News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২

ফুরফুরে জামায়াত প্রার্থী


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম ফুরফুরে জামায়াত প্রার্থী

হঠাৎ করেই নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তার এই সিদ্ধান্তে জেলার রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সমীকরণ। একদিকে বিএনপি শিবিরে দেখা দিয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ, অন্যদিকে এই সুযোগে নির্বাচনী মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে এসেছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদ।

নিরাপত্তা শঙ্কা ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন মাসুদুজ্জামান। একই সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত মতভেদ ভুলে দলীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং ধানের শীষের পক্ষে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তবে তার এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। ফলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে, হাইকমান্ড মাসুদকেই আবারও নির্বাচনে ফেরাবেন, নাকি এই আসনে নতুন কাউকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একটি অংশ প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য, মাসুদের জন্য যারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করেছেন, হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে এতে বিএনপি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা।

এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদ। এই আসনে আগে থেকেই তার নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কও দৃঢ়। স্থানীয় পর্যায়ে তার গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক শক্তি তাকে নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে রাখছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

মাসুদের অবর্তমানে বিএনপি কার্যত ব্যাকফুটে চলে গেছে। দলীয় সিদ্ধান্তহীনতা ও অভ্যন্তরীণ মতভেদের কারণে নির্বাচনী মাঠে তারা দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এই সুযোগে ইতিবাচক কিছু করে দেখানোর বাস্তব সক্ষমতা জামায়াত প্রার্থীর মধ্যেই বেশি এমন মত স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

এর আগে ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান মাসুদুজ্জামান মাসুদ। সেখানে তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আপনাদের অনেকেরই মন ভেঙে যাবে। আমি আসলে নির্বাচন করবো না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার জন্য সহজ ছিল না। ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে আমাকে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি জানি, এটা অনেকের কাছে তীরে এসে ফিরে যাওয়ার মতো মনে হচ্ছে। অনেকের বুক ফেটে যাচ্ছে। আমার সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। তবে একজন সমাজকর্মী হিসেবে আজীবন আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।” সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, নির্বাচনের কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারছেন না তিনি। পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ও ভীত। এর বাইরে আরও কিছু নিরাপত্তাজনিত বিষয় রয়েছে, যা প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে দলটি। ওই তালিকায় নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পরই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ।

সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নির্বাচনী মাঠ এখন নতুন মোড় নিয়েছে। বিএনপির সিদ্ধান্তহীনতার বিপরীতে জামায়াত প্রার্থীর ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা এই আসনের লড়াইকে আরও কৌতূহলোদ্দীপক করে তুলেছে।

Ad Placement 1
Ad Placement 2
Islam's Group