দীর্ঘদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার মাসদাইর বাজারে মাদক ব্যবসায়ী পোড়া কাকন, সেলিম কসাই ও রাসেল কসাইরা মাদকের হাটে পরিণত করেছিল। মাসদাইরে প্রধান সড়কে ও আশেপাশের অলিগলিতে লাইন ধরে মাদক বিক্রি করতো এসব মাদক সম্রাটেরা। এবার এক নারীকে দিয়ে একটি বসতবাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে মাদক বিকিকিনির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল এসব দুর্ধর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা। সিসিটিভি লাগিয়ে নজরদারি করা হতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাকে। মঙ্গলবার ১৮ মার্চ দুপুরে মাসদাইরে মাদক বিরোধী অভিযানে ফিল্মি স্টাইলে ধারালো অস্ত্র সহকারে হামলা চালিয়ে আটককৃত মাদক সম্রাটদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগিরা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি টিম অভিযানে গেলে এ ঘটনা ঘটে। পরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মোনাব্বর হোসেনের নেতৃত্বে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিপুল পরিমাণ গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিদেশী মদ ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার কর্মকর্তারা জানান, দুপুরে ফতুল্লা থানাধীন মাসদাইরে বেগম রোকেয়া খন্দকার স্কুলের বিপরীতে একটি বাড়িতে মাদক বেচাকেনার খবর পেয়ে তারা অভিযানে যান। এসময় ৪ জন মাদক বিক্রেতাকে আটক করা হলেও তাদের ২০-২৫ জন সহযোগি দেশীয় ধারালো অস্ত্র সহকারে হামলা চালিয়ে আটককৃতদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটর নেতৃত্বে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গাজা, ইয়াবা, বিদেশী মদ ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে।
তারা আরো জানান, সেলিম কসাই, রাসেল কসাই, পোড়া কাকনসহ একদল মাদক বিক্রেতা একটি বসতবাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতো। হামলার সময় সেই সিসি ক্যামেরার ডিভিআর নিয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার মাসদাইর বাজার এলাকায় অবস্থিত তিনটি স্কুল অর্থাৎ বেগম রোকেয়া খন্দকার পৌর উচ্চ বিদ্যালয়, শাহীন প্রি ক্যাডেট স্কুল ও ১০৮ নং বেগম রোকেয়া খন্দকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনেই প্রধান সড়কে ও আশেপাশের শাখা সড়কে প্রতিদিন বসছে মাদকের হাট। রোকেয়া স্কুলের বিপরীতে একটি গলির শেষ প্রান্তে বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে মাদক বিকিকিনির স্পট গড়ে তুলেছিল। ওই টিনশেড বাড়ির একটি কক্ষে সিসি টিভি ক্যামেরা বসিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করতো মাদক সম্রাট সেলিম, রাসেল, পোড়া কাকনরা।
দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গেলে সেখানে মাসদাইর ঘোষেরবাগের দুর্ধর্ষ মাদক সম্রাট জাহিদ, মাসদাইরের সেলিম কসাই, উজ্জলসহ ৪ জনকে আটক করে। এসময় বাড়ির সামনে উপস্থিত ছিল মাদক সম্রাট সেলিমের বাবা নাসির কসাই। নাসির কসাই গলি থেকে বের হতে না হতেই ধারালো অস্ত্রসহ রসা কসাইয়ের ছেলে শাওন, সাহা কসাইয়ের ছেলে শামীম, হৃদয়, ইয়াসির, গালকাটা ফারুকসহ ২০-২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে মাদক সম্রাট জাহিদসহ আটককৃতদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া হামলা করাকালীন সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআরও নিয়ে যায়।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকে মাসদাইর বাজারের মাদকের হাটের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যাতে স্কুলের সামনে সড়কে মাদক বিক্রি করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল এবং প্রকাশ্যেই যে মাদক বিক্রি করা হচ্ছে সেটি সচিত্র দেখানো হয়। এরপরে গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ প্রকাশের পরে মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা কমলেও গেল বছরের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পরে আবারো মাদক সম্রাট সেলিম, রাসেল, পোড়া কাকনরা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন মাসদাইর বাজারে মাদক ব্যবসায়ী পোড়া কাকন এবং সেলিম কসাই ও রাসেল কসাইদের মাদক বিক্রির স্পট ছিল রিকশার গ্যারেজগুলোতে। তবে পোড়া কাকনের ভাই নয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের নেতা হওয়ার সুবাদে এলাকায় বাড়ে আধিপত্য। বিগত দিনে মাদক বিক্রি বন্ধে একাধিকবার র্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনকে লিখিত আকারে জানালেও কোন ধরনের প্রতিকার হয়নি। মাদক সম্রাট পোড়া কাকনের বিরুদ্ধে ডজন খানেকের বেশি মামলা রয়েছে। সেলিম রাসেল জাহিদ উজ্জলরাও একাধিক মামলার আসামী। সেলিম বর্তমানে হাবিব মিয়ার বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানেও মাদকের স্পট গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :