একসময় যে খাল দিয়ে চলতো স্রোতধারা, সেখানে এখন স্তূপ করে ফেলা হচ্ছে ময়লা। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কালিয়ানী খাল দীর্ঘদিন ধরে ময়লা ফেলে ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন নাসিকের ১৩নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। পরে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে পড়ে। ৯ জুলাই বুধবার দুপুরে খালটিতে অভিযান চালান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী। এসময় ঘটনাস্থল থেকে নাসিকের দুটি ময়লার গাড়ি জব্দ করা হয় এবং খালে ময়লা না ফেলার নির্দেশ দিয়ে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কালিয়ানী খালটি অনেক আগের। আগে খালের পানি স্বচ্ছ ছিল। দুই পাড়ের বাসিন্দারা গোসল করতেন। বর্ষাকালে খালজুড়েই ফুটে থাকতো শাপলা ফুল। একইসঙ্গে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। জাল ফেললেই হরেক রকমের মাছ পাওয়া যেতো। বর্তমানে খালটির বেহাল অবস্থা। পানিতে গোসল করাতো দূরের কথা, অস্বচ্ছ পানি শরীরের লাগলেই চর্মরোগ হওয়ার শঙ্কা। অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্যে সংকীর্ণ আকার ধারণ করেছে খাল।
খালটি দখলের বিষয়ে ওই ফেসবুক পোস্টে নাসিকের ১৩নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জের অন্যতম বৃহৎ খাল কালিয়ানির বা কাইল্লানির খাল। যা বিসিক থেকে কাশিপুর হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। নাসিকের ১৩ ও ১৪নং ওয়ার্ড ও এনায়েতনগর ইউনিয়নের পানি নিস্কাসনের একমাত্র পথ। এই খাল কাশিপুর অংশে প্রসস্থ প্রায় ১০০ ফুট। কিন্তু বিভিন্ন উপায়ে খাল দখলের মহা উৎসবের পাশাপাশি কাশিপুর ইউনিয়নের গৃহস্থালি বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সরাসরি খালে ফেলে খাল ভরাট করে ফেলছে সবার চোখের সামনে। এত বড় খালের এখন মাত্র ৫ ফুট জায়গা দিয়ে পানি যায়। আশা করি, আগাী একমাসের মধ্যে খালটি পুরোপুরি ভরাট হবে যাবে। দেখার কেউ নাই। সমাজের মেম্বার চেয়ারম্যানসহ সবাই যেনো আমরা অন্ধ হয়ে গেছি। নিজের কবর নিজেরা খুড়ছি। বর্তমান পরিবেশবান্ধব জেলা প্রশাসক মহোদয় কি দয়া করে দেখবেন বিষয়টি? আমার প্রশ্ন গৃহস্থালি বর্জ্য সংগ্রহকারী সংগঠনগুলো ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে থাকে। কিভাবে ইউনিয়নের মেম্বার চেয়ারম্যান, সচিব বা তাদের নিয়ন্ত্রণকারী উপজেলা পরিষদ বা স্থানীয় সরকার বিভাগ সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করেন। এছাড়া বিসিকের গার্মেন্টস মালিকরাও দীর্ঘদিন যাবত ওয়েষ্টেজ ও নির্মাণ সামগ্রী ফেলে বিসিক অংশে খালটিকে হত্যা করছে। ফলে বৃষ্টি হওয়ার আগেই নাসিকের ১৩নং, ১৪নং ওয়ার্ড ও এনায়েতনগর ইউনিয়ন জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরৗ বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে পড়ামাত্রই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় নাসিকের দুটি ময়লা গাড়ি জব্দ করা হয়। এর আগে নাসিক এখানে ময়লা ফেলতো। আমরা তখন বাধা দিয়ে এখানে ময়লা ফেলতে নিষেধ করি এবং তা নাসিক কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করি। কিন্তু এর কিছুদিন পর আবারও ময়লা ফেলা শুরু হয়। বর্তমানে খালে ময়লা না ফেলার নির্দেশ দিয়ে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এ নিয়ে নাসিকের সঙ্গে কথা বলা হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাকির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :