নানা নাটকীয়তা নানা কাহিনী নানা বক্তব্য পাল্টা বক্তব্যের পর ইউটার্ন নিয়েছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। স্বৈরাচারের দোসর সহ নানা ট্যাগ দিয়ে অবশেষে সেই বিএনপি দলীয় ঘোষিত প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের পক্ষে গিয়েছেন। সেই সাথে শুধু পক্ষে গিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি তার পক্ষে কাজ করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। একই সাথে মাসুদুজ্জামানের নির্বাচনী সমাবেশেও তিনি উপস্থিত থাকবেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের বরফকল এলাকায় স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা, দাবি, ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে কেন্দ্র করে এক মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির ঢাকা বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ এবং প্রধান বক্তা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান।
আর এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
একই সাথে এই সমাবেশেকে কেন্দ্র করে বুধবার (২৬ নভেম্বর) এক প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। আর এই প্রস্তুতি সভাতেও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই সাথে মাসুদুজ্জামানের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য দিয়েছেন। মাসুদুজ্জামানের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে যথেষ্ট জল ঘোলা করেছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। প্রথম থেকেই বিরোধীতা আর বিরোধীতা। যেন সবকিছু মেনে নিলেও মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যবসায়ী নেতা মাসুদুজ্জামান মাসুদকে তিনি কোনোভাবেই মেনে নিবেন না। মহানগর বিএনপির আংশিক নেতাকর্মীদেরও তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এসে আবার সেই মাসুদুজ্জামান মাসুদকেই মেনে নিয়েছেন আবু আল ইউসুফ খান টিপু। অথচ কিছুদিন আগেও সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু মাসুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভক্ত করেছেন।
তার আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ মনোনয়ন বঞ্চিত ও মহানগর বিএনপি নেতাদের কাছে ছুটে যান। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ নভেম্বর আমলাপাড়ায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন মাসুদুজ্জামান। প্রায় আধ ঘন্টা বেশি সময় ধরে তাদের মধ্যে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তারা।
সেদিন আবু আল ইউসুফ খান টিপু ঘোষণা দিয়েছিলেন মাসুদুজ্জামানের পক্ষে কাজ করবেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালামের নেতৃত্বে একের পর এক সভা সমাবেশ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। মাসুদুজ্জামানে বাইরে গিয়ে অ্যাডভোকেট আবুল কালামের শক্তির জানান দিয়ে আসছিলেন তিনি। মাসুদুজ্জামানের শক্তি মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিলের দাবীও জানিয়েছিলেন তিনি।
সূত্র বলছে, বিগত প্রায় ১৬ বছর ধরেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করতে পারতেন না।
এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে নিজেদের জানান দিতে থাকেন। তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আর এই প্রস্তুতিতে মাসুদুজ্জামানও হাজির হন। সেই সাথে বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নিজেকে জানান দিতে থাকেন।
গত ১৪ জুন মেজবান তথা ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করেন মাসুদ। সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। সেই সাথে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাসুদুজ্জামান তার নির্বাচনের বাসনা জানান। আর তার সমর্থনে বিএনপির একটি বিশাল অংশ মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যান। যারা মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন প্রাপ্তিতে সমর্থন যুগিয়ে যান। সেই সাথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যান।
তবে মাসুদুজ্জামানের এই সক্রিয়তায় কিছুটা বিপাকে পড়ে যান দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা বিএনপির প্রবীণ নেতারা। মাসুদুজ্জামানের কারণে তাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু মাসুদুজ্জামান মাসুদের বিপরীতে অবস্থান করে আসছিলেন।
সেই সাথে একের পর এক মহানগর বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত বিভিন্ন সভা সমাবেশে মাসুদুজ্জামান মাসুদের বিরোধীতা করে আসছিলেন। তারা যেন কোনোভাবেই মাসুদকে মেনে নিবেন না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন।
এরই মধ্যে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে ফুল দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন। তার এই যোগদান বিএনপির রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে। কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়ে যোগদান করার ইতিহাস বিএনপিতে খুব কমই রয়েছে। সেই সাথে তার যোগদান অনুষ্ঠানই জানান দেয় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিক নিয়ন্ত্রক হবেন তিনি।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ছায়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) বেনজির আহমেদ টিটো, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
কিন্তু মাসুদুজ্জামান মাসুদের এই যোগদান অনুষ্ঠানকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছিলেন না সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তারা নানাভাবে বিরোধীতা অব্যাহত রেখেছিলেন। বিভিন্ন বক্তব্যে মাসুদুজ্জামানকে আক্রমণ করেছেন।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে প্রার্থীর নাম রয়েছে। গত ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তালিকা প্রকাশ করেন।
নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে মাসুদুজ্জামান মাসুদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরও মাসুদুজ্জামান মাসুদকে সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু মেনে নিতে পারছিলেন না। বিভিন্নভাবে বিরোধীতাই করে আসছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তাদের অবস্থানে অটল থাকতে পারেনি। তিনি ইউটার্ন নিয়েছেন।








































আপনার মতামত লিখুন :