আমরা বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার পক্ষ থেকে সভাপতি জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাস একুশের বইমেলা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এক প্রেস বিবৃতিতে তারা এ প্রতিবাদ জানান।
প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এবার ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে বইমেলার আয়োজন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলা একাডেমির এইরূপ সিদ্ধান্তে দেশের লক্ষ লক্ষ পাঠকের মত আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ ও হতাশ। দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রামের ভিতর দিয়ে একুশের বইমেলা আজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। জাতি ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ ও শ্রেণি নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের বৈচিত্রপূর্ণ ও অসাম্প্রদায়িক মিলনস্থল হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্ব অর্জন করেছে।
একুশে বইমেলা শুধুমাত্র বই বিক্রির মেলা নয়, এর সাথে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা, ৬৮-৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধসহ আমাদের জাতীয় ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িত। দেশ বিদেশের অগণিত লেখক, প্রকাশক এবং লক্ষ লক্ষ পাঠক একুশে বইমেলার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীরা এমনকি অনেক বিদেশী নাগরিক বইমেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আগমণের পরিকল্পনা করে থাকেন। একুশে বইমেলার চিরাচরিত সময়সূচি পরিবর্তনে এ ধরনের বহু ঘটনা ও ব্যক্তিগত সূচিরও বিপর্যয় ঘটবে।
সকলে জানেন, লেখক সৃষ্টি এবং বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে একুশের বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আমরা মনে করি নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং আইন-শৃঙ্খলার অযুহাতে কোনক্রমেই একুশে বইমেলা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত নয়। বইমেলার পাঠকের উপস্থিতি কোনভাবেই নির্বাচনের পরিবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না। ইতোপূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নজির রয়েছে, তখন বইমেলা স্থগিতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসেবে চাই না বইমেলা ইস্যুতে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে শুধুমাত্র নির্বাচনের দিন বইমেলা বন্ধ রাখতে পারে। নির্বাচনের পরিবেশের দোহাই দিয়ে বইমেলা স্থগিতের সিদ্ধান্তের ফলে জনমনে প্রতিভাত হচ্ছে যে, বইমেলার মত মুক্তচিন্তা ও জ্ঞান চর্চার সৃজনশীল ক্ষেত্রটিকে সংকুচিত করার জন্যই কর্তৃপক্ষ এই কাজটি করেছে, যারা বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে পছন্দ করে না। যে শক্তি জনগণের মাঝে সাম্প্রদায়িক ও অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোজগত সৃষ্টি করতে চায়, যারা স্বাধীনতা ও আবহমান কালের বাংলা সংস্কৃতির বিরোধী তারাই একুশের বইমেলা নস্যাৎ করতে চায়।
আমরা প্রত্যাশা করি, মহান একুশে বইমেলা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ সুবিবেচনার পরিচয় দেবেন। পাঠক লেখক ও প্রকাশকদের প্রত্যাশা পূরণে মনোযোগী হবেন এবং বাংলা একাডেমির গৌরবময় ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে ভূমিকা রাখবেন।
আপনার মতামত লিখুন :