অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করে যানচলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া নগরীর মীরজুমলা সড়কে যান চলাচলের রাস্তা সংকুচিত হয়ে আসছে। এভাবে চলতে চলতে অতীতের মত একটা সময় এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে নগরীবাস। জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন থেকে কিছুদিন লাগাতার অবৈধ উচ্ছেদের কারণে যান চলাচলের উপযুক্ত ছিল মীরজুমলা সড়ক।
যখন থেকে সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এরপর থেকে ধীরে ধীরে মীরজুমলা সড়কে আবারো দুইপাশের রাস্তায় দোকানপাট বসতে শুরু করে ধীরে ধীরে পুরো রাস্তাই দখল করে নিচ্ছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের টানা অভিযানের প্রেক্ষিতে যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত হয়ে ছিলো শহরের মীর জুমলা সড়ক। রাস্তার দুপাশে অবৈধ দোকানপাটের কারণে সড়কটির অর্ধেকের বেশি অংশ দখল হয়ে ছিলো। ফলে এই সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন তো দূরের হালকা যানবাহন চলাচল করাও মুশকিল ছিলো। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের টানা কয়েকদিনের যৌথ অভিযানে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ এবং রাস্তা থেকে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছিল।
সড়কটিতে ভারী যান চলাচল শুরু হওয়ায় বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই নং রেলগেট এলাকায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু সড়ক দখল মুক্ত হওয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় আবারো ধীরে ধীরে সড়কের দুই পাশে অবৈধ দোকানপাট গুলো বসতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটি যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি ফাঁকা করা হয়েছিল। কিন্তু আবারো রাস্তার দুপাশে অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে দখল করা হয়েছে। ফলে এই সড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী বাস ঢুকলে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। দুপাশে দোকান বসিয়ে রাস্তা সংকুচিত করে ফেলায় এখন আর আগের মত দ্রুত বাস গুলো বের হয়ে যেতে পারছে না। ফলে মীরজুমলা সড়কেও যানজট লেগে যাচ্ছে।
বাজার করতে আসা বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমার আসলে নিজেরাই ভাল হতে পারিনি। নারায়ণগঞ্জে একজন ডিসি এসেছেন অন্য জেলা থেকে চাকরি করতে। উনি নারায়ণগঞ্জ শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আমরা সেই খবর গুরো দেখতে পাই। অথচ আমরা যারা এই শহরে বসবাস করি আমরা উনাকে সহযোগিতা করছি না। আমরা নিজেরাই নিজেদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে রাখছি। এসব থেকে যতদিন না পর্যন্ত আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো ততদিন আমাদের শহরের পরিবর্তন সম্ভব নয়। শুধু প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দোষ দিয়ে তো কোন লাভ হবেনা যদিনা আমরা নিজের সংশোধন হই তাহলে কোন ফলাফলই আসবে না।
এদিকে বুধবার ৭মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত যানজট নিরসনে করনীয় সম্পর্কে আলোচনা সভায় মীরজুমলা সড়কের বিষয়টি উঠে এসেছে। অবৈধ দোকানপাটের কারণে মীরজুমলা সড়কটি আবারো দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে ওই সড়ক দিয়ে এখন আর আগের মত বাস গুলো চলাচল করতে পারছেনা বলে অভিযোগ করেন বাস মালিক সমিতির নেতারা। তারা মীরজুমলা সড়কে আবারো সিটি কর্পোরেশনের অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন।
তথ্য মতে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বাস গুলো টার্মিনালে প্রবেশ করে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেট অতিক্রম করে মীরজুমলা সড়ক দিয়ে ঢুকে চারারগোপ দিয়ে ৫নং হয়ে টার্মিনালে প্রবেশ করতে শুরু করেছিলো। এতে করে বঙ্গবন্ধু সড়কের দুইনং রেল গেইট এলাকায় চাপ কমতে শুরু করে ছিল। পাশাপাশি রমজান মাসের পূর্বে নগরীতে যে পরিমান যানজট বঙ্গবন্ধু সড়কে দেখা যেতো সেটা কমতে শুরু করেছিল। কারণ সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ন দুটি সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেগুলো হলো নগরীর শায়েস্তা খান সড়ক ও সিরাজদৌল্লা সড়ক। মূলত এই দুটি সড়ক দিয়েই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বাস গুলো কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে প্রবেশ করতো। সড়ক দুটি বন্ধ থাকায় বঙ্গবন্ধু সড়কের উপর চাপ বেড়ে যায় আর নগরীতে দেখা দেয় অসহনীয় যানজট। মীরজুমলা সড়ক সেই যানজট লাগবে কিছুটা সহায়ক হয়ে স্বস্তি দিতে শুরু করেছিল।
সবশেষ গত ৬ই মার্চ জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মোনাব্বর হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এদিকে সড়কটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দূর দূরান্ত থেকে আগত ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দে এখন দিগুবাবুর বাজার থেকে কেনাকাটা করতে পারছে। একই সঙ্গে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন মীর জুমলা সড়কে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়কটি হকার বসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সড়কটি দৃষ্টিনন্দন করতে পরিষ্কার করে চকচকে করা হয়েছিল। খুব শিগগিরই সড়কটির দেয়ালে নানান ছবি আঁকার পাশাপাশি সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তার আগে, এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. তামশিদ ইরাম খান বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক মীর জুমলা রোড সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। রোডের দুইপাশে বাঁশ দিয়ে গাড়ি চলাচলের পথ বন্ধ করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য টিআইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চারুকলা প্রিন্সিপালের সাথে কথা হয়েছে। তারা শহীদ মিনারে কার্যক্রম শেষ করে মীর জুমলা রোড আলপনা করবেন। এতে করে যাত্রী এখানে চলাচল করার সময় এর সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবেন।
এর আগে, নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেই অচল শহর সচল করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় মীর জুমলা সড়কে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে যান চলাচলের জন্য সড়কটিকে উপযোগী করে তোলা। সেই লক্ষ্যেই কিছুদিন পর পরই সড়কটিতে অভিযান পরিচালনা শুরু করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনও উপস্থিত ছিল।
প্রশাসনের অভিযানের পাশাপাশি সড়কটি অবৈধ হকার থেকে দখল মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তিনি নিজের অনুসারীদের নিয়ে বেশ কয়েকদিন মীরজুমলা সড়কটি গিয়ে অবৈধ দোকানদারদের রাস্তায় দোকান না বসানোর অনুরোধ করেন। এ সময় এক মাছ বিক্রেতার সাথে টিপুর বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হলে টিপুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন অবৈধ দোকানদাররা। টিপুকে চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে দ্বিগুবাবুর বাজারের প্রবেশ মুখে ব্যানার টানানো হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :