নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক (বিবি রোড) দুই স্তরে ড্রেনেজ কাজ চলমান অন্যদিকে শায়েস্তা খান রোড (পুরাতন কোর্ট) সড়কটি ড্রেন নির্মাণ কাজ ধীরগতি হয়ে পড়ে আছে। যার ফলে টানা বৃষ্টিতে রাস্তা দুই পাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এতে জনসাধারণ চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নগরে আসা যাওয়া সাধারণ মানুষ। কর্মজীবী মানুষ কর্ম প্রতিষ্ঠানে, শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে আসা যাওয়া নিয়ে জনসাধারণ দিনে দিনে অনিরাপদ নগর দেখতে পাচ্ছেন।
আমলাপাড়া বাসিন্দা জাহানারা বেগম ক্ষোভে জানান, সন্তানদের নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার যেন মৃত্যুর সাথে লড়াই করা। যানবাহন তো দূরে কথা হেঁেট বাসা থেকে বের হলে ভয়ে বুক কেপেঁ উঠে। প্রতিদিন স্কুল যেতে বাড়তি অর্থ সহ সময় অপচয় হচ্ছে। দিনে দিনে শহরের যানজট আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক হাসান মাহমুদ জানান, দিনে দিনে শহরের অটোরিকশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একাধিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে শহরে প্রবেশ করছে। যার ফলে আমাদের মত চালকরা দিনে যাত্রী সংকটে থাকি, বেশিভাগ সময়ে যানজটে পড়ে থাকতে হয়। এর প্রতিকার কে দিবে উত্তর পায় না।
পুরাতন কোর্টের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লাখ লাখ টাকা ব্যবসায় নিয়ে বসেছি চাহিদা মত ক্রেতা পাচ্ছিনা। যার কারলে গত তিন মাস যাবৎ ক্ষতিসাধন হয়েছে প্রতিষ্ঠানে। পুরো সড়ক জুড়ে ড্রেন নির্মাণ কাজটি ধীরগতিতে হওয়ায় ব্যবসায়ীদের যেন ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অনিরাপদে রয়েছে জনসাধারণ।
বুধবার ২১ মে নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসন ও ড্রেনেজ সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়ে নাসিক প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। চেম্বারের সহ-সভাপতি মো. আবু জাফর এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠক করে এবং চিঠি হস্তান্তর করে। এতে আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে নগরীতে চলমান ড্রেন নির্মাণ কাজের কারণে রাস্তার নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখা এবং যেখানে খনন রয়েছে তা দ্রুত সম্পন্ন করার অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, ড্রেন নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হওয়ায় ঈদের সময় জনসাধারণ, ব্যবসায়ী ও কোরবানির পশুবাহী যানবাহনের চলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে। সেই কারণে চেম্বার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানায়।
ভয়ারহ যানজট নিরসনে স্থায়ী সমাধান নেই জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের। নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট এখন নিত্যদিনের ভোগান্তি। সপ্তাহের পাঁচটি কর্মদিবস সহ সাতদিনই নগরবাসীকে জর্জরিত করে এ সমস্যা। বিভিন্ন সময় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। গত বছর শেষ সময় থেকে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া, বঙ্গবন্ধু সড়ক, মীর জুমলা সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও বাস কাউন্টার উচ্ছেদ করা হয়। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আরোপ করা হয় অর্থদণ্ড।
পবিত্র রমজান মাসে গত ৬ মার্চ চাষাঢ়া থেকে মীর জুমলা সড়ক পর্যন্ত অভিযানে রাস্তার ওপর থাকা ভাসমান দোকান, ভ্যান ও মোটরসাইকেল সরিয়ে নেওয়া হয়। লা ভিস্তা রেস্টুরেন্টের দখলে থাকা ফুটপাতও উচ্ছেদ করা হয়। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘বাস কাউন্টার ও ট্রাক দাঁড়ানোর কারণে চাষাঢ়ায় যানজট তৈরি হয়। নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। এখানে নো-পার্কিং জোন নির্ধারণ করা হয়েছে।’
এর আগে ফেব্রæয়ারিতে জেলা প্রশাসনের একাধিক অভিযানে ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ, জব্দকৃত মোটরসাইকেল ডাম্পিং এবং সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী জরিমানা আদায় করা হয়। জানুয়ারি মাসে নতুন জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা শহরের প্রধান সমস্যা হিসেবে যানজটের কথা তুলে ধরেন। ডিসি আশ্বাস দেন, যানজট ও হকার সমস্যা সমাধানে আমরা সময়সীমার মধ্যেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে চাই। তবে বাস্তব চিত্র বলছে, উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা আসলে শহরে ‘ভেল্কি’ দেখায় ট্রাফিক পুলিশ; যানজট থাকে না। আবার তারা চলে গেলে ফের অটোর জঞ্জালেই নাকাল হয় নগরবাসী।
‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচির অধীনে নারায়ণগঞ্জকে পরিবেশবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন এপ্রিল শেষ সময়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ অভিযানে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং যানজট সৃষ্টিকারী যানবাহন অপসারণ করা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল অভিযানটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু করে সাইনবোর্ড পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। অভিযানে মূল সড়কের দুই পাশে থাকা অবৈধ ব্যানার ও সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়। পাশাপাশি, চারটি অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিনের জঞ্জাল ও অপরিচ্ছন্নতা দূর হয়েছে।
যানজট নারায়ণগঞ্জের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। আজকের অভিযানে জেলা প্রশাসন এ বিষয়েও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। রাস্তায় যেখানেই যানজট সৃষ্টিকারী যানবাহন দেখা গেছে, তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলোকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :