ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তাপ দৃশ্যমান। দলীয় সিদ্ধান্ত, প্রার্থী মনোনয়ন ও মাঠপর্যায়ের কর্মকাণ্ডে জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এখন সরব আলোচনা। তবে এই বহুমাত্রিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন একজন তরুণ নেতা জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে ধারাবাহিক আন্দোলন, সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থানে তিনি এখন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের অন্যতম আলোচিত সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পরিক্রমায় রনি নিজেকে তৈরি করেছেন একজন মাঠের কর্মী ও তৃণমূলের ভরসাযোগ্য মুখ হিসেবে। ছাত্রজীবনে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় তার সাংগঠনিক দক্ষতা, উপস্থিত বুদ্ধি এবং নেতৃত্বের ধারা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নজর কাড়ে। পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নানা কর্মসূচিতে সামনের সারিতে থাকায় তিনি একাধিকবার গ্রেফতার হন; নির্যাতন ও হয়রানিও তাকে পিছু টানতে পারেনি। বরং এসব অভিজ্ঞতা তাকে তরুণদের কাছে প্রতীকী প্রতিরোধের এক চরিত্রে পরিণত করেছে।
রাজপথের সংগ্রামের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক উদ্যোগে সক্রিয়তা রনির জনপ্রিয়তাকে আরও গভীর করেছে। ফতুল্লার বক্তাবলীর পূর্ব গোপনগরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে বহুদিন ধরে ভোগান্তি ছিল স্থানীয়দের। সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হতো জলাবদ্ধতা। এমন পরিস্থিতিতে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। স্থানীয়দের মতে, রনির এই উদ্যোগে এলাকার জলাবদ্ধতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে যা তার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাকে আরও শক্ত করেছে।
এ ছাড়াও রাধানগর ও ধর্মগঞ্জ চতলার মাঠ এলাকায় গণসংযোগকালে ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামতের আশ্বাস দিয়ে তিনি স্থানীয়দের প্রশংসা কুড়ান। একই দিনে গুদারাঘাট থেকে চতলার মাঠ পর্যন্ত গণসংযোগে অংশ নিয়ে বিএনপির “৩১ দফা”র লিফলেট বিতরণ করেন। দোকানদার থেকে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষ অনেকে এগিয়ে এসে তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, যা ওই এলাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে রনির সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে নিয়ে তার মন্তব্য তরুণদের মধ্যে যেমন কৌতূহল সৃষ্টি করেছে, তেমনি রাজনৈতিক মহলেও তৈরি করেছে বিতর্ক। এক বক্তব্যে তিনি দাবি করেন “শামীম ওসমান সেন্টু গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে পালিয়েছেন।” অন্য এক বক্তব্যে অভিযোগ করেন “আগে তারা নিজেরাই প্রার্থী ঠিক করে জালভোট দিয়ে জিতিয়ে দিত।”
এই মন্তব্যগুলো নিয়ে সমালোচনা থাকলেও রনির নাম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে রাতারাতি।
গত জুলাইয়ে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়ে রনি ছিলেন অন্যতম সক্রিয় নেতা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড থেকে জালকুড়ি পর্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি নেতৃত্ব দেন। কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে একাধিক মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তিনি দলের ভেতরে নিজের অবস্থান আরও সুসংহত করেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মাঠপর্যায়ের এসব কার্যক্রম রনির নেতৃত্বকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই কয়েকটি পরিবার ও ঐতিহ্যবাহী নেতৃত্বের প্রভাবের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের উত্থান সেই পুরোনো ভারসাম্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিএনপি যখন নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে সামনে আনার কথা বলছে, তখন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে রনির নাম সবচেয়ে জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। দলের তৃণমূল নেতা, কর্মী ও তরুণ ভোটারদের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ তাকে অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের তুলনায় বিশেষভাবে এগিয়ে রেখেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
রনির পুরো রাজনৈতিক যাত্রাই জুড়ে রয়েছে সংগ্রাম, প্রতিবাদ, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা। তার কর্মকাণ্ডে তরুণদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে একজন তরুণ নেতা কিভাবে স্থানীয় সমস্যায় উদ্যোগ নিতে পারে, কীভাবে রাজনীতির সঙ্গে জনসেবাকে একসঙ্গে ধারণ করা যায়, তার বাস্তব উদাহরণ যেন প্রকাশ পাচ্ছে মশিউর রহমান রনির কর্মকাণ্ডে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এই উত্তাপের কেন্দ্রেই রয়েছে তরুণদের উত্থান আর সেই উত্থানের সবচেয়ে আলোচিত নাম মশিউর রহমান রনি। তরুণরা যেমন তাকে নিয়ে আশাবাদী, তেমনি প্রতিপক্ষ শিবিরেও দেখা যাচ্ছে শঙ্কা। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে রনি যেন তারই অগ্রদূত।



































আপনার মতামত লিখুন :