বিএনপিতে ফেরানো হয়েছে আতাউর রহমান মুকুলকে। ২০২৪ এর ৭ জানুয়ারীর সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষ নেওয়াতে তাকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়। যদিও শুধু ওই নির্বাচন না বরং এর আগে থেকেই সেলিম ওসমানের জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন তিনি। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে গালি দেওয়ার সময়ে মুচকি হাঁসি, ত্যাগী নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হাজী নুরুদ্দিনকে দল থেকে বহিস্কার করানো সহ নানা অভিযোগ আছে। এছাড়া গত সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী এসএম আকরামের অভিযোগ ছিল মুকুল সরাসরি ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছিল।
এরই মধ্যে আবার আলোচনায় ছিলেন আতাউর রহমান মুকুল। বিএনপির বহিস্কৃত এ নেতা এবার বিএনপির লোকজনদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। জামা কাপড় খুলে দিগম্বর করা হয়। ২৯ জুন বন্দরের হরিহরপাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে ওই ঘটনা ঘটে।
২০১৪ সালে বিএনপি তখন বন্দর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যানের জন্য নুরুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করে। তখন বন্দরের কমিটি নিয়ে মুকুল ও নুরুদ্দিনের মধ্যে তুমুল বিরোধ চলছিল। শহরের মাসদাইরে তৈমূরের বাসায় উভয় পক্ষকে নিয়ে তৈমূর দফায় দফায় বৈঠক করলেও সুরহা করতে পারেনি। তখন মুকুল ও নুরুদ্দিন উভয় নিজেকে বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি পরিচয় দিত। এ নিয়ে বন্দরে তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। ওই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের একদিন আগে এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া থানা বিএনপির একাংশের সভাপতি হাজী নরুদ্দিনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দিলে নুরুদ্দিনকে বহিস্কার করে কেন্দ্র। তখনকার সময়ে সেলিম ওসমান নিজেই মুকুলকে সমর্থন করেন।
-20251126171541.jpg)
২০১৪ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির কোন প্রার্থী না থাকায় ক্ষমতাসীন দল জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে পরোক্ষভাবে নিজ সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করেন আতাউর রহমান মুকুল। যদিও তৎকালীন সময়ে বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল তারা কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কেন্দ্রীয় এই সিদ্ধান্তকে অনেকটা উপেক্ষা করেই সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করেন আতাউর রহমান মুকুল। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর বিজয় র্যালীতে উপস্থিত থেকে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের মধ্যেও ছিলেন বিএনপি মুকুল।
২০১৫ সালের বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান বন্দরে সংবর্ধিত হয়ে বক্তব্যে মুকুলকে ‘নাকে খত’ দিয়ে বিএনপি ছেড়ে এলাকাতে ফিরে আসার আহবান জানান। এর সপ্তাহখানেক পরেই মুকুল এলাকাতে ফিরে আসেন। এর পর থেকেই তিনি নিয়মিত এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ শুরু করেন।
২০১৫ সালের ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে কুকুর বলে গালি দিয়েছিলেন কমান্ডার গোপীনাথ। আর এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তৎকালিন বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। ওই সময় তিনি কোনো প্রতিবাদ করেননি। বরং মুচকি হেঁসেছিলেন।
ক্ষমতাসীন দলের সাথে সমঝোতার অংশ হিসেবে সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সরাসরি মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের জন্য আতাউর রহমান মুকুল আদাজল খেয়ে মাঠে নামেন। খোদ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এস এম আকরামের অভিযোগ ছিল নির্বাচনের দিন অর্থ্যাৎ ৩০ ডিসেম্বর মুকুল বিএনপির ভোটারদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন।
