News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

তোলারামে ছাত্রলীগ রূপে ‘ছাত্রদল’


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ১১:১০ পিএম তোলারামে ছাত্রলীগ রূপে ‘ছাত্রদল’

নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে নিজেদের কদর্য রূপ মেলে ধরতে শুরু করেছেন। দুটি ঘটনায় ইতোমধ্যে তীব্র সমালোচিত হয়েছে কলেজ ছাত্রদল। এর বাইরেও কলেজ রোড, রূপায়ন ভবন এবং এর আশেপাশের বেশ কিছু রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী নানাভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভয়ে মুখ খুলতে পারেননা অনেকেই।  তবে দুটি ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় মুখ খুলতে শুরু করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গত মঙ্গলবার রাত ৮টায় তোলারাম কলেজ ছাত্রাবাসে গানের ভলিউম কমাতে বলায় মারধরের শিকার হয়েছেন তোলারাম কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়ায়েজ করনী। কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ অপু এই মারধরের ঘটনা ঘটায়। মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠে। এই ভিডিওকে ছড়িয়েছে তা জানতে চেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি দিতে থাকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী থানায় সাধারণ ডায়েরী এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ভুক্তভোগীকে কয়েদফা শাসিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষার্থী ওয়ায়েজ করনী।

ভুক্তভোগী বলেন, ‘সন্ধ্যা সাতটার দিকে আমি হলের রিডিং রুমে পড়ছিলাম। সেসময় অপু ও তার কয়েকজন বন্ধু উচ্চশব্দে গান বাজাচ্ছিলো এবং ক্যারাম খেলছিলো। আমি গিয়ে বললাম ভলিউম কমাও, আমার পড়তে অসুবিধা হচ্ছে। এটা বলায় অপু বের হয়ে বলে সাউন্ড বাড়ায়া শুনছি আরও শুনবো, তোর সমস্যা কি? আমি উত্তরে বলেছি, তোমার যেমন হোস্টেলে অধিকার আছে, আমারও অধিকার আছে। এটা বলার পর সে আমাকে মারতে তেড়ে আসে। এক পর্যায়ে আমার কলার ধরে এবং লাথি দেয়।’

তবে এটাই প্রথম নয়। এর আগেও নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের ভেতরে আয়োজিত এক উদ্যোক্তা সম্মেলনে বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে অপমান অপদস্ত করে কলেজ থেকে বের করে দেয় কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে।

গত ১১ নভেম্বর উদ্যোক্তা সম্মেলন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হন মোহাম্মদ হাতেম। ছাত্রদল নেতারা তাকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে হইচই করেন এবং তাকে বের করে দেন। এরপর তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মনির হোসেন জিয়া বলেন, ‘সে একজন ফ্যাসিস্টের দোসর যে হাসিনাকে বিপুল পরিমান অর্থ দিয়েছিলো। এমন একজন দোসর আমাদের কলেজে এসে অনুষ্ঠান করবে সেটা আমরা মেনে নিতে পারিনা। আমাদের কলেজে চারজন শহীদ হয়েছে এই আন্দোলনে। তাদের রক্তের উপর পাড়া দিয়ে হাতেম আমাদের কলেজে আসবে এটা জেনে আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা তাকে ঘেরাও করে রাখতে চেয়েছিলো। আমরা তাকে বলেছি, আপনি বেরিয়ে যান।’

তবে এই ঘটনায় খোদ নিন্দা জানিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরাই।  অধিকাংশ নেতারাই বলেছেন, “ছাত্রদল নেতাদের এই ধরনের আচরণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। একজন শিল্পনেতাকে অপমান করা রাজনৈতিকভাবে শোভন নয়।”

ঘটনার বিষয়ে হাতেম সংবাদকর্মীদের বলেন, নারায়ণগঞ্জ লোকাল বিএনপির কেউ ছাত্রদলের কিছু ছেলে পাঠিয়ে সিন ক্রিয়েট করেছে। তারা কোনো আক্রমণ করেননি। তখন প্রোগ্রাম শেষের দিকে, আমি বের হবো। তখন ছাত্রদলের কয়েকজন ঢুকে আমাকে ফ্যাসিস্ট ও আওয়ামী লীগের দোসর বলতে থাকে। যার নেতৃত্বে এগুলো হয়েছে, সে আমার সম্পর্কে কিছু জানেই না। কেউ হয়তো ইনটেনশনালি তাদের পাঠিয়েছে।'

ঘটনার পর বেশ ফলাও করে নিজের কর্মের জন্য গর্ববোধ করলেও পরদিন দুঃখপ্রকাশ করে তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি। দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, ‘আবেগপ্রবন হয়ে তাকে কলেজ থেকে চলে যেতে বলেছি। সম্মানিত ব্যক্তির সাথে এই ধরণের আচরণ কাম্য না। এই ঘটনায় হাতেম সাহেব সহ সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্রমেই তোলারাম কলেজ ছাত্রদল ছাত্রলীগের রূপ ধারণ করছে। তারা ইতোমধ্যে ছাত্র সংসদ কক্ষ দখলে নিয়ে দলীয় কাজে ব্যবহার করছে। সেই ভিডিও আবার প্রচার করছে গর্ব ভরে। এটা দুঃখজনক যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ছাত্রদল এখন নিজেরাই ক্ষমতার চর্চা শুরু করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে। যা হতাশাজনক। এখনই এই আচরণে পরিবর্তন না আনলে সামনে বিপাকে পড়বে তারা।

Islam's Group