রবিবার বেলা আড়াইটা হতেই নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে ঘুরাফেরা করছিলেন শহরের গলাচিপা এলাকার সাহেদ আহমেদ। তিনি পেশায় একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। ফেসবুকেরর মাধ্যমে তিনি জেনেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান ছাত্র ও জনতার মুখোমুখি হবেন। তিনি প্রশ্ন করতে পারবেন আশা করে ৪টি প্রশ্নের চিরকুট লিখে এনেছিলেন। কিন্তু তাকে কার্ড দেওয়া হয়নি। গেটে বলা হয়েছে সবার জন্য কার্ড নাই। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে চলে যেতে হয়েছে।
পরবর্তীতে যারাই এসেছেন তাদের দেখা গেছে নির্ধারিত কারো কাছ থেকে কার্ড বুঝে নিতে। একজন কার্ডগুলো নিয়ে সবাইকে বিলি করেন। দীর্ঘক্ষণ সেই দৃশ্য অবলোকন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে আয়োজনটি কার্যত গণমানুষের জন্য ছিল না। আয়োজন নিয়ে নির্ধারিত গোষ্ঠী ও মনোনীতদের জন্য।
ছাত্র-জনতার সঙ্গে মুখোমুখি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাসুদুজ্জামান। তাঁর সেই আয়োজনের আগেরদিন তাঁর অফিসিয়াল পেজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও অংশগ্রহণের কোন দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
অনুষ্ঠানে কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় সর্বস্তরের ছাত্রজনতার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে সেই প্রশ্ন উঠেছে এখন। কেউ কেউ বলছেন সাধারণ ছাত্রজনতার চেয়ে মাসুদের নিজস্ব লোকজন ও দলীয় ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি এ সময় বেশি ছিলো।
শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান শুরুর আগে এক নারীকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনি মাসুদুজ্জামানের কাছে কি বিষয়ে প্রশ্ন করতে চান।
জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি ভাই কোনো প্রশ্ন করতে আসি নাই। তিনি এমপি হবেন তারে দেখতে আসছি। দেখে চলে যাবো।’’
এ সময় আরো বেশ কয়েকজনকে একই প্রশ্ন করা হলে তারাও এই প্রশ্নকে পাশ কটিয়ে গেছেন।
জানা গেছে, রোববার বিকেল ৪ টায় মাসুদুজ্জামান শিল্পকলা একাডেমিতে আসেন। এর আগেই সেখানে ভীড় করতে থাকেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, শ্রমিকদলসহ মহানগর বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের অনেকে সেখানে ছিলেন। ছাত্রদল নেতা আজিজুল ইসলাম রাজীবকে দেখা যায়, তোলারাম কলেজ থেকে আসা একঝাঁক শিক্ষার্থীকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার আগে গলায় কার্ড ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। যাতে করে তারা বিনা বাধায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
তবে রাজীবের সঙ্গে আসা তোলারাম কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ছাত্রদলের কেউ না। এখানে সাধারণ ছাত্র হয়েই অংশ নিয়েছি। রাজীব ভাইয়ের সাথে পুরনো পরিচয় বলে তিনি আমাদের সঙ্গে এসেছেন।
অন্যদিকে সদর থানা ছাত্রদল নেতা সাগরও অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে পুরো অনুষ্ঠানেই বিএনপির দলীয় লোকজন বেশি ছিলো।
কিভাবে কাদের এই অনুষ্ঠানে ডাকা হয়েছে জানতে চাইলে মডেল গ্রুপের হেড অব প্লানিং বাপ্পি বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু কিছু সংগঠন আছে, আমরা তাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত করেছি। স্কুল, কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অনুষ্ঠানে এসেছে। আপনাদের প্রশ্নটা আসলে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। কারণ আপনারা যেভাবে বলছেন তেমন করে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানোটাও সম্ভব নয়। কারণ অনুষ্ঠানস্থলের ধারণ ক্ষমতাও ৫০০ জনের। তারপরও আমরা আমাদের ফেইসবুক পেইজে আগে থেকেই এই বিষয়ে জানিয়েছি।
বেশ কয়েকজন বলছেন, মাসুদুজ্জামানের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু গণমানুষের নেতা হলে সকলের সঙ্গেই মিশতে হবে। সকলের প্রশ্ন শুনতে হবে, সকলের প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।








































আপনার মতামত লিখুন :