শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যখন আত্মগোপনে রয়েছেন একাই সঙ্গে সাবেক এমপিদের বিদেশে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। অন্যবার তারা দেশে ঈদ পালন করতে পারলেও এবার তা সম্ভব না। এবার পলাতক এমপিদের দেশের বাহিরেই ঈদ পালন করতে হবে। একই সঙ্গে যারা দেশে পালিয়ে রয়েছেন গ্রেপ্তার এড়াতে তাদের আত্মগোপনেই থাকতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। বাকিদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান পলাতক রয়েছেন।
এদের মধ্যে শামীম ওসমানকে একাধিকবার দুবাইতে দেখা গেছে। আর নজরুল ইসলাম বাবু ও তার স্ত্রীকে দেখা গেছে সুইজারল্যান্ডে।
অন্যদিকে বাকি দুই এমপির এখনো কোনো হদিস পাওয়া যায় নি। তবে তাদের অনুসারীরা মামলার খড়ক নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেই সঙ্গে গ্রেফতার এড়াতে পরিবার নিয়ে রয়েছেন পলাতক।
এর আগে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্ষমতাধর এই এমপিরা নিজ নির্বাচনী এলাকায় ধরাকে সরা জ্ঞান করে থাকতেন। মতের বিরুদ্ধে গেলেই তাদের উপর চালানো হতে স্টিমরোলার। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সবসময় তটস্থ রাখতেন তারা। অথচ বর্তমানে তাদের দৈন্যদশা সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে তারা আবারও ক্ষমতায় চেয়ারে বসবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দিনের পর দিন তাদের রাজনীতি অনেকটাই ফিকে হচ্ছে।
এদের মধ্যে সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও তিনি মূলত আওয়ামী লীগেরই ভ্যানগার্ড ছিলেন। অন্যদিকে, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তারা হাজারো কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ কেউ মধ্যবিত্ত থেকে হয়েছেন টাকার কুমির। এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর পরই অস্তিত্ব সংকটে পড়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অধিকাংশ নেতাকর্মী নারায়ণগঞ্জের বাহিরে রইলেও এখনো কিছুসংখ্যাক নেতাকর্মী জেলাতেই অবস্থান করছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক কাজ করছে। মামলা, গ্রেফতার থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এভাবে কতদিন পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকতে হবে তা এই মুহুর্তে বলা অসম্ভব বিষয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পর পতনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের এই দশা হবে তা কখনো আন্দাজ করতে পারেন নি নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মামলা, গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর আগে গ্রেফতার সাবেক এমপি গাজীকে কয়েক দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। একসময়ের ক্ষমতাধর এই এমপি সবার আগে গ্রেফতার হবেন তা কল্পনা করতে পারেন নি কেউই। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় অসংখ্য হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। যেসব মামলায় তার জামিন পেতে অনেক বেগ পেতে হবে তা অনুমানই করা যায়। গাজী ধরাশয়ী হলেও বাকিরা এখনো পালিয়ে রয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি আদায় হয়েছে। এর ফলে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। একই চিত্র লক্ষ্য করা যায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ক্ষেত্রেও। জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা বর্তমানে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। পাশাপাশি পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সামনে নতুন বিজয় অপেক্ষা করছে। হাসিনাবিহীন আওয়ামী লীগের বর্তমানে যে অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে আগামীতে বিএনপির একক আধিপত্য থাকবে তা এখন থেকেই অনুমান করা যায়। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে কবে নাগাদ তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবেন তা এখন বলা যাচ্ছে না।
আপনার মতামত লিখুন :