নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু। বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র ৮ মাসের কম সময়ে। প্রবীণ এই নেতাকে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। ওই থেকে নিস্ক্রিয় থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। প্রায় ছয় বছর বেশি সময়ে আব্দুর সবুর খান সেন্টু শীর্ষ পর্যায়ে নেতা থেকে বর্তমান দলের মনোনীত প্রার্থীদের পিছিনের সারিতে ছিলেন।
২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আহবায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে সাবেক সভাপতি আবুল কালাম ও আবুল কাউসার আশা বিরুদ্ধে অবস্থানে দেখা যায় সেন্টু। এ পর্যায়ে তিনি বিদ্রোহী গ্রুপের প্রধান আতাউর রহমান মুকুলের সাথে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি ও বিতর্কিত নেতা জাকির খানের বলয়ে দেখা গেছে। কারামুক্তি পর জাকির খানকে ১৫ এপ্রিল ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বদু-সেন্টু নেতৃত্বে হোসিয়ারি সমিতি।
গত বছর ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেন। নির্বাচনে মাধ্যমে তিনি জেনারেল গ্রুপে পঞ্চম বিজয়ী হলেও মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক সুবাধে হোসিয়ারি সমিতির সহ-সভাপতি হন এক বছরের জন্য।
রাজনৈতিকভাবে আব্দুর সবুর খান সেন্টু এমন কৌশলী কমতি নেই। বসন্ত কোকিলের মত মধু আহরণ করে কেটে পড়েন। এবার তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের জয়ের একাট্টা প্রচারণা করে যাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ইতোমধ্যে তাকে মাসুদুজ্জামানের উঠান বৈঠকে সেন্টু মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জুনিয়র যুগ্ম আহবায়করা।
জাকির খান ও আতাউর রহমান মুকুল নিয়ে যখন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন আব্দুর খান সেন্টু তখন মেরুকরণ শুরু করেন। গত ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বন্দর থানা ২৩নং ওয়ার্ডের কাবিলের মোড়ে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুলকে নিয়ে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য ফরম বিতরণ করেন আব্দুস সবুর খান সেন্টু। এ সময় সেন্টু তার বক্তব্যে মুকুলের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা, মুকুলকে জনগণ ও বিএনপি থেকে সরানোর একটি ষড়যন্ত্র হয়েছে তথ্য দেন।
তিন মাসের ব্যবধানে ৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশি মাসুদুজ্জামান মাসুদকে সমর্থন দিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বদু-সেন্টু নেতৃত্বে হোসিয়ারি সমিতি। এর পরই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে মাসুদুজ্জামানকে সমর্থন হোসিয়ারি সমিতির আড়ালে ব্যবসায়ীরা। এবার তিনি মাসুদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা কারণে সমালোচিত হয়েছেন মহানগর বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুখে।
১/১১ সরকার আমলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাচঁটি আসনে বিএনপির ভরাডুরি ঘটে। এরপর ২০০৯ সালের অক্টোবরে শহর বিএনপি সম্মেলনের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলম সভাপতি ও এটিএম কামাল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। এই কমিটি দীর্ঘ আট বছর বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি নতুন কমিটি ঘোষনা করা হয়। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালামকে সভাপতি ও বিলুপ্ত শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৮ সালের শেষ সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও প্রবীন নেতা আব্দুস সবুর খান সেন্টুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নাসিকের তৃতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট হওয়ার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে বহিস্কার করা হয়। এর ফলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়ে কপাল খুলে যায় আব্দুস সবুর খান সেন্টুর। আট মাসের মাথায় দায়িত্ব পালনকালে মহানগর বিএনপি আহবায়ক কমিটির ঘোষনা করা হয়। বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্যের মহানগর কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি।
এই ঘোষনা পরই ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদনের ৬ দিনের মাথায় ৪ যুগ্ম-আহ্বায়কসহ ১৫ নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার হলেন: মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, হাজী নুরুদ্দিন, আতাউর রহমান মুকুল, আবুল কাউসার আশা, সদস্য অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, আলমগীর হোসেন, শহিদুল ইসলাম রিপন, আমিনুল ইসলাম মিঠু, মনোয়ার হোসেন শোখন, ফারুক হোসেন, হাজী ফারুক হোসেন, হান্নান সরকার, আওলাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা ও অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু।
আব্দুস সবুর খান সেন্টু ওই সময়ে বলেন, নতুন আহ্বায়ক কমিটির ১৫ জন সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি লিখিতভাবে কেন্দ্রকেও জানানো হয়েছে। মহানগর বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ-সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন না এই ১৫ নেতা।
এদিকে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে মাঠে আতাউর রহমান মুকুলকে বিদ্রোহীদের প্রধান করে মুখপাত্র হয়ে ছিলেন আব্দুস সবুর খান সেন্টু। কর্মী বিহীন এই প্রবীন নেতা পরামর্শে বিদ্রোহীদের অগ্রসর ছিলো কচ্ছপ দৌড়ে। ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে আতাউর রহমান মুকুল সহ ছয়জনকে বহিস্কার করা হয়। এতে বিদ্রোহীদের কোমড় ভেঙ্গে যাওয়ায় মুকলের পাশে সহসা দেখা যায়নি সেন্টু সহ পদত্যাগকারীদের।
৫ আগষ্টের পর মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক সুবাদে নগরের একাংশভাবে ক্ষমতাসীন হয়ে উঠেন আব্দুর সবুর খান সেন্টু। দেওভোগে বিএনপি রাজনৈতিক নেতা জাকির খান বলয়ে গড়ে উঠে তার রাজ্যত্ব। এই সুবাদে বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতির নির্বাচনে জাকির খান ও বদু বলয়ে প্যানেলর কর্তা বনে যান। নির্বাচনে পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর হোসিয়ারি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি হয়েছেন এক বছরের জন্য। বর্তমানে আব্দুর সবুর খান সেন্টু রাজনীতি মাঠে বহিস্কৃত মুকুলকে ছেড়ে জাকির খানের নিকটস্থ হন। মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক হওয়ার কারণে জাকির খানের সর্বত্র দেখা গেছে মুকুলের আস্থাভাজন সেন্টু। রাজকীয় টুপি নিয়ে জাকির খানকে আগামী কোন টুপি পড়িয়ে দিবেন সেন্টু এমন আলোচনা চারিদিকে।
বিএনপির একাধিক নেতার সূত্রে জানা যায়, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা (বহিস্কৃত) তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই সাব্বির আলম খন্দকার শাহাদাৎ বার্ষিকীতে জাকির খানের বিচার দাবি করে বক্তব্যে দিয়েছিলেন আব্দুস সবুর খান সেন্টু। তৈমূরের আস্থাভাজন হিসেবে প্রবীন এই নেতা এক সময়ে জেলা ও মহানগর বিএনপিকে নড়তে চড়তে দেখা যেত।








































আপনার মতামত লিখুন :