গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর বিএনপি সহ তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন। ইতোমেধ্য অনেক অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনেকে আবার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন।
কিন্তু এখনও আগের অবস্থানেই রয়ে গেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আশ্রাফুল ইসলাম নিরব। তিনি আগেও যেরকম ছিলেন এখনও সেই আগের মতই রয়ে গেছেন। তার সমবয়সী অনেক ছাত্রদল নেতা ইতোমধ্যে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটালেও মো. আশ্রাফুল ইসলাম নিরব যেন তার ধারে কাছেই নেই।
দলের প্রতি প্রচন্ড শ্রদ্ধাবোধ থেকেই তিনি সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। অনেক সময় ভালো কিছু করতে গেলেও বিপক্ষ গ্রুপ শত্রুতাবশত নেতিবাচক প্রচারণা করে থাকে। যা দলের উপর গিয়ে বর্তায়। তাই আপাতত দলের সম্মানকে প্রাধান্য দিয়ে কোনো কিছুতেই জড়াচ্ছেন না। ছাত্রদল নেতা হিসেবে বিভিন্ন সুযোগের হাতছানি থাকলেও সেগুলোর দিকে তার যেন কোনো নজরই নেই।
দলীয় সূত্র বলছে, ২০১৭ সালে প্রথম নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও প্রয়াত নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রশিদুর রহমান রুশুর ডাকে বিএনপির মিছিলে রাজপথে নামেন মো. আশ্রাফুল ইসলাম নিরব। সেই থেকে শুরু নিরবের রাজিনীতির পথচলা। এরপর থেকে বিএনপির বিভিন্ন সভা সমাবেশে শত শত লোক নিয়ে জড়ো হতেন নিরব।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বিএনপি নেতা মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সভা সমাবেশে প্রায় সময় সামনের সারিতে দেখা যেতো নিরবকে। ঐসময় অনেকেই হামলা, মামলার ভয়ে বিএনপির মিছিলে যেতে ভয় পেতো। ঠিক তখনই অকুতভয় নিরব নিজের জীবনের মায়া, পরিবার- স্বজনের কথা না ভেবে লড়াকু এক সৈনিকের মতো প্রতিনিয়ত তার সহ- যোদ্ধাদের সাথে রাজপথে থেকে লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও নিরবের কোন পদ-পদবি ছিলো না। তবুও তিনি থেমে ছিলেন না। পদ-পদবিকে গুরুত্ব না দিয়ে দলের স্বার্থে সবসময় কাজ করে গেছেন তিনি। রাজপথে থেকে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ অনুযায়ী সর্বদা সংগ্রাম করে গেছেন তিনি।
এরই মধ্যে ২০২৪ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটিতে সহ-সাধারণ সম্পাদকের পদটি অর্জন করে নেন মো. আশ্রাফুল ইসলাম নিরব। এর পর থেকেই আরও সক্রিয়ভাবে নেমে পরেন রাজপথে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা সকল সভা সমাবেশে তার নেতৃতে শত শত লোক নিয়ে জড়ো হতেন তিনি।
বিগত সময়ে নানা সভা, সমাবেশে নানা হামলার শিকারও হয়েছেন নিরব। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শহরে ২ নং গেইটে পুলিশের রাবাব বুলেটেবিদ্ধ হয়ে গুরুত্বর আহত হয়েছিলেন নিরব। আহত হয়ে দির্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সুস্থ হয়ে আবারও রাজপথে ফিরেন তিনি। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিলো। নারায়ণগঞ্জের রাজপথ সরব রাখার তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। তিনি পরোক্ষভাবে থেকে ছাত্রদের সমর্থন যোগিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশের অভিযানে নিরব বাসায় থাকতে পারে নাই। তার পরেও তিনি প্রতিটা আন্দোলনে তার ভূমিকা রেখে ছিলো নিরব।
বর্তমানে বিএনপির ছাত্র নেতাদের উপর চাঁদাবাজি, দখলবাজি সহ নানা অভিযোগ থাকলেও ছাত্র নেতা মো. আশ্রাফুল ইসলাম নিরবের বিরুদ্ধে কোথাও কোন অভিযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করতে পারবে না। কেউ কোনো চাঁদাবাজি হুমকি ধমকি মারধরের অভিযোগ করতে পারবে না। বরং তিনি সবসময় এসবের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় ৯ মাসের মধ্যে বর্তমানে একেবারেই খালি মাঠে থাকা নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদের কেউ কেউ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। কয়েক মাসের ব্যবধানের নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের কেউ কেউ গাড়ি ও বাড়ির মালিক হয়ে গেছেন।
বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা যেন এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। মূলদল বিএনপি সহ বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পদে থাকা নেতাদের অনেকেই গাড়ি ও বাড়ি সহ বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। নেতারা উচ্চ বিলাসী জীবন যাপন শুরু করছেন। নেতারা দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলেন। আবার কেউ কেউ অর্থ সম্পদের মালিক হলেও তারা আপাতত নিরব ভূমিকায় রয়েছেন। তার বিপরীতে মো. আশ্রাফুল ইসলাম নিরব একেবারে সাদাসিদে জীবন যাপন করে আসছেন।
আপনার মতামত লিখুন :