তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪৬ মাস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ৮ মে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজন করে।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন, সিপিবির শহর সভাপতি আবদুল হাই শরীফ, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সুবর্ণগ্রাম ফউিণ্ডেশনের সভাপতি কবি শাহেদ কায়েস, বাসদের জেলা সংগঠক এসএম কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।
রফিউর রাব্বি বলেন, শেখ হাসিনার দুর্বৃত্ত লালনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ত্বকী হত্যা। শামীম ওসমানের মতো নিজ দলের দুর্বৃত্ত, গডফাদারদের রক্ষা করতে সাড়ে এগারো বছর তিনি ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছেন। নারায়ণগঞ্জে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজের মাধ্যমে মাফিয়াদের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তারা মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। আজ তারা পালিয়ে গেছে, কিন্তু আবার নতুন দখলদার তৈরি হচ্ছে। শামীম ওসমানের সন্ত্রাসীরা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে ঢুকে যাচ্ছে। ওসমান পরিবার ও তাদের ক্যাডারাদের দখলে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নতুন দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে। নতুন নতুন চাঁদাবাজ, গডফাদার তৈরি হচ্ছে। সরকারকে এ সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর তদন্তকারী সংস্থা র্যাব ত্বকী হত্যার বন্ধ থাকা তদন্তের কাজ আবার শুরু করছে। সময় অনেক হয়েছে। অতিদ্রুত অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিতে হবে। হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, ক্যাডার শাহ নিজাম সহ হত্যায় জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কেউযেন আইনের ফাকফোকড় দিয়ে বেড়িয়ে যেতে না পারে তা নিশ্চিৎ করতে হবে। সঠিক বিচার নিশ্চিৎ করে, তাদের দেশে এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম প্রশ্ন করে বলেন, শামীম ওসমান ত্বকীকে হত্যা সাথে জড়িত বলেই ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এখন বিচারটা কেন আটকে আছে? বাঁধাটা কোথায়? তিনি র্যাবের উদ্দেশ্যে বলেন যদি অভিযোগপত্র দিতে না পারেন তবে পদত্যাগ করেন। বিচারতো করতেই হবে। আমরা বিচার চাইবোই, তা আদায় করে নেব।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু এর তিন মাস পর শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলে বিচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সে অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
আপনার মতামত লিখুন :