News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

দুই বছর নারায়ণগঞ্জে দুই শতাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ১০:০০ পিএম দুই বছর নারায়ণগঞ্জে দুই শতাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ

ব্যাংকের অসহযোগিতা, কাস্টমস জটিলতা, বিদেশি বায়ারদের অনাগ্রহ, শ্রমিক অসন্তোষ ও জ্বালানি সংকটসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে নারায়ণগঞ্জে গত দুই বছরে বন্ধ হয়ে গেছে রপ্তানিমুখী দুই শতাধিক পোশাক কারখানা। এতে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। চলতি অর্থবছরে পোশাক রফতানি খাতে লোকসান হয়েছে দেড় বিলিয়ন ডলার।

এ অবস্থায় চালু কারখানা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা। অবিলম্বে বন্ধ কারখানাগুলো চালু করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধসহ তাদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনা না গেলে অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের।

তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলার আশ্বাস দিয়েছে জেলা কলকারখানা অধিদপ্তর ও বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষ।

নীট পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ'র তথ্যমতে নীট পোশাক রপ্তানিখাতে সারা দেশের ৪০ শতাংশ পোশাক রপ্তানি হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে। তবে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক সহিংসতা, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকট, দেশের পট পরিবর্তন ও ব্যাংক ঋণের অভাবে গত দুই বছরে নারায়ণগঞ্জে বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ’র অন্তর্ভুক্ত অন্তত শতাধিক রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কর্মহীন হয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লক্ষাধিক শ্রমিক।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ'র অন্তর্ভুক্ত ছাড়াও এই দুই সংগঠনের বাইরে নারায়ণগঞ্জে মাঝারি আকারের রপ্তানিমুখী আরও শতাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অবিলম্বে বন্ধ কারখানাগুলো চালু করে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার দাবি করছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। অন্যথায় দেশে অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়বে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কাও করছেন তারা।

গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি এম এ শাহীন সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি গত দুই বছর ধরে একের পর ছোট বড় মাঝারি বিভিন্ন ক্যাটাগরির অন্তত দুই থেকে আড়াইশ গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। জীবন জীবিকার তাগিদে তাদের কেউ অটোরিকশা চালাচ্ছে, কেউ ফুটপাতে হকারগিরি করছে। সেখানেও নানা বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে বেকার শ্রমিকরা। আমি মনে করি সরকারের উচিত বন্ধ কারখানাগুলো কীভাবে চালু করা যায় সেই ব্যবস্থা করা। যতো দ্রুত সম্ভব বন্ধ কারখানাগুলো চালু করে কর্মহীন শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে তারা নানা ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে। এতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও চরম অবনতি ঘটবে।’

তবে এ বিষয়ে শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দেয়াসহ নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলা উপমহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ।

সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘কোনো কারখানা বন্ধ করার আগে আমাদের জানায় না। হুট করে তারা কারখানা বন্ধ করে দেন। শ্রমিকরা যখন তাদের পাওনা বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে তখন আমরা বিষয়টি জানতে পারি এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করি। কোনো শ্রমিক যদি তাদের বকেয়া বেতনের বিষয়ে আমাদের কাছে এসে লিখিতভাবে জানায় আমরা মালিকপক্ষকে ডেকে দুই পক্ষকে সাথে নিয়ে আলোচনা করি। যদি মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করে সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী আমরা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাসহ যা যা করণীয় তাই করে থাকি।

এ সংকটময় অবস্থায় রপ্তানিমুখী চালু কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন প্রতিষ্ঠান মালিকরা। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে অনিশ্চয়তা ও নানা আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।

ফতুল্লার রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা নীট রেডিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ’র মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, গত দুই বছরে প্রায় ২০০ গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমরা যারা মাঝারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি, আমরাও নানা আশঙ্কায় রয়েছি। ব্যাংকগুলো আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না। কাস্টমসে নানা ধরনের জটিলতা হচ্ছে। পাশাপাশি জ্বালানি সংকট যেমন গ্যাস বিদ্যুৎ সমস্যা আমাদের উৎপাদনে আবার বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়াররা আমাদের আগের মতো অর্ডার দিচ্ছে না। পাশের দেশগুলোতে তারা চলে যাচ্ছে। আমাদের অর্ডারের পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠান কতদিন চালিয়ে রাখতে পারব, সেটা নিয়ে আশঙ্কায় আছি।’

বিকেএমইএ’র তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জে এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত সহস্রাধিক পোশাক কারখানার মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র ৩৫০টি কারখানা।

বিকেএমইএ’র পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থ বছরে নারায়ণগঞ্জ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে রপ্তানির পরিমাণ নেমে এসেছে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ এ অর্থ বছরে দেশের পোশাক রপ্তানি খাতে লোকসান হয়েছে দেড় বিলিয়ন ডলার। সাড়ে ৫ এর উপরে থাকা জিডিপিও হ্রাস পেয়ে নেমে এসেছে সাড়ে ৪ শতাংশে। ফলে এর প্রভাব পড়ছে দেশের মূল  অর্থনীতিতে। পোশার রপ্তানি খাতের সংকট মোকাবিলায় এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কামনা করছেন বিকেএমইএ'র শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফেকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম হতাশা প্রকাশ করে সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের গার্মেন্টস শিল্প এখন চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। আধিকাংশ ফ্যাক্টরি হাসপাতালের আইসিইউ'র রোগীর মতো ধুঁকে ধুঁকে ভুগছে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকগুলো আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না। এ মুহূর্তে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি থাকা উচিত। কাকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে আসবে, কীভাবে সাপোর্ট দেবে সেটা তাদের উদ্যোগ নিতে হবে। ফ্যাক্টরি মালিকদের লং টাইম সাপোর্ট দিতে হবে। লং টাইমের রিসিডিউল করতে হবে। ৬-৭ বছরে হবে না। একটা ফ্যাক্টরি দাঁড় করাতে হলে প্রয়োজনে তাদের ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত লং টাইম সাপোর্ট দিতে হবে।’

Islam's Group