দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠে মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের উপস্থিতি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য অবস্থান ও সক্রিয়তায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এই আসনে গিয়াস উদ্দিনকে এমপি প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় তৃণমূল এমন দাবিতে বুধবার তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীদের ভাষ্য, গিয়াস উদ্দিন এমপি হলে নারায়ণগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে নতুন গতি আসবে। তাদের মতে, তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, বরং সংগঠক হিসেবেও পরীক্ষিত। তাই দলীয় প্রতীক না থাকলেও তৃণমূলের দিকে তাকিয়ে এই আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ না পেলেও এখনো তারা আশাবাদী। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন না পেলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে বৈঠকের কথাও জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিএনপি ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জোটের অংশীদার হিসেবে জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি মনির হোসেন কাসেমীকে প্রার্থী করা হয়েছে। বাকি চার আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা হলেন নারায়ণগঞ্জ-১ এ মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, নারায়ণগঞ্জ-২ এ নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ এ আজহারুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ এ মাসুদুজ্জামান মাসুদ।
এই প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন ছিল জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন শেষ পর্যন্ত কোন আসনে লড়বেন? বুধবার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার ঘটনাকে অনেকেই সেই প্রশ্নের আংশিক উত্তর হিসেবে দেখছেন।
দলীয়ভাবে কোনো আসনেই মনোনয়ন না পাওয়ায় গিয়াস উদ্দিনের সামনে এখন মূলত দুটি পথ খোলা। নারায়ণগঞ্জ-৩ অথবা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা। শুরু থেকেই এই দুই আসনেই তার আগ্রহ ছিল। তবে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নানকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর সেখানে তার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে যায়। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির কোনো সরাসরি দলীয় প্রার্থী না থাকায় এখানেই তৈরি হয়েছে তার জন্য বাস্তব সুযোগ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জোটের প্রার্থী মুফতি মনির হোসেন কাসেমী স্থানীয়ভাবে খুব বেশি পরিচিত নন। পাশাপাশি নেই সুসংগঠিত ভোটব্যাংক বা শক্তিশালী মাঠপর্যায়ের কাঠামো। এই বাস্তবতায় বিএনপি ঘরানার কোনো প্রভাবশালী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই জায়গা থেকেই গিয়াস উদ্দিনকে সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে দেখছেন স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
এই সুযোগ কাজে লাগাতে গিয়াস উদ্দিনও মাঠে নিজের উপস্থিতি জোরদার করছেন। সীমানা পুনর্র্নিধারণের পর বক্তাবলী, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ এই চারটি এলাকায় নিয়মিত ঘরোয়া বৈঠক, কর্মী সমাবেশ, গণসংযোগ ও সাংগঠনিক সভা করছেন তিনি। একই সঙ্গে তার অনুসারীরা বিভিন্ন এলাকায় গণমিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন, যেখানে বারবার উঠে আসছে “গিয়াস ভাইকে প্রার্থী চাই” স্লোগান।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সবচেয়ে দৃশ্যমান ও আলোচিত রাজনৈতিক শক্তির নামই হচ্ছে মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। দীর্ঘ সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, শক্তিশালী তৃণমূল নেটওয়ার্ক এবং বিরোধী ভোট ব্যাংকের ওপর তার প্রভাব সব মিলিয়ে তিনি স্বতন্ত্র হলেও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন। বিএনপির দৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন সবসময়ই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, আর সেই বাস্তবতায় গিয়াস উদ্দিন বহুদিন ধরেই একটি শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি অচল হয়ে পড়া সংগঠনকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন। সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি গঠন, আন্দোলনমুখী কর্মসূচিতে তৃণমূলের সক্রিয় অংশগ্রহণ সবকিছুতেই তার নেতৃত্ব স্পষ্ট ছিল। সেই সময় তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মহলের জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
বর্তমানে প্রশ্ন একটাই গিয়াস উদ্দিন কি দুই আসনের সম্ভাবনা খোলা রেখে ঝুঁকি নেবেন, নাকি কৌশলগতভাবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনকেই চূড়ান্ত করবেন? তার ঘনিষ্ঠদের মতে, নেতাকর্মীদের চাপ ক্রমেই বাড়ছে এবং তারা বিশ্বাস করেন, দলীয় মনোনয়ন না পেলেও গিয়াস উদ্দিন মাঠ ছাড়বেন না।
সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে এই অনিশ্চয়তা। শেষ পর্যন্ত কোন আসন থেকে দাঁড়ান মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সেই সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করে দিতে পারে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির চূড়ান্ত সমীকরণ। তবে এটুকু নিশ্চিত, ফতুল্লার নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য সমর্থনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতেই এখন তার নাম।


































আপনার মতামত লিখুন :