নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের গতি ফেরাতে এবার সকল বলয়ের সিনিয়র আইনজীবীরা সকলেই একমঞ্চে উঠেছেন। সেই সাথে সকলেই একমঞ্চে উঠে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। আগামী দিনে কিভাবে একটি সফল সম্মেলন করা যায় সেই বিষয়েও আলাপ আলোচনা হয়েছে। তবে সকলের বক্তব্য হচ্ছে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের আইনজীবী ফোরামের শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়।
আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন পর আইনজীবীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২১ মে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনের তৃতীয় তলায় এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
আর এ মতবিনিময় সভাকে কেন্দ্র করে এদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আইনজীবীরা অনুষ্ঠানস্থলে চলে আসেন। সেই সাথে অনুষ্ঠানস্থল পরিপূর্ণ হয়ে উঠে আইনজীবীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। প্রায় দেড়ঘণ্টা সময় নিয়ে আইনজীবীরা মতবিনিময় সভায় অবস্থান করেন। সেই সাথে সিনিয়র পর্যায়ের প্রায় সকল আইনজীবীই উপস্থিত ছিলেন এই মতবিনিময় সভায়।
সূত্র বলছে, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা নানাভাবে নির্যাতিত নিপেড়িত নিস্পেষিত হন। কেউ বা গুমের শিকার হয়েছেন আবার কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
বিগত প্রায় ১৬ বছরে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির আইনজীবীরাও স্বস্তিতে থাকতে পারেননি। তাদেরকেও নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়ন অপমান অপদস্থ হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। আইনজীবীরা নিরাপদে ভোট দিতে পারেননি। নির্বাচনের সময় বহিরাগতরা আদালতপাড়ায় এসে শোডাউন দিয়েছেন। আইনজীবীদেরকে হেনেস্তা করেছেন।
এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরাও আত্মগোপনে চলে যান। তাদের এই আত্মগোপনে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর আইনজীবী সমিতির কর্তৃত্বে আসেন বিএনপির আইনজীবীরা।
তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসা নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী ফোরামকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হঠাৎ করেই গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই কমিটি বাতিল করা হয়।
সেই সাথে গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর এই কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন. সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট বেনজির আহমেদ এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট কাজী আব্দুল গাফফার।
সেই সাথে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন-অ্যাডভোকেট জহিরুল হক, অ্যাডভোকেট মেহেবুব আরেফিন শিমু, অ্যাডভোকেট কারসার আলম চৌধুরী টুটুল, অ্যাডভোকেট আসমা বিথি, অ্যাডভোকেট শামছুন নুর বাঁধন। তাদেরকে আগামী তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে এই কমিটি সর্বোচ্চ ৩১ সদস্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
আর এই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি বাতিল ও নতুন কমিটি গঠনের পর থেকেই সম্মেলন নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা চলমান রয়েছে। সম্মেলনে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বদ্বীতা করার প্রত্যাশা নিয়ে অনেকেই নিজেদের বিভিন্নভাবে জানান দিয়ে আসছেন। সেই সাথে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে নিজেদের আলোচনায় রাখছেন। একই সাথে আদালতপাড়ায় বিভিন্ন বলয় গড়ে উঠেছে।
এর আগে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুইটি প্যানেল ঘোষণা দেন। একটি প্যানেলের প্রতিদ্ব›দ্বীতায় ছিলেন সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আজিজ আল মামুন, সহ সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সীমা সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আলী হোসাইন।
অন্য প্যানেলের সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির, সহ সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আজিজুল হক হান্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার প্রধান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন। সম্মেলন শেষে তাদের জয় হয়।
এদিকে ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ১২৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। আর এই কমিটিতে গত ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর নির্বাচিত ৫জনকে স্বপদে বহাল রাখা হয়। সেই সাথে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ওইদিন থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। সে হিসেবে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :