নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার দলীয় মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করায় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থক ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও বিরক্তি তৈরি হয়েছে। একের পর এক সিদ্ধান্ত বদলের কারণে মাঠপর্যায়ে দলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বরে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয় ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান মাসুদকে। এরপর ১৬ ডিসেম্বর মাসুদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। যা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা তৈরি হয়। তবে দুদিন পরেই তিনি ফের নির্বাচনের মাঠে ফিরে আসেন। ১৯ ডিসেম্বর রাতে সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এরপর ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন এবং নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রচার প্রচারণা শুরু করেন।
কিন্তু ২৪ ডিসেম্বর সবাইকে চমকে দিয়ে মনোনয়নের কাগজ তুলে দেয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালামকে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে তিনবার প্রার্থী পরিবর্তনের ঘটনায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ জমে উঠছে। বিব্রত হয়েছেন নেতারা। কর্মী ও সমর্থকরা রীতিমত বিরক্ত প্রকাশ করেছেন এই ঘটনায়। তিন বার মনোনয়ন বদলীর পর এখন কালাম মনোনয়ন পেলেও তার এই মনোনয়ন চূড়ান্ত বলে বিশ্বাস করছেন না কেউ। অনেকেই বলছেন, তারেক রহমান দেশে ফেরার পর দলের দায়িত্ব নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবেন মনোনীত প্রার্থীর নাম। এরপরেই বিশ্বাস হবে কে থাকবেন এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে। একজন বলেন, “আজ যাকে প্রার্থী বলা হচ্ছে, কাল তাকেই বাদ দেওয়া হচ্ছে। এতে আমরা মাঠে কীভাবে কাজ করব?” আরেকজন বলেন, “ভোটাররা এখন আর কোনো ঘোষণাকেই চূড়ান্ত বলে বিশ্বাস করছেন না।
ভোটারদের একটি অংশের অভিযোগ, প্রার্থী পরিবর্তনের কারণে এলাকায় প্রচারণা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারা বলছেন, বারবার সিদ্ধান্ত বদল হলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভুল বার্তা যায় এবং প্রতিপক্ষ সেই সুযোগ নিচ্ছে। সেই সাথে প্রতিপক্ষরা সমালোচনার সুযোগ পাচ্ছেন। বার বার নেতা বদল করায় কর্মীরা হচ্ছেন বিব্রত। দলের নেতাকর্মীদের মনোবলও ভেঙ্গে যাচ্ছে। হতাশায় অনেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। আর ভোটাররা এখন পর্যন্ত নিশ্চিতই হতে পারেননি কে এই আসনের প্রার্থী।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা মনে করছেন, দ্রুত একটি স্পষ্ট ও স্থায়ী সিদ্ধান্ত না এলে নির্বাচনী মাঠে দল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তারা বলেন, মনোনয়ন নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা দলের সাংগঠনিক শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। তবে সাবেক এমপি আবুল কালামকে নতুন করে মনোনয়ন দেওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হলেও, তৃণমূলের অনেকেই এখনো অপেক্ষায় আছেন—এ সিদ্ধান্ত কতটা চূড়ান্ত হয়, সেটাই দেখার বিষয়।


































আপনার মতামত লিখুন :