প্রাথমিক মনোনীত থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণায় এবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনীত বনাম বঞ্চিতদের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই শুরু হয়েছে। এর ফলে বিগত ১৬ বছরের নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও অধিনস্থ থানা উপজেলার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রুপিং শুরু হয়েছে।
শহর-বন্দর আসনে প্রাথমিকভাবে ঘোষিত মনোনীত প্রার্থীকে পরিবর্তনে আহবান জানিয়েছেন ৫ মনোনয়ন বঞ্চিতরা। অন্যদিকে দ্রুত সময়ে এগুলো সমাধান করে এক পতাকাতলে ধানের শীষে পক্ষে থাকবে আশা ব্যক্ত করেছেন মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান।
১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সদ্য ঘোষিত বিএনপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামান পরিবর্তন করে মনোনয়ন বঞ্চিত চারজনের মধ্যে যে কাউকে দেয়ার আহবান করা হয়েছে। মাসুদুজ্জামানকে নিয়ে ধানের শীষে জয়ী সম্ভব নয় ইঙ্গিত দিয়েছেন বঞ্চিতরা। এদিকে মনোনীত প্রার্থীকে নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে বঞ্চিত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাংশ নেতা-কর্মীদের নিয়ে পরিবর্তনে আভাস গুনছে। যার কারণে নতুন করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী নিয়ে বিপত্তি শুরু হয়েছে।
১৭ নভেম্বর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে প্রথম রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে ট্রাইব্যুানাল আদালত। যার কারণে সারাদেশে বিএনপি সহ অন্যান্য দল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ শহর বন্দর আসনে নির্বাচনী এলাকায় নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে বিএনপি চূড়ান্ত প্রার্থী নিয়ে। হঠাৎ সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও বিএনপি নেতা আবু জাফর আহমেদ বাবুল এক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন হন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তারা।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলেছেন, এই আসন থেকে জনগণ আমাকে একাধিকবার নির্বাচিত করেছেন। ত্যাগীরা যদি সুযোগ না পায় তাহলে সামনের দিনে রাজনীতি অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। সামনে কঠিন সময় আসছে। গত ১৭ বছর আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার কীভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন এটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের আগামী নির্বাচনে অবশ্যই বিজয়ী হতে হবে। আমরা সঠিক নেতৃত্বের জন্য তাকিয়ে আছি। জনগণ কখনও ভুল করে না। আমাকে তিনবার নির্বাচিত করেছে কারণ এই দলকে মানুষ ভালবাসে। এটিই হয়ত আমার শেষ নির্বাচন। আমিও যদি মনোনয়ন না পাই এখানে যেই মনোনয়ন পাবে তার পক্ষে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বিএনপি নেতা আবু জাফর আহমেদ বাবুল বলেন, আমরা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। অপ্রত্যাশীত ভাবে একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে যেটা আমরা ভাবতে পারিনি। তিনি দুই মাস আগে দলে যোগ দিয়েছেন। আমরা এখন মাঠে দেখছি প্রতিটি নেতাকর্মী ও ভোটারের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের প্রার্থীর জয়লাভ আমাদের প্রত্যাশা। অপরিচিত মানুষকে ভোটাররা ভোট দিবে না। আমরা চাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন আমাদেরই থাকুক। আমরা এ আসনটি বিজয়ী করে বিএনপিকে উপহার দিবো। এই মনোনয়ন কনফার্ম না। আমরা এটা রিভিউ করার আবেদন করছি। আমাদের মধ্যে যে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হোক আমরা তাকে বিজয়ী করবো।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে যাকে প্রার্থী করা হয়েছে এ ধরনের লোকের কথা আমরা চিন্তাও করিনি যে এধরণের লোক প্রার্থী হতে পারে। এই প্রার্থী ঘোষণার পর সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এই প্রার্থীর সাথে নেতাকর্মীরা পরিচিত নয়, তাকে দলীয় কাজে কোনদিন পাইনি। আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, দলের মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির কাছে একটি দরখাস্ত দিয়েছি। এ আসনে প্রাথমিক ভাবে যাকে প্রার্থী দেয়া হয়েছে তাকে বদলে মহানগর বিএনপির যাকে ইচ্ছা তাকে মনোনয়ন দেয়া হোক।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু জানান, ছোট ভাই যেমন বড় ভাইয়ের কাছে আবদার জানায় তেমনি আমরাও আমাদের অভিভাবক আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আবেদন জানাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়। আমরা চাই যারা মাঠের লোক যারা ত্যাগী, যারা জেল জুলুম খেটেছেন তারাই যেন আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন পায়।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা বলেন, আমাদের মধ্যে বিভেদ থাকতে পারে। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব টিপু কাকার সাথে আমার বিরোধ ছিল এটা সবাই জানে। কিন্তু আমি যখন টিপু কাকাকে জড়িয়ে ধরেছি তিনি কিন্তু সেটা মনে রাখেননি। আমরা চাই ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হোক। কোন কারণে যদি আমার বাবা আবুল কালাম মনোনয়ন নাও পায় এই মঞ্চে থাকা যেই মনোনয়ন পাবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো। আমরা একসাথে জেল খেটেছি, হাজিরা দিয়েছি। আমাদের কষ্ট বাইরের মানুষজন বুঝবে না। ত্যাগীরা মনোনয়ন পেলে আমি ভাববো যে একজন অভিভাবকের অধীনেই আমি নির্বাচন করছি।
এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পাচঁ প্রার্থী বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচারণা জড়িয়ে পড়েছেন মাসুদুজ্জামান সমর্থক গোষ্ঠী। সেখানে মাসুদুজ্জামান জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মহানগর বিএনপি শীর্ষ নেতা সহ প্রত্যাশিতদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি সহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
মনোনয়ন বঞ্চিতদের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, এবং সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রেস ব্রিফিং দেখেছি, যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি ব্রিফিং করেছেন। কিন্তু আমরা সবাই বলেছিলাম, দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পেছনেই সবাই দাঁড়াবেন। সেই জায়গাটা প্রেস ব্রিফিংয়ে রইলো না। উনারা তাদের কথায় অটল থাকেননি। তারপরেও আশা করি তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেবেন। এই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে কিনা, সেটি বিবেচনার বিষয়।








































আপনার মতামত লিখুন :