৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ রিকশা চালক মো.ওমর আলী। টানাপোড়েনের সংসারে পরিবার পরিজনের মুখে দু'বেলা-দুমুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় দিবারাত্রি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালাতেন এই বৃদ্ধ। তবে গত দুমাস যাবত তার রিকশার চাকা ঘুরা বন্ধ করে দিয়েছে কোনো এক চোর চক্র। তাই বর্তমানে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে হাত পাততে হচ্ছে এই মানুষটিকে। এককথায় জীবনের শেষ সময়ে এসে এমন ঘটনায় অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি।
কথায় আছে চোর মানে না ধর্ম। ঠিক এই বাক্য রিকশা চালক ওমর আলীর জীবনের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। নিজের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম অটোরিকশার ব্যাটারি চুরি হয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে অসহায় মানুষটির পুরো পরিবার। চুরি যাওয়া ব্যাটারিগুলোর ক্রয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকার প্রয়োজন। তবে অর্থাভাবে ব্যাটারি ক্রয়ের সক্ষমতা না থাকায় নিরুপায় হয়ে মানুষের কাছে ছুটেছেন বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছেন।
দুইমাস পূর্বে (নাসিক) ১ নং ওয়ার্ডের মিজমিজি পাগলাবাড়ি এলাকায় রিকশা রেখে নামাজ আদায়ের জন্যে মসজিদে যান ওমর আলী। নামাজ শেষে মসজিদ হতে বের হয়ে দেখতে পান নিজের রেখে যাওয়া রিকশাটি যথাস্থানে থাকলেও রিকশার ব্যাটারি নেই। কোনো চোর চক্র তা খুলে নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। এরপর মসজিদের মুসুল্লিদের সহযোগিতায় আশপাশে দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুঁজিতেও পাওয়া যায়নি তার রিকশার ব্যাটারিগুলো।
ওমর আলীর পিতার নাম আব্দুল আজিজ খন্দকার। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে। স্ত্রী রোকসানা আর ৫ সন্তানদের নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে বসবাস করে আসছিলো তিনি। সন্তানদের মধ্যকার দুই মেয়ে আর এক ছেলের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ৪ সদস্যের পরিবার রয়েছে। বিয়ে করা বড় ছেলে পিতা-মাতার খোজ না নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করে যাচ্ছেন।
অসহায় ওমর আলী জানিয়েছেন, পরিবার নিয়ে ২নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী নামক এক ব্যক্তির ভাড়াটিয়া বাড়িতে বসবাস করতো তারা। দুই মাসে আগে যাত্রী নিয়ে পাগলাবাড়ি গিয়েছিল তিনি। সেখানে যাওয়ার পর আজান দিলে গাড়ি রেখে নামাজ আদায় করতে মসজিদে প্রবেশ করেন। নামাজ আদায়ের সময়কালে কে-বা কারা তার রিকশার ৪টি ব্যাটারি চুরি করে নিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজিতেও চুরি হওয়া ব্যাটারির সন্ধান মেলেনি। অর্থাভাবে ব্যাটারি ক্রয় করে পূনরায় রিকশা নিয়ে বের হওয়ার সক্ষমতা না থাকায় সবশেষ ২২ দিন ধরে মানুষের কাছে ভিক্ষা করছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই ২২ দিনে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার টাকার মতো মানুষ তাকে দিয়েছেন। মানুষের কাছে হাত বাড়ানোর কোনো ইচ্ছে না থাকলেও ২৫ হাজার টাকা না মেলা পর্যন্ত এই কাজটিই তার অন্যতম উপায়। ২ নং ওয়ার্ডের যে বাসায় তারা থাকতেন সেখানে ঘর ভাড়া দিতে না পাড়ায় বর্তমানে মদনপুর এলাকায় ছোট্ট একটি ঘর নিয়ে বসবাস করছেন।
নাসিক ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন বলেন, চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো মূলত মাদকের কারণে ঘটে থাকে। মাদকটা নির্মূল করা গেলে চুরি, ছিনতাই অপরাধ কমে যাবে। আমি আমার এলাকায় ইতোমধ্যে মাদক-চুরি-ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। তবে এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাত্বক সহযোগিতা প্রয়োজন। একজন রিকশা চালকের জীবনযাপন হয়ে থাকে টানাপোড়েনের। যে বৃদ্ধার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে আমাদের উচিত তার পাশে থাকা। আমি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ওই রিকশা চালক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি চেষ্টা করবো পাশে থাকার।
বৃদ্ধ রিকশাচালক ওমর আলীকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে তার এই মোবাইল নাম্বারে ০১৭৯১০২১৩৮০ যোগাযোগ করতে পারেন।
আপনার মতামত লিখুন :