করেছেন, সমঝোতা করেছেন। এটি নি:সন্দেহে একটি ভাল দিক। কিন্তু যে এজেন্ডা নিয়ে তারা একত্রিত হয়েছেন সেটি আসলে মহানগর বিএনপিতে ঐক্য নাকি বিভাজন হয়ে দেখা দিবে তা এখন সময়ের অপেক্ষা। আগামীতে ধীরে ধীরে এটি স্পষ্ট হতে থাকবে। শেষ অবদি মাসুদুজ্জামানের ব্যাপারে দল যদি পুনর্বিবেচনা করেন তাহলে তাদের এই ঐক্যের সফলতা আসবে। আর যদি কেন্দ্র তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে মাসুদুজ্জামান মাসুদকেই দলের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে রাখেন তাহলে বর্তমানে যারা ঐক্য গড়েছেন তাদের ভূমিকা কি হবে এবং তাদের এই ঐক্য অটুট থাকবে কিনা সেটি দেখতে হবে আর মাত্র কয়েকটা মাস অপেক্ষা করতে হবে।








































আপনার মতামত লিখুন :