কমিটি গঠনের পর থেকে ঠিকঠাকভাবেই চলছিল নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কার্যক্রম। আহবায়ক ও সদস্য সচিবের মধ্যে দৃশ্যমান কোন ফাটল না থাকতে একসাথেই ছিলেন তাঁরা। যুগ্ম আহবায়কদের একটি বড় অংশ রয়েছে আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সঙ্গে। কিন্তু তিন বছর আগে কমিটি গঠনের পর ১৫ জনের একটি দল যারা যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্য ছিলেন তারা বিদ্রোহ করে পদত্যাগ করেন। সেই পদত্যাগপত্র আবার জমা দেন বিএনপির নির্দেশ না মেনে বহিস্কার হওয়া তৈমূর আলম খন্দকার। সেই দলটি এবার যোগ দিয়েছেন শিল্পপতি মাসুদুজ্জামানের সঙ্গে। এ গ্রুপকে সাথে নিয়ে পথ চলে ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন মাসুদুজ্জামান। বিষয়টিকে ভালোভাবে নিচ্ছে না বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
‘দলে ঐক্যবদ্ধ থাকেন, দলকে বিভক্ত কইরেন না। ঐক্যের ডাক দিলাম এখান থেকে। ঐক্যের বিকল্প নেই। নিজের ঘরে ভাঙাভাঙি করবেন না আসুন সকল নিয়ে দেশ গড়ি।’
২৯ জুলাই ডনচেম্বার এলাকার ফিলোসোফিয়া স্কুল অডিটরিয়ামে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের হকার্স মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ জনকে ২০ হাজার টাকা করে চেক প্রদান কালে মাসুদ ওই আহবান রাখেন।
ওই সময়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, মহানগর বিএনপির সদস্য ফারুক হোসেন, মহাবুবউল্লাহ তপন, বিল্লাল হোসেন, শহীদুল ইসলাম রিপন, ফারুক আহাম্মেদ রিপন, শরীফুল ইসলাম শিপলু, মনোয়ার হোসেন শোখন প্রমুখ।
অথচ এদের মধ্যে ফারুক হোসেন, শরীফুল ইসলাম শিপলু, মনোয়ার হোসেন শোখন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পরেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এ ব্যাপারে অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেছেন, এবার নমিনেশন পাবেন মাঠের লোক সুতরাং মধুখোর শিল্পপতিরা নয়। তারা মধু খাওয়ার জন্য ওই সালমান এফ রহমানের মতন হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার জন্য বিএনপিতে আসতে চায়। তারা কেন আসতেছে জানেন কারণ এখন হাওয়াটা বিএনপির পক্ষে। যদি টাকা মার্কা ছিটাইয়া নমিনেশন আইনা এমপি হয়ে যাইতে পারে, তাহলে তারা সালমানের মতন বড় লোক হতে পারে।
তিনি বলেন মাসুদুজ্জামান মাসুদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি মেড ইন নারায়ণগঞ্জ না, আপনি মেড ইন আওয়ামী লীগ। আপনি মেড ইন সেলিম ওসমান, কারণ আপনি সেলিম ওসমানের দোসর ছিলেন। আপনি মেড ইন আনিসুল হক। আপনার পিতা আওয়ামী লীগ ছিল এটা নারায়ণগঞ্জের সবাই জানে। আসলে উনি তো বিএনপি'রই কেউ না। তিনি এখনো পর্যন্ত বিএনপির সদস্য হতে পারে নাই। আপনি বিগত ১৫টি বছর কোথায় ছিলেন, আপনাকে তো রাজপথে দেখা যায়নি। এখন আপনি বসন্তের কোকিল হয়ে মধু আহরণ করতে এসেছেন। মধু আহরণ করা শেষ হয়ে গেলে আপনিও চলে যাবেন।’
২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। কমিটি ঘোষণার পরেই শুরু হয় বিদ্রোহ। ইতোমধ্যে কমিটির ১৫ জন সিনিয়র নেতা পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, কমিটিতে বাদ দেয়া হয়েছে রাজপথের নেতাদের ও বিএনপির প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের।
৫দিন পর ১৮ সেপ্টেম্বর পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল মজলুম মিলনায়তন। সেখানে শহর ও বন্দরের বহু নেতার্কীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
সেদিন তৈমূরের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন বিএনপির ১৫ জন। তারা হলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, হাজী নুরুদ্দিন, আতাউর রহমান মুকুল, আবুল কাউসার আশা, সদস্য অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, আলমগীর হোসেন, শহিদুল ইসলাম রিপন, আমিনুল ইসলাম মিঠু, মনোয়ার হোসেন শোখন, ফারুক হোসেন, হাজী ফারুক হোসেন, হান্নান সরকার, আওলাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা ও অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু।
আপনার মতামত লিখুন :