আকরাম নিজেই সেই অভিযোগ করেন। সেই ভোটের ৪ বছর পরে প্রত্যক্ষদর্শী একজন দিয়েছেন বর্ণনা। সেখানে উপস্থিত এক নেতা বলেন, ‘বন্দর থানায় যে কয়জন আওয়ামী লীগের নেতা আছে আমার ভাই শাজাহান মোল্লা, আমার চাচাতো ভাই ফারুক আমাকে ডাক দিয়ে বললো ভিতরে কয়জন নেতা আছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রের ভিতরে গেলাম। আমাকে দেখে তারা হতভম্ব হয়ে যায়। সে কারণে তখনো ভোটকেন্দ্র চুরি হয়ে যায় নাই। তখন আমার ভাইকে বলি তোরা রাতে কেন্দ্র পাহারা দে। আমি এখন ঘুম দেই। তাহলে সকালে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে পারবো। যেহেতু কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে। তাই আমরা কোনো কিছু কানে না দিয়ে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিয়েছি। আমরা নেতাকর্মীদের বলে দেই সবাইকে ১ঘণ্টার মধ্যে ভোট দিয়ে দিতে। যেনো ওরা পরবর্তীতে কোনো ঝামেলা না করতে পারে। আমজাদসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতারা এই ভোটকেন্দ্র দখল করেছিল। এসময় আতাউর রহমান মুকুল ভাই ওইখানে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে বলে তুই বিএনপি হয়ে গেছোস। এখান থেকে চলে যা। তিনি আমাকে গালাগালি করলো। ওনার সাথে তখন রশিদ চেয়ারম্যান ছিল। আমাকে তারা বলে এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ আছে। তিনি না বললে আমাকে ভোটকেন্দ্র থেকে কেউই বের করতে পারতো না। আমি বাধ্য হয়ে ভোটকেন্দ্র ছেড়ে চলে আসি। তখন ওনারাই সিল মারা শুরু করেছে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপি সরকার পতন আন্দোলনে রাজপথে নামেন। পরবর্তিতে ২৮ অক্টোবর এক দফা বাস্তবায়নে বিএনপি ব্যাকফুটে চলে গেলে মুকুল সহ মহানগর বিএনপি বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা আত্মগোপনে চলে যায়। ২৯ অক্টোবর থেকে লাগাতার আন্দোলনে হরতাল-অবরোধে দেখা যায়নি বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাদের। বরং ২৬ ডিসেম্বর বন্দরের সমরক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সেলিম ওসমানের নির্বাচনী সমাবেশে বিদ্রোহী গ্রুপের বন্দর থানা বিএনপির আহ্বায়ক হান্নান সরকার, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ ও যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নবী মুরাদ হন। তারা সকলেই তৎকালীন মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুলের আস্থাভাজন নেতা। দলের নিদের্শনা অমান্য করে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী সেলিম ওসমানের নির্বাচনী প্রচারে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মহানগর বিএনপির ৬ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এক বিজ্ঞপ্তিতে মুকুল সহ ৬জনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ তাদের দলীয় সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, বন্দর উপজেলা বিএনপি নেতা হান্নান, সুলতান আহম্মেদ, গোলাম নবী মুরাদ।
৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর মহানগর বিএনপি একটি সমাবেশে মুকুলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেন বন্দর থানা বিএনপি সভাপতি শাহেনশাহ আহম্মেদ। তিনি বলেন, কানা মুকুল বিএনপি ক্ষতিকারক ওই বিএনপি কে? শেখ হাসিনার প্রেআত্মা কানা মুকুল ও কাউসার হাত থেকে আপনারা সাবধান। ওরা কখনো বিএনপি করে নাই, ওরা বিএনপি সাথে জড়িত ছিল না। কোন মিছিল মিটিংয়ে ছিল না, আপনারা কেউ ওদের কাছে যাবেন না, দূরত্ব থাকবেন। কাউসার স্ট্যান্ড প্রতিষ্ঠান দখল করে যাচ্ছে। আর নাম পড়তাছে আমাদের বিরুদ্ধে। এই কারণে সাখাওয়াত ভাই টিপু ভাইদের বদনাম করার চেষ্টা করতাছে। তাই ওই কানা মুকুল ও কাউসারের থেকে সকলে সাবধান থাকবেন।



-20251126171839.jpg)




































আপনার মতামত লিখুন